শিলাবৃষ্টিতে স্বপ্ন ভাঙলো চলনবিলের বোরোচাষীদের


মাহবুব হোসেন, নাটোর:

ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর শিলা বৃষ্টির কারণে এবার বোরো ধানে দেখা দিয়েছে কালো চিটা। যার কারণে ফলন বিপর্যয় ঘটেছে চলনবিলে। আগে প্রতি বিঘায়  ২০ থেকে ২৫মণ হারে  ফলন হতো।  কিন্তু এবার ফলন নেমেছে ১৪ থেকে ১৫ মণে । এছাড়া ধানের দামও নেই বাজারে।  সব মিলিয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে  চাষীদের।

এভাবেই প্রতি শীষে চিটা হয়ে গেছে

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এই বছর নাটোরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বোরো ধান চাষ হয় ৬১হাজার ৪৩৫হেক্টর জমিতে। যা থেকে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩লাখ ১৮হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চলনবিলের সিংড়ায় ৩৭হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। এর মধ্যে আগাম কিছু জাতের ধান রোপন করেন কৃষকরা। তবে চলনবিলে বোরো ধানে চিটা হওয়ার কারনে এই লক্ষ্যমাত্রা পুরন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

চলনবিলের মাঠজুড়ে বোরোর ক্ষেত

কৃষি বিভাগের হিসাব বলছে, যদি কৃষকের নিজের জমি হয় সেক্ষেত্রে এক বিঘা জমিতে এবার কৃষকদের বোরো ধান উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ হয়েছে ৮ থেকে ১০হাজার টাকা। আর বর্গা নিয়ে যারা চাষ করেছেন তাদের খরচ হয়েছে ১২ থেকে ১৪হাজার
টাকা। সে তুলনায় বর্তমানে ধান উৎপাদন হচ্ছে ২০ থেকে ২২মন হারে। আর বাজারে ধানের দাম ৭৫০ থেকে ৮০০টাকা বিক্রিয় হওয়ার কারণে একজন কৃষক মোট সাড়ে ১৬ থেকে ১৮হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারছে। তবে বোরো ধান কাটতে  গিয়ে খরচ বেশি পড়ায় খুব একটা লাভ হচ্ছে না কৃষকের।

তবে সরকারী এই হিসেবের সাথে বিরাট ফারাক খুঁজে পাচ্ছে কৃষকরা। তারা বলছে, যারা নিজেদের জমিতে বোরো ধান রোপন করেছিলেন, তাদের বিঘাপতি খরচ হয়েছে ৭ থেকে ৮হাজার। আর যারা বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন তাদের খরচ হয়েছে ৮ থেকে ৯হাজার টাকায়। বর্তমানে বোরো ধানে চিটায় ফলন কমিয়ে দিয়েছে। চিটার কারনে বর্তমানে বিঘাপতি ১৪ থেকে ১৫ হারে ধান হচ্ছে। তাছাড়া এক বিঘা জমিতে ধান কর্তনে শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে সাড়ে তিন মন থেকে চারমন। ফলে কৃষকের ধান এসে
ঠেকছে ১০ থেকে ১১ মন। বর্তমান বাজার দরে ধানের দাম ৭৫০ থেকে ৮০০টাকা বিক্রিয় হওয়ার কারনে এক থেকে দুই হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

ক্ষেতে ধান কাটছেন শ্রমিকরা

চলনবিলের সাতপুকুরিয়া গ্রামের বোরো চাষী লাবু প্রামানিক বলেন,  চলনবিলে ২০ থেকে ২৫মণ বিঘাপ্রতি ধান হতো,  কিন্তু এবার ১৪ থেকে ১৫মণ হারে ধান হচ্ছে। তাছাড়া ধানের দাম ৭৫০ থেকে ৮০০টাকা হওয়ার কারনে কৃষকদের লোকসান গুণতে হবে। হুলহুলিয়া গ্রামের কৃষক তৌফিক পরশ বলেন, বিঘা  প্রতি খরচ ৭০০০ থেকে ৮০০০হাজার টাকা। আর ধানের ফলন হচ্ছে মাত্রা ১২ থেকে ১৪মণ হারে। আবার  ধান কাটাতে জমির মালিককে দিতে হচ্ছে ৫মণ ধান।

সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন ইউনির্ভাসাল২৪নিউজকে  বলেন, চলনবিলে আগাম যারা বোরো ধান রোপন করেছিলেন তাদের ধানে কিছুটা চিটা হচ্ছে। কারণ ধান ফুলে বের হওয়ার সময় কিছু ঝড়ো হাওয়ার কারনে পরাগায়ন না ঘটার কারনে চিটা দেখা দিচ্ছে। তাতে ফলনও কিছুটা কম হচ্ছে।


শর্টলিংকঃ