সংকট উত্তরণের পথ খুঁজছে জাতীয় পার্টি


প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যান পদ ঘিরে যে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। এরশাদের অবর্তমানে দল অটুট রাখতে তৃণমূলের নেতারা এক কাতারে। তাদের দাবি, দলে আর ভাঙন নয় বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে দল।

এদিকে চেয়ারম্যান পদকে ঘিরে পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদসহ দলের অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য দলীয় কোনো কর্মকাে অংশ নিচ্ছেন না।

জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কর্মসূচিতে দেখা যায় হাতে গোনা কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্যকে। এদিকে পার্টির দায়িত্বশীলরা বলছেন, এরশাদের শূন্য আসনে পার্টির মনোনয়নের ওপরই নির্ভর করছে পার্টির আরেক দফা ভাঙাগড়া। রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের দুজনে মিলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নিয়ে একক প্রার্থী ঘোষণা করতে পারলেই দলের ঐক্য বজায় থাকবে। রওশন এরশাদ চান দলে সমন্বয়, আর জি এম কাদেরের এতে আপত্তি নেই।

জানতে চাইলে পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি আগেও বলেছি ভাবীর (মরহুম এরশাদের সহধর্মিণী বেগম রওশন এরশাদ) সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। উনি আমাকে ছোটবেলা থেকে সন্তানের মতো লালন-পালন করেছেন। উনি আমার মাথার ওপর বটগাছের ছায়ার মতো থাকবেন।

উনি যেভাবে আমাকে দিকনির্দেশনা দেবেন পার্টি সেভাবেই পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, কিছু সমস্যা রয়েছে। সেটি সব দলেই থাকে। এর থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছি। খুব শিগগিরই সমাধান হবে আশা করি। শূন্য রংপুর-৩ আসনে জাপার প্রার্থী প্রসঙ্গে বলেন, দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। এই নিয়ে দ্বন্দ্বের কোনো অবকাশ নেই।

জানা যায়, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি তার অবর্তমানে ভাঙনের মুখে পড়ুক তা চান না রওশন এরশাদও। রওশনের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তারা জানান, জি এম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রওশন এরশাদের সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

‘জি এম কাদের পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যান নন।’ এ মর্মে ২২ জুলাই গভীর রাতে রওশন এরশাদসহ পার্টির দশজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপির নামে একটি বিবৃতি প্রকাশ পেয়েছে। সূত্র জানায়, সেই বিবৃতিও দেওয়ার পক্ষে ছিলেন না রওশন এরশাদ। পার্টির কয়েকজন অতি উৎসাহী প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশনকে অনেকটা ভুল বুঝিয়ে ও কাকুতি-মিনতি করে এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করান। ওই বিবৃতিতে নাম থাকা নয়জনের মধ্যে ছয়জনই জানান, এমন কোনো বিবৃতিতে আমরা স্বাক্ষর করিনি।

নেতা-কর্মীরা জানান, দলের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে শিগগিরই জাতীয় পার্টিতে অস্বস্তি দূর হবে। রওশন এরশাদ সবসময় চেয়েছেন জি এম কাদের পার্টিকে চাঙ্গা করতে কাজ করুক। জি এম কাদের যদি দলের কর্মকাণ্ড নিয়ে এবং যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রওশন এরশাদের মতামত নেন তাহলে কোনো বিভেদ থাকবে না। এক্ষেত্রে জি এম কাদের রওশন এরশাদের সঙ্গে সমন্বয় করে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দল পরিচালনা করবেন আর রওশন এরশাদ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করবেন।

বিরোধী দলের উপনেতা রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি বলেন, আমরা জি এম কাদেরের বিপক্ষে নই। আমরা সবাই রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। ম্যাডামের (রওশন) এ বয়সে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। উনি চান সম্মান।

জি এম কাদের তার সঙ্গে পরামর্শক্রমে দল পরিচালনা করবেন এটাই ম্যাডামসহ সবার প্রত্যাশা। সাবেক মহাসচিব ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দলকে সম্মানজনক অবস্থানে রাখতে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের আন্তরিক চেষ্টা হবে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা।


শর্টলিংকঃ