শাহজালালে মাদক মামলায় ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল আসামিরা


ইউএনভি ডেস্ক:

শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার ১৫ কেজি এমফিটামিন মাদক মামলার মূল আসামি কাউকে তিনদিনেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ কিংবা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। মামলায় যাদের সাক্ষী করার কথা, উল্টো তাদের আসামি করে কৌশলে মূল আসামিদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখার অভিযোগ উঠেছে।


সিভিল এভিয়েশনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা  বলেন, ১৫ কেজি মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট কার্টনগুলোর মূল মালিক নেপচুন ফ্রেইট লিমিটেড ও মালামাল প্যাকেটজাত করার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইউনাইটেড ট্রেডার্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু তাদের সবাইকে মামলার ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। শনিবারও এ দুই প্রতিষ্ঠানের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাকে বিমানবন্দরের কার্গো গোডাউনে মালামাল লোড-আনলোড করতে দেখা গেছে।

দুইদিনে দুই প্রতিষ্ঠানের শত শত পণ্যও বিদেশে গেছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা, বিমান ও কার্গো গোডাউনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মামলার মূল আসামি করা হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে তিনি জানান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে মূলত তারা মামলার সাক্ষী হওয়ার কথা। কিন্তু পুলিশ উল্টোটা করে মূল হোতাদের কৌশলে বাঁচিয়ে দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমান এক্সপোর্ট কার্গোর একজন কর্মকর্তা  বলেন, যে কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে, তারা মামলার মূল হোতা এবং অপরাধীদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন কার্গো কমপ্লেক্সে।

আরও রহস্যজনক তথ্য হচ্ছে- পুলিশ তাদের কাছ থেকে মূল অপরাধীদের নাম-ঠিকানা, কোম্পানির নামসহ সব তথ্য সংগ্রহ করেছে। কিন্তু দিন শেষে তাদেরই আবার আসামি হিসেবে আদালতে চালান করে দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ কারণে বিমানবন্দরকেন্দ্রিক অধিকাংশ মাদকদ্রব্য উদ্ধার মামলার সঠিক বিচার হচ্ছে না। এর কারণে একের পর এক মাদকের চালান অবাধে পাচার হচ্ছে। এতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে পাচারকারীরা। মাঝেমধ্যে দুয়েকটা চালান আটক হলেও সেগুলোর পেছনে রয়েছে নানা রহস্য।

জানা গেছে, পাচারের টাকার ভাগবাটোয়ারায় বনিবনা না হলে এসব চালানের তথ্য ফাঁস হয়। অভিযোগ, এসব মাদক পাচারকারী অধিকাংশের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। এর কারণে বেশির ভাগ মামলায় মূল হোতাদের আসামি করা হচ্ছে না। উল্টো বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্ক্যানার মেশিনম্যান, কুরিয়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের আসামি করা হচ্ছে। আলামত হিসেবে বিমান, স্ক্যানিং মেশিন ও মূল্যবান রফতানি পণ্য জব্দ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং অ্যাসোসিয়েশন ও ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ  বলেন, রফতানি পণ্য দ্রুত বিদেশে পাঠানোর জন্য বিমান ও আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসগুলো কাজ করছে। এতে দেশের অর্থনীতির ভিত্তিও মজবুত হচ্ছে। দেশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। কিন্তু বিমান সংস্থা, কুরিয়ার সার্ভিস, স্ক্যানিং কর্মী ও লোডাররা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

আর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে নেপথ্যে থাকা চোরাকারবারিরা। তিনি বলেন, তাদের পাঠানো পণ্যের প্যাকেটে যাতে কোনো ধরনের এক্সপ্লোসিভ, মাদক কিংবা নিষিদ্ধ পণ্য না থাকে, সেজন্য তারা সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলো স্ক্যানিং করিয়ে নিচ্ছেন। এজন্য তারা সিভিল এভিয়েশনকে টাকাও দিচ্ছেন। প্রতিদিন রফতানির জন্য হাজার হাজার প্যাকেট পণ্য তাদের কাছে আসছে।

এগুলোর ভেতরে কী আছে, সেটা পরীক্ষা করার ক্ষমতা তাদের না থাকার কারণে তারা সিভিল এভিয়েশনের দ্বারস্থ হচ্ছেন। অথচ কোনো পণ্যের ভেতর মাদক কিংবা নিষিদ্ধ পণ্য পাওয়া গেলে সবার আগে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিমানকর্মীকে আসামি করা হচ্ছে। কিন্তু যারা এসব মাদক পাচারের মূল হোতা, যাদের মাধ্যমে মাদক প্যাকেটজাত করা হচ্ছে, তারা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

তিনি আরও জানান, পুরো বিষয়গুলো নিয়ে তারা সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন। কবির আহমেদ আরও বলেন, কেউ অন্যায়ের ঊর্ধ্বে নয়। তাদের কোনো সদস্য অন্যায় করলে তার শাস্তি হবে। কিন্তু কেউ যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হন। তার মতে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, সিভিল এভিয়েশন, থানা পুলিশকে তারা সব ধরনের সহযোগিতা করতে রাজি আছেন। বিষয়গুলো নিয়ে শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করবেন বলেও তিনি জানান। – যুগান্তর


শর্টলিংকঃ