শাবির সমাবর্তনে বালিশকাণ্ড!


ইউএনভি ডেস্ক:

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় সমাবর্তন হয় গত ৮ জানুয়ারি। সেই সমাবর্তনে বাজেটের সম্পূর্ণ টাকা ব্যয় না করে গায়েব হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

শাবির সমাবর্তনে বালিশকাণ্ড!

ইত্তেফাকের অনুসন্ধানে জানা যায়, সমাবর্তন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির চিকিৎসার ব্যয়ে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৪ লাখ টাকা। সেই টাকা দিয়ে যেসব ওষুধ-সামগ্রী ক্রয়ের কথা ছিল। তার মধ্যে শুধুমাত্র ১টি নেবুলিজার মেশিন, ২টি বালিশ ও ১টি বেড কভার কিনে ৬ হাজার ৪০০ টাকা খরচ করে ৪ লাখ টাকার ভাউচার জমা দেওয়া হয়েছে।

ওষুধ ক্রয় বাবদ ৪ লাখ টাকার বাজেটপত্র এবং সেই টাকা ক্রয় করা হয়েছে বলে যে ভাউচার তৈরি করা হয়েছে তার সম্পূর্ণ তথ্য ইত্তেফাকের হাতে এসেছে।প্রাপ্ত তথ্যাদী থেকে জানা যায়, রাষ্ট্রপতির চিকিৎসা বাবদ রাজস্ব খাত থেকে চিকিৎসার সরঞ্জাম বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয় এক লাখ ৯৯ হাজার ৮০০ টাকা। আর সমাবর্তন খাত থেকে ওষুধপত্র কেনা বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয় দুই লাখ টাকা।

৩য় সমাবর্তন উপলক্ষে চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত উপ-কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন চিফ মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. কৃষ্ণপদ আচার্য্য। তিনি রাজস্ব খাত থেকে বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে চিকিৎসার সরঞ্জামাদি ক্রয় বাবদ যে মূল্যতালিকা তৈরি করেছেন, তাতে ২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার বাবদ ৩৯ হাজার ৬০০ টাকা, ২টি নেবুলিজার মেশিন বাবদ ৯ হাজার টাকা, ২টি স্ট্রেচার বাবদ ১৬ হাজার টাকা, ২টি অবজেভেশান বেড বাবদ ৩৪ হাজার টাকা, ২টি ম্যাট্রিস বাবদ ১০ হাজার হাজার টাকা, ২টি বেড কভার বাবদ ২ হাজার টাকা, ২টি পিলো বাবদ ১ হাজার ৮০০ টাকা, ২টি পিলো কভার বাবদ ৮০০ টাকা, ২টি ট্রলি বাবদ ১৩ হাজার টাকা, ১টি হুইল চেয়ার বাবদ ১৩ হাজার হাজার টাকা, ২টি পালস অক্সিমেটার বাবদ ৫ হাজার টাকা, ২টি সাকার মেশিন বাবদ ৭ হাজার ৫০০ টাকা, ২টি গ্লুকোমেটার বাবদ ৭ হাজার টাকা, ২টি জেনারেল বেড বাবদ ১৫ হাজারে টাকা, আবারও ২টি ম্যাট্রিস বাবদ ৫ হাজার টাকা, ২টি কভার বাবদ ২ হাজার ২০০ টাকা, ২টি পিলো বাবদ ১ হাজার ৮০০ টাকা, ২টি কম্বল বাবদ ৬ হাজার টাকা, ২টি কম্বল কভার বাবদ ২ হাজার ৪০০ টাকা, ২টি জেনারেল বেড কভার বাবদ ২ হাজার টাকা, ২টি স্যালাইন স্ট্যান্ড বাবদ ৫ হাজার টাকা, ২টি ওজন মাপার মেশিন বাবদ ৯ হাজার টাকার তালিকা দেখিয়েছেন। যার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৭ হাজার ১০০ টাকা। কিন্তু তিনি বাজেট অনুযায়ী এই মূল্যতালিকার মোট টাকার পরিমাণ দেখিয়েছেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ৮০০ টাকা।

প্রাপ্ত তথ্যাদিতে দেখা যায়, শুধুমাত্র ১টি নেবুলিজার মেশিন, ২টি বালিশ ও ১টি বেড কভার কেনা হয়েছে, যেগুলোর মূল্য ৬ হাজার ৪০০ টাকা। এগুলো বাদে এই তালিকার অন্য কোন চিকিৎসার সরঞ্জাম কেনা হয়নি। অন্যদিকে, সমাবর্তন খাত থেকে ওষুধপত্র কেনা বাবদ ২ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও সে টাকা দিয়ে কোন ওষুধ কেনা হয়নি।

রাজস্ব খাত চিকিৎসার সরঞ্জাম মাত্র ৬ হাজার ৪০০ টাকা খরচ করে কেন ২ লাখ টাকার হিসেবে দেওয়া হল এমন প্রশ্নে চিফ মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. কৃষ্ণপদ আচার্য্য বলেন, আমাদের মেডিকেলে সব জিনিসপত্র রাখার জায়গা না থাকায় শুধুমাত্র এ জিনিসগুলো কেনা হয়েছে। আর বাকি জিনিসগুলো পরে কেনা হবে।

তবে সমাবর্তন উপলক্ষে বরাদ্দকৃত জিনিস সমাবর্তনের পরে কি জন্য কেনা হবে, বা সেসব না কিনে কেন ভাউচার জমা দেওয়া হলো এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।

আর সমাবর্তন খাতের ওষুধ ক্রয় বাবদ ২ লাখ টাকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এগুলো রহমান ট্রেডার্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আর এগুলো আমি একা ক্রয় করিনি, উপ-কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও ছিলেন।

এদিকে উপ-কমিটির সদস্যরা বলছেন, ২ লাখ টাকার ওষুধ ক্রয় বাবদ তারা কিছু জানেন না। ইত্তেফাকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মেডিকেলে ২ লাখ টাকা দিয়ে কোন ধরনের ওষুধ ক্রয় করা হয়নি।

চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত উপ-কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মাসরাবা সুলতানা (সদস্য), সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. রিফাত রসুল সৃজন (সদস্য), মেডিকেল অফিসার ডা. মো. হাবিবুল ইসলাম (সদস্য), মেডিকেল অফিসার ডা. নুসরাত জাহান স্বর্ণা (সদস্য), সিনিয়র ফার্মাসিস্ট সৈয়দ আবু বকর (সদস্য), নার্স রীনা ফেরদৌসি (সদস্য)।

সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মাসরাবা সুলতানা বলেন, মেডিকেলের ২ লাখ টাকার ওষুধ কেনা হবে শুনেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেনা হয়েছে কিনা আমি বলতে পরি না। সমাবর্তনের আগে উনি (ডা. কৃষ্ণপদ আচার্য্য) আমাকে ওষুধ কেনার একটা তালিকা দেখিয়ে বললেন, এগুলো কিনতে হবে। তার কিছুদিন পরে বললেন কেনা হয়ে গেছে। এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই। ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ডিল করার ব্যাপারে উনি দেখবেন বলে জানিয়েছিলেন।

আরেক সদস্য সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. রিফাত রসুল সৃজন বলেন, এ বিষয়ে আমার হেড (ডা. কৃষ্ণপদ আচার্য্য) বলতে পারবেন। উনি আমাকে একবার বলেছিলেন ওষুধ কিনবেন। কিন্তু পরে কি হয়েছে এটা আমি বলতে পারবো না।

কমিটির আরেক সদস্য সিনিয়র ফার্মাসিস্ট সৈয়দ আবু বকর বলেন, আমার চাকরির বয়স শেষ ১ জানুয়ারি। আর সমাবর্তন হয়েছে ৮ জানুয়ারি। সুতরাং সমাবর্তনের মেডিকেল কমিটিতে কি কিনা হয়েছে আমি বলতে পারি না। কমিটির সদস্য হিসেবে সমাবর্তনের দিনে আমি শুধু ডিউটি করে আসছি। এর বাইরে কিছু বলতে পারি না।

সমাবর্তন উপলক্ষে বরাদ্দকৃত মালামাল সমাবর্তনের পরে কেন হবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব মহাপরিচালক এএনএম জয়নাল আবেদীনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, যেখানে মালামাল কেনার জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়েছে, সেখানে সমাবর্তনের পরে এ মালামাল কেনার কোন প্রশ্নই আসে না। আমরা যে সকল উপ-কমিটির মালামালের টাকা পরিশোধ করেছি, তাদের থেকে উপযুক্ত ডকুমেন্ট দেখেই টাকা পরিশোধ করেছি। এখন যদি তাদের ভিতর কেউ কম টাকার জিনিস কিনে বেশি টাকা দেখায় তাহলে আমাদের সেখানে দেখার সুযোগ নেই।

শাবি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমি কেবলই জেনেছি। অবশ্যই এটি গুরুত্ব দিয়ে দেখব। তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


শর্টলিংকঃ