- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

‘সংখ্যালঘু’ পরিচয় ঘুচাবে কে? – বাপ্পাদিত্য বসু


“মুক্তিযুদ্ধকালে যখন সকলে একসঙ্গে যুদ্ধ করেছে এক ভাইয়ের সঙ্গে অপর ভাইয়ের রক্ত মাটিতে মিশে গেছে সে রক্ত তো কেউ ভাগ করতে যায়নি, এটা ভাগ হতে পারে না। এই বাংলার মাটিতে যেহেতু আমরা ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এক হয়ে বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি।

কাজেই এখানে সকল ধর্মের সম্মান ও অধিকার থাকবে। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে সংবিধান আমাদের দিয়েছিলেন সেই সংবিধানে তিনি কিন্তু সেকথাই বলে রেখেছিলেন। আমাদের যে চার মূলনীতি সেই মূলনীতিতে কিন্তু এ কথাটাই ছিলো।

আমার বাবার (বঙ্গবন্ধু) আদর্শ অনুসরণ করেই আমরা সকল পদক্ষেপ নিচ্ছি । দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কখনই ধর্মের বিভাজনে বিশ্বাস করে না। বিএনপি সরকার অসৎ উদ্দেশ্যে দেশের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনই এতে বিশ্বাস করে না। বরং তারা মনে করে, এই দেশ সকলের, এদেশে বসবাসকারী সকল ধর্মাবলম্বীদের।”

এগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষে গত ৪ সেপ্টেম্বর গণভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ চমৎকার ভাষণ দিয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে এ বক্তব্য যথার্থ।

ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন হয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিলো ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক এবং ন্যায় ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। সে লক্ষ্য ধারণ করেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে সংবিধান রচনা করে। সে সংবিধানে রাষ্ট্রীয় চারটি মূলনীতির উল্লেখ ছিলো।

ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, জাতীয়তা ও সমাজতন্ত্র। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে সাথে সংবিধানের চার মূলনীতিকে হত্যা করা হয়। ধর্মনিরপেক্ষতা যায় নির্বাসনে। আসে ‘পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশেরউল্টোযাত্রার সেই শুরু।

জিয়া-এরশাদের সামরিক সরকার এবং তাদের তাবেদার অসামরিক সরকারগুলো এই উল্টোযাত্রাকেই এগিয়ে নিয়েছে। জিয়াউর রহমান সংবিধানের প্রস্তাবনায় বসালেন ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। ধর্মনিরপেক্ষতাকে আন্দামানে পাঠালেন। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পথ উন্মুক্ত করে পরাজিত জামায়াতে ইসলামীকে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার সুযোগ করে দিলেন। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এসে ইসলামকে করলেন ‘রাষ্ট্রধর্ম’। এক ঝটকায় দেশের অন্যান্য সকলধর্মাবলম্বীদের বানিয়ে দিলেন ‘দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’।

জিয়া-এরশাদের সামরিক জমানার অবসানের পর এলো বেগম খালেদা জিয়ার গণতান্ত্রিক শাসনামল। কিন্তু বেগম জিয়ার বিএনপি তো কার্যত জিয়াউর রহমানেরই আদর্শিক উত্তরসূরী। ফলে সেখানে পরিবর্তন কাম্য ছিলো না। ১৯৯৬ সালে এলো জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। কিন্তু সংবিধান সংশোধনে তার প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় সেবারও কোনো পরিবর্তন সম্ভব হলো না।

আবার এলো খালেদা জিয়ার সরকার। এবার সঙ্গে জামায়াত। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী সাম্প্রদায়িক নেতারা সব মন্ত্রী। উগ্র ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসবাদের উত্থান ও বিকাশ হলো রাষ্ট্রীয় ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়। এরপর দুই বছরের অসাংবিধানিক অগণতান্ত্রিক ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন শাসন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরলো শেখ হাসিনার সরকার। সঙ্গে এবার বামপন্থীরা। চলছে একটানা তিন মেয়াদ।

প্রথম মেয়াদেই সংবিধান পরিবর্তনের উদ্যোগ। এরই মাঝে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে জিয়া-সাত্তার-সায়েমের পুরো শাসনকাল এবং এরশাদের শুরু থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত সময়কাল অবৈধ ঘোষণা হলো। ফলে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিতে যে পরিবর্তন আনা হয়েছিলো জিয়াউর রহমানের আমলে, তা অবৈধ। একই সূত্রে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অধিকারও অবৈধ।

এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম প্রবর্তন সম্পর্কিত ৮ম সংশোধনী করেছিলো ১৯৮৮ সালে। ফলে আদালতের বিচারে তা অবৈধ হলো না। কিন্তু বাংলাদেশের জন্মপরিচয় আর রাষ্ট্রীয় মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক ওই ৮ম সংশোধনী কি নৈতিকভাবে বৈধ ছিলো? এই ৮ম সংশোধনীর বিরুদ্ধে সে সময়ে লড়েছিলো আওয়ামী লীগও। সে সময়ে সেই লড়াইয়ের নেতা ছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টানা তিন মেয়াদের প্রথম মেয়াদেই সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনলো শেখ হাসিনার সরকার। বহু সংশোধনী প্রস্তাব পাস হলো একসাথে। তাতে বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি ফিরে এলো। কিন্তু রয়ে গেলো ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’। রয়ে গেলো ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অধিকার। সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এর সাথে অতিরিক্ত একটি বাংলা বাক্যে ‘সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার নামে’ যুক্ত হয়ে কিছুটা সান্ত্বনা দেওয়া হলো।

কিন্তু আসলে এ সংবিধানের চরিত্র কী দাঁড়ালো? পঞ্চদশ সংশোধনী-উত্তর বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির অন্যতম হলো ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’, অপরদিকে এ রাষ্ট্রের ‘রাষ্ট্রধর্ম’ হলো ইসলাম। মানেটা কী দাঁড়ালো? ‘হাঁস’ আর ‘সজারু’ মিলে সংবিধানের চেহারা হলো‘হাঁসজারু’। আর ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অধিকার বহাল থাকার ফলে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত কিংবা অন্যান্য রাষ্ট্রীয় চেতনাবিরোধী সকল ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো বহালই থেকে গেলো। অর্থাৎ সংবিধানে এক মুঠো ধর্মতন্ত্রের সাথে একচিমটি ধর্মনিরপেক্ষতা গুলে দেওয়া হলো। এই ‘হাঁসজারু’ সংবিধান আমরা এখন বহন করে চলেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, “আপনারা নিজেরা নিজেদেরকে বারবার করে কেন সংখ্যালঘু সংখ্যালঘু বলেন? আপনারা কি এই রাষ্ট্রের নাগরিক না? আপনারা কি এদেশের মানুষ না? এটা আপনার জন্মভূমি না? এটাতো আপনাদের জন্মভূমি। তাহলে নিজেরা নিজেদেরকে ছোট করে সংখ্যালঘু করে দেখবেন কেন?”

কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্র নীতিগতভাবে যখন একটি বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্মের স্বীকৃতি দেয়, তখনআপনি মুখে যতো কথাই বলেন না কেন, অন্য ধর্মাবলম্বীদের নিজেদেরকে ‘সংখ্যালঘু’ ভাবার বিকল্প কিছু থাকে না। রাষ্ট্রের এই সাংবিধানিক চরিত্রের প্রতিফলন প্রতিদিন প্রতিটি ক্ষেত্রেই হচ্ছে। এদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন প্রতিদিনকার চলমান চিত্র- একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন?

১৯৭১-পরবর্তী সময়েও কতো লক্ষ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দেশত্যাগী হতে বাধ্য হয়েছে- তার সঠিক হিসাব পাওয়াটাই মুশকিল। এখনও প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও থেকে কোনো না কোনো হিন্দু পরিবার অন্য দেশে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের জমি দখল, পরিবারের নারীদের উপর নানামুখী নির্যাতনসহ নির্যাতনের নিত্যনতুন কৌশল ফলিয়ে তাদেরকে নিজ জন্মভূমি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।

সংখ্যালঘুদের জমি দখলে সাম্প্রদায়িক বিএনপি-জামায়াতের চেয়ে ‘অসাম্প্রদায়িক’ আওয়ামী লীগের নিচের তলার লোকজন খুব একটা পিছিয়ে নেই। নিচের তলাই বা কেন শুধু, কতোজন সংসদ সদস্য বা সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও তো সংখ্যালঘু নির্যাতন ও তাদের জমি দখলের ঘোরতর অভিযোগ আছে! ‘শত্রু সম্পত্তি’ থেকে আওয়ামী লীগের সরকার ‘অর্পিত সম্পত্তি’তে এলেও তার হাজার হাজার অভিযোগ নিষ্পত্তি না করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। অর্পিত সম্পত্তির দখলের ক্ষেত্রে নিচের তলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিরা কিন্তু পিছিয়ে নেই।

বিএনপি-জামায়াতের আমলে হিন্দু তথা অন্যান্য সংখ্যালঘু নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনার বিচার পাওয়া যাবে না- রাজনৈতিক আদর্শগত কারণেই এটা চরম সত্য। কিন্তু তাই বলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের আমলে সংঘটিত একের পর একে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার বিচার হবে না- বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের কাছে এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন বটে।

ছোটখাটো বিক্ষিপ্ত ঘটনাগুলোর কথা বাদ দিলেও রামুর বৌদ্ধপল্লী, নাছিরনগর, মালোপাড়া, গড়েয়া, ঠাকুরপাড়ার হিন্দুপল্লী কিংবা গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালপল্লীর সহিংসতার বিচার এতো দীর্ঘায়িত হবে- এটা ভাবতেও এদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের কষ্ট হয়, যখন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা এদেশের প্রধানমন্ত্রী।

স্বাধীন বাংলাদেশে দীর্ঘকাল ধরে সনাতনী সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি মাত্র একদিন। অথচ এ উৎসব আয়োজিত হয় পাঁচদিন ধরে। এর বাইরে নব্বইয়ের দশকে এসে জন্মাষ্টমীতে আরো একদিন ছুটি পাওয়া গেছে। দুর্গাপূজায় সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত একদিন ছুটি থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি থাকতো সাতদিন বা তার বেশি।

কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রী যখন ধর্মীয় স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের উপর সকলের সমান হকের কথা বলছেন, হয়তো তিনি অবগতই নেই যে এবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূজার ছুটি কমিয়ে তিন দিনে আনা হয়েছে। অষ্টমী পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা থাকছেই নবমী-দশমী আর তার পরেরদিন ছুটি দেওয়া হয়েছে এবার। তাহলে এই বিপুল সংখ্যক সনাতনী সম্প্রদায়ের ছাত্র-শিক্ষকরা পুজোর আনন্দ বঞ্চিত হতে চলেছে এবার।

আরো কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। এবার দুর্গা পূজার ষষ্ঠীর দিনে মেডিকেল কলেজসমূহে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঠিক করা হয়েছে। আর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা হবে সপ্তমীর দিনে। অষ্টমী ও নবমীর দিনে বিসিএস-এর মৌখিক পরীক্ষার নির্ধারিত দিন। সপ্তমীর দিনেই রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণের ঘোষিত তারিখ।

ভোটকেন্দ্র-সহ সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী আইন অনুসারে যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাই যেখানে ব্যহত হয়, সেখানে পূজার উৎসব পালন করা কতোখানি কঠিন হবে- ভাবাটা কঠিন কিছু নয়। শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি তিন দিন করার দাবি দীর্ঘকালের। সেটা তো করা হচ্ছেই না, বরং এবার ছুটি আরো সংকুচিত করা হচ্ছে।

অর্থাৎ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন মুখে বলছেন- তোমরা নিজেদেরকে ‘সংখ্যালঘু‘ কেন ভাবছো, ঠিক তখনই রাষ্ট্রের আর সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো চোখে আঙ্গুল ঠেলে দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে- তোমরা ‘সংখ্যালঘুই’।

সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতি ছিলো- সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের। কিন্তু মন্ত্রণালয় গঠন তো দূরের কথা, সংখ্যালঘু বিষয়ক কমিশন গঠনের দীর্ঘকালের দাবিটিও আজ পর্যন্ত পূরণ হলো না। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান- এই তিনটি সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য তিনটি কল্যাণ ট্রাস্ট আছে নামেমাত্র। কিন্তু জনসংখ্যার সংখ্যানুপাতে তাদের বাজেট বরাদ্দ দেখলে আপনি নিশ্চিত বুঝে যাবেন- সমানাধিকারের প্রশ্ন তো নেইই, বরং তিন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি সামান্য করুণাভিক্ষা দেওয়া ছাড়া তাতে আর কিছুই হয় না।

এ রকম হাজারো বৈষম্যের চিত্র পরিষ্কারভাবেই প্রতীয়মান হয় প্রতিদিন। আর মন্দির ভাঙ্গা, বিগ্রহ ভাঙ্গা তো আছেই। এদেশে একটা কথা বেশ প্রচলিত আছে- “কখন আপনি বুঝবেন যে শারদীয় দুর্গোৎসব আসছে? যখন আপনি দেখবেন যে মন্দির আর বিগ্রহ ভাঙ্গা বেড়ে গেছে।”

এভাবে প্রতিনিয়ত আপনি বুঝিয়ে দেবেন- তুমি সংখ্যালঘু, তুমি অধিকারহীন। আর বিজয়া দশমী ও জন্মাষ্টমীতে গণভবনে মিষ্টি-পিঠা-পায়েস খাইয়ে মিষ্টি করে বলবেন- ‘তুমি নিজেকে কেন সংখ্যালঘু মনে করো?’- এটা আসলে দেশের দশ শতাংশ মানুষের প্রতি রীতিমতো প্রহসনের নামান্তর।

আপনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, জাতির পিতার উদাহরণ টেনে বলবেন, এদেশ তোমার-আমার, কিন্তু যৌথ খামারের চেতনা ধুলিস্যাৎ করে আপনি অশুভ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাথে আপোস করবেন, তাদের দাবিদাওয়া মেনে পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রমের সাম্প্রদায়িকীকরণ করবেন, রাষ্ট্রধর্ম ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অধিকার বহাল রাখবেন, তাতে কিন্তু ‘সংখ্যালঘু’ পরিচয় ঘুচে যায় না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি যদি সত্যিকার অর্থেই মনে করেন, এদেশের জনসংখ্যার একটা অংশের গা থেকে ‘সংখ্যালঘু’ পরিচয় ঘুচিয়ে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণ করবেন, তাহলে সবার আগে রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করুন। আর রাষ্ট্রকে নীতিগতভাবে সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারলে তার প্রায়োগিক নজিরও সৃষ্টি করতে পারবেন না। তখন ‘সংখ্যালঘু’ পরিচয়ও ঘুচবে না।

লেখক: বাপ্পাদিত্য বসু , সমন্বয়ক, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চা এবং সাধারণ সম্পাদক, ইয়ুথ ফর ডেমোক্রেসি এন্ড ডেভেলপমেন্ট।