শিক্ষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য রক্ষার একক যোদ্ধা দ্বিজেন্দ্রনাথ


সুব্রত গাইন, রাবি:
সকালের সূর্য কেবল গাছের সবুজ পাতার ফাকে উঁকি দিয়েছে। তার আগে থেকেই সবাই ছুটছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। তবে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ক্যাম্পাসে ভিন্নতা যোগ করেছে একক বর্ণাঢ্য প্রদর্শনীতে।

বিশ্বের ভাষা-শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-ইতিহাস ও ঐতিহ্যে নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে প্রদর্শনী। প্রায় ১৩০টিরও বেশি ফেস্টুন রয়েছে সেখানে। যার প্রত্যেকটি ফেস্টুন এক একটি জ্ঞানের আধার।

‘নীরব ছবির সরব প্রকাশ মনের মুকুরে’ প্রতিপাদ্যে শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর একক উদ্যোগে সম্পাদিত একক প্রদর্শনী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল স্কুল মাঠে এই প্রদশর্নীর আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এসময় উপাচার্যসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন।

প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধু কর্নার, দেশবন্দনা, মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারি ও স্বাধীনতা, ভাষা-শিক্ষা-সাহিত্য, বাংলা ব্যাকরণ, সংস্কৃতি, রবীন্দ্র-নজরুল:বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ, বিশ্বের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ( কীর্তিমান তিন প্রজন্ম), ব্যানার্জী গ্যালারি, বিবিধ বিষয়বস্তু ছিলো।

বঙ্গবন্ধু কর্নারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বংশ পরিচয়, সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত, আলোকচিত্র, বঙ্গবন্ধুর বিদেশি বন্ধু, ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডি, জাতীয় শোক দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি। কীর্তিমানের মৃত্যু নেই এই কর্নারে বঙ্গবন্ধুর তিন প্রজন্ম, প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহুরুর তিন প্রজন্ম, জাতীয় চার নেতার একজন এএইচএম কামারুজ্জামানের তিন প্রজন্ম এছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী, নায়িকা সুচিত্রা সেনের তিন প্রজন্মকে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের প্রচ্ছদচিত্রে লোককলার প্রভাব, বাংলাদেশের উপজাতি সম্প্রদায়,স্বরবর্ণ সম্পর্কিত প্রাথমিক ধারণা, বাংলা লিপির বিবর্তনচিত্র, বাংলা ব্যাকরণ, কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছুু দুর্লভ চিত্র এবং দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর পতিংবরা উপন্যাসের উদ্ধৃতি সম্বলিত ১৩০টি আলপনা।

এমন বিচিত্রধর্মী প্রদর্শনীর বিষয়ে জানতে চাইলে দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী বলেন, শিক্ষার উদ্দেশে এই ব্যতিক্রমী প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। এখন কোনো জায়গায়ে যদি এমন সাজিয়ে প্রদর্শনী করা হয় তাহলে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীরা এসে দেখে অনেক কিছু শিখতে পারে। আর এই শিক্ষনীয় বিষয়টা ছেলে-মেয়েদের কাছে ছড়িয়ে দিতেই আমার এই আয়োজন।

তিনি আরও বলেন, বেশ কিছু প্রদর্শনী রয়েছে। তবে আমি সংস্কৃতির ওপর বেশি জোর দিবো। কেননা একটা দেশের সংস্কৃতি না থাকলে সে দেশ থাকবে না কিংবা টিকবে না। ছেলে-মেয়েরা যাতে সুস্থ সংস্কৃতির মধ্যে থাকে তার জন্যই এই প্রচেষ্টা। তবে আমার একক প্রচেষ্টা হলেও আমাকে অনেকে সাহায্য করে। এমনকি আমার দুই ছেলে প্রায় সব সময় এই কাজে সহযোগিতা করে।

ব্যক্তি উদ্যোগে এমন কর্মকান্ড পরিচালনা করতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হয় তাকে। অনেক বই, চিত্র রয়েছে যা দিয়ে আরও বড় প্রদর্শনীও আয়েজন করা যায়। কিন্তু সমস্যা একটাই তা হলো অর্থ। ইচ্ছা থাকলেও জ্ঞান বিতরণ করাটাও তার পক্ষে হয়ে পড়েছে ব্যয় সাপেক্ষ। তবুও তিনি শিক্ষার জন্য সার্মথ্য অনুযায়ী কাজ করে যেতে চান। তিনি চান দেশের সংস্কৃতি টিকে থাকে আজীবন। এ যেনো ভাষা-শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার একক যোদ্ধা।


শর্টলিংকঃ