লাখো ভক্তদের প্রার্থনা দিয়ে শেষ হল তিরোভাব তিথি মহোৎসব


গোদাগাড়ী প্রতিনিধি:

গতকাল শনিবার দধি মঙ্গল, প্রহরে ভোগ আরতি ও মহান্ত বিদায় ও ভক্তদের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে তিনদিন ব্যাপি ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী খেতুরধাম নামকস্থানের ঐতিহ্যমণ্ডিত গৌরাঙ্গবাড়ী চত্ত্বরে যুগ পরস্পরায় চলে আসা সনাতন হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের জন্য বার্ষিক মিলনক্ষেত্র এবার মহামিলনের তীর্থের রূপ নেয়। গত বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তিনদিন ব্যাপি খেতুর ধামে ধর্মীয় আমেজ ছিল এবার আরও প্রাণবন্ত। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ত্রিপুরা, আসামসহ বিভিন্ন প্রদেশের লাখ লাখ নরোত্তম ভক্তরা তিরোভাব তিথি মহোৎসবে যোগ দেয়।

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাব্নামৃত সংঘ (ইস্কন) এর উদ্যোগে ফ্রান্স, আমেরিকা, মরিসাস, শ্রীলংকা, নেপাল, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের ভক্তদের সমাবেশ ঘটায়। গৌরঙ্গ দেব ট্রাস্ট বোর্ড সহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্দ্যেগে খেতুরে মঞ্চ তৈরি করে প্রসাদ বিতরণ, পুস্তক বিপনী, গ্রন্থ বিতরণ, ধর্মসভা, পদাবলি কীর্তন, নগর সংকীর্তনের আয়োজন করেন।

এবারের তিরোভাব তিথিতে যোগ দিতে আসা খুলনা গোপাল চন্দ্র দাস প্রেমভক্তি মহারাজ ঠাকুর নরোত্তম দাসের মহিমা সম্পর্কে বলেন, একবার শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নদীয়ায় ভক্তসঙ্গে মহানাম সংকীর্তন করেছিলেন। হঠাৎ মহাপ্রভুর চোখ খেতুরী গ্রামের দিকে গেল। মহাপ্রভু তৎক্ষণাৎ নরোত্তম, নরোত্তম বলে কেঁদে উঠলেন। এরপর মহাপ্রভুর অপ্রকটের বহু বছর পর পদ্মা নদীর নিকটে গোপালপুর নগরের রাজা কৃষ্ণানন্দ ও শ্রী নারায়নীর দেবীর ঘরে মাঘ মাসে শুল্ক পঞ্চমীতে শ্রী নরোত্তম দাস ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন।

বয়ো:বৃদ্ধি হলে নরোত্তম ঠাকুর ভক্তমুখে শ্রী গৌরসুন্দর ও নিত্যানন্দের মহিশা শ্রবণ করে পরম আনন্দ অনুভব করলেন। গৌরলীলা স্থান দর্শনের অভিলাষে সংসার ত্যাগ করে বৃন্দাবন ধামে গমন করলেন। সেখানে শ্রী লোকনাথ গোস্বামীর কাছে রাধাকৃষ্ণ মন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণ করলেন এবং শ্রীল জীব গোস্বামীর নিকট বৈষ্ণব দর্শন শিক্ষা লাভ করলেন।

এরপর ঠাকুর এক বিপ্রের ধানের গোলা হতে শ্রী গৌর বিষ্ণুপ্রিয়া বিগ্রহ উদ্ধার করে খিতুরীতে প্রতিষ্ঠান করলেন। এই খেতুরী ধামে শ্রী ঠাকুর বহুলীলা সম্পাদন করেন। যার নির্দেশ আজও খেতুর ধামে দেখা যায়। বহু বহু ভবসাগরে নিমর্জিত জীবকুলকে কৃষ্ণভক্তিতে সিক্ত করে ঠাকুর মহাশয় গম্ভীলার গঙ্গাতটে কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পঞ্চমীতে অপ্রকট লীলা সাধন করেন।

নারায়নগঞ্জের রমেশ চন্দ্র দাস খেতুরী ধাম মাহাত্ম্য সম্পর্কে বলেন, গৌড়ীয় বৈষ্ণব আচার্যগণ ও মহাজনগণ এই খেতুরী ধামকে তিন ধানের (যেমন: বৃন্দাবন, পুরী ও নবদ্বীপ) প্রকাশ বলে তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করেন। এই ধামে একরাত্রী যাপন করলে তিন ধামের রাত্রী যাপনের সমতুল্য ফল লাভ হয়। এই ধামে বসে একমালা জপ করলে এক হাজার মালা জপের সমতুল্য ফল লাভ হয়ে থাকে। যে কোন সৎ কর্ম করা হলে তা হাজার গুণ বেশি ফলদায়ক হয়ে থাকে। আর কেউ অপকর্ম করলে তদানুরূপ তাকে হাজার গুণ অপকর্মে ফল ভোগ করতে হয়। ঠা

নরোত্তম দাসের ভক্তরা তীরভাব তিথি মহোৎসব উপলক্ষ্যে প্রতিবছর এ সময় গৌরাঙ্গ বাড়িতে সমবেত হয়ে দিনরাত কীর্তন, ভোগ গ্রহণ ও পূজা করার মধ্য দিয়ে তিনদিন অতিবাহিত করেন। গৌরঙ্গদেব ট্রাস্ট বোর্ডের পরিচালনা কমিটির সম্পাদক শ্রী শ্যামাপদ সানাল বলেন, এবার আবহাওয়া ভাল ও কঠোর নিরাপত্তা থাকার কারণে তীরভাব তিথি মহোৎসবের পরিবেশ খুবই ভাল ছিল।

ভক্তরা সুন্দর ভাবে তাদের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর নির্বিঘ্নে আপন আপন স্থলে ফিরে গেছে। গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ইমরানুল হক এর নেতৃত্বে একটি মনিটরিং কমিটি সার্বক্ষণিকভাবে উৎসব এলাকায় পর্যবেক্ষণ করেছেন। এদিকে গৌরঙ্গবাড়ি চত্বরে খাবারের দোকান ছাড়াও শিশুদের বিভিন্ন খেলাধুলা ও প্রসাধনী দোকানপাট গড়ে ওঠায় উৎসুক অন্যান্য ধর্মের লোকজন মেলাতে ভীড় জমাতে দেখা যায়।


শর্টলিংকঃ