শুধু চালক নয়, পথচারীদের জন্যও হোক কঠোর বিধি


মামুন অর রশিদ:

“অধিকাংশ সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সাধারণ মানুষ ও পথচারীরা বেশি দায়ী। ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও জনবহুল ঢাকা শহরের অসচেতন মানুষ দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে নানা সময়ে দুর্ঘটনার স্বীকার।তাদের কাছে জীবনের চেয়ে সময়ের মূল্য অনেক বেশি বলে মনে হয়।মোবাইলে কথা বলা বা হেডফোনে গান ও কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়া মানুষের সংখ্যা কম নয়।..”

বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আয়তনে ছোট হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে অধিক ঘনবসতিপূর্ণ। অধিক জনবহুল দেশের তুলনায় যে দেশে জনসংখ্যা কম, সেই দেশে তুলনামূলক অপরাধ প্রবনতা ও সন্ত্রাস কম সংঘটিত হয়। আধুনিক বিশ্বে বাংলাদেশকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনা-সমালোচনা লক্ষ্যণীয়।বিশেষ করে ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে আলোচিত নানা ঘটনা ঘটেছে।

লেখক মামুন-অর-রশিদ

বহুল আলোচিত কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক বলে সরকার এ দাবি মেনে নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে এ জটিল সমস্যার সমাধান করেছে।

অন্যদিকে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, সরকার চালকের জন্য কঠোর আইন করেছে তারপরও চালকের নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালানো, নিয়ম না মানাসহ বিভিন্ন কারনে সড়কে ঝরে পড়ছে অনেক তাজা প্রাণ।

পত্র-পত্রিকার পাতা উল্টালেই “শিক্ষার্থীর সড়কে প্রাণ গেল” শিরোনাম পড়তে পড়তে আজ ঘটনাগুলো খুবই স্বাভাবিক হয়ে গেছে।

একদিকে দুর্ঘটনাকে বৈধতা দিতে একটি মহল তৎপর, অন্যদিকে এসব পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করে সকলে রাস্তায় নেমে আসছে।

এসব কর্মসূচি পালন করে কী সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসছে? মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে না পারলে এর সমাধান করা সম্ভব নয়।

গণমাধ্যমে উঠে আসা খবর থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য শতকরা ৯০ ভাগই নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালানোর জন্য দায়ী। লাইসেন্সবিহীন গাড়ি, অদক্ষ চালক, প্রশিক্ষণহীন চালক এসকল সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি করছে।

এছাড়াও সড়কে যানবাহল চালানোর সময় চালকের মোবাইলে কথা বলা, ধুমপান করা, পাশে যাত্রীদের সাথে গল্পে মেতে যাওয়া,চালকের সহকারীর সাথে চালকের বাগবিতণ্ডা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদেশে প্রায় ৭২ লক্ষেরও বেশি চালক আছে কিন্তু তাদের প্রায় অর্ধেকের মত লাইসেন্সহীন চালক। অধিকাংশ চালক অসাধু উপায় অবলম্বন করে লাইসেন্স সংগ্রহ করছে। এ কারণে সড়কে চালকের নিয়মকানুন, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে তার জ্ঞান থাকেনা।ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারন করে। অনেক সময় দুর্ঘটনার পর জানা যায় যে,চালকের সহকারী চালকের ভূমিকা পালন করছে।

ফিটনেসবিহীন গাড়ি, চালকের যত্রতত্র পার্কিং ইত্যাদির কারনেও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা ঘটার পর তদন্তে জানা যায় যে, চালক এবং গাড়ির বৈধ কাগজ ছিল না।দুর্ঘটনা ঘটলে ছাত্ররা রাস্তায় নেমে গাড়ি এবং চালকের লাইসেন্স অনুসন্ধান করছে।কিন্তু এসব মনিটরিং করা তো চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীর কাজ নয়।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসব খবর প্রচারিত হলে এটি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেনা বরং ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলেই ট্রাফিক কর্তৃক মোটর সাইকেলের হেলমেট ও লাইসেন্স দেখা হয়।

এর মধ্য দিয়ে পরিবহণের মাধ্যমে যে দুর্ঘটনা ঘটছে তা কমানো সম্ভব? গাড়ি চালক ও কর্তৃপক্ষকে শুধু দোষারোপ করে বা তাদের উপর দোষ বর্তিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়।

অধিকাংশ সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সাধারণ মানুষ ও পথচারীরা বেশি দায়ী। ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও জনবহুল ঢাকা শহরের অসচেতন মানুষ দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে নানা সময়ে দুর্ঘটনার স্বীকার।

তাদের কাছে জীবনের চেয়ে সময়ের মূল্য অনেক বেশি বলে মনে হয়। মোবাইলে কথা বলা বা হেডফোনে গান ও কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়া মানুষের সংখ্যা কম নয়।

ফুটপাতে অবৈধ দোকাদের কারনে অনেকে ফুটপাত ব্যবহার না করতে পেরে ব্যস্ত সড়ক দিয়ে চলাচল করে। অবিলম্বে ফুটপাত থেকে এসব অবৈধ স্থাপনা বা ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ করুন। কারণ স্বজন হারানো মানুষের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে আমাদের সমাজ।

চালকের জন্য যেমন কঠিন আইন করা দরকার, ঠিক তেমনি অসচেতন পথচারীদের জন্য আরও কঠিন আইন করার মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হবে। সাধারণ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক মহল ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে, এটি চরম লজ্জার বিষয়।

চালকের অসচেতনতা বা হত্যাকান্ডের কোন প্রমাণ মেললে কঠোর শাস্তি এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে উপযুক্ত অর্থ প্রদান করতে হবে।

আমরা কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের আর সড়কে দেখতে চাইনা। তারা বিদ্যালয়ে ফিরে এসে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করবে এটি আমাদের প্রত্যাশা। সরকার ও সড়ক কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

অবিলম্বে দেশের সড়কে যে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে তা আপনাদেরই সমাধান করতে হবে। আমরা সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ চাই।আসুন সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলি।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, রাবি

                                                   ও

            সহ-সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, রাবি।


শর্টলিংকঃ