সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হচ্ছে পুঠিয়া চারআনি রাজপরগনা


আবু হাসাদ,কামাল , পুঠিয়া:

বৎসাচার্য্যরে পূত্র পিতাম্বর ১৫৫০ সনে রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবংশের গোড়াপত্তন করেন। আর পিতাম্বরের অনুজ নীলাম্বর পুঠিয়া রাজবংশের প্রথম রাজা অধিষ্ঠিত হন। চতুর্থ ধনপতি চাঁদ সওদাগর থেকে শুরু করে পরেশ নারায়ণ ও নরেশ নারায়ন বাহাদুর পুঠিয়া রাজবংশ প্রায় ৪শ’ বছর শাসন করেন। এরপর ১৯৪৯ খ্রিঃ রাজপ্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর রাজ পরগনার উত্তরাধিকারীরা স্বপরিবারে ভারতবর্ষে গমন করেন।

এখন পরগণায় রাজা নেই, রাজ্যও নেই। সমস্ত রাজপরগনা জুড়ে আছে তাদের অনেক স্মৃতি বিজড়িত পূরাকীর্তি সমুহ। বর্তমানে কর্তৃপক্ষের নজরদারী ও রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে চারআনি রাজবাড়ি প্রায় বিলুপ্তের পথে। স্থানীয়দের দাবি যথাযথ কর্তৃপক্ষ পুরাকীর্তি সম্বলিত রাজবাড়িটি সংরক্ষন না করলে রাজপরগনার ইতিহাস ঐতিহ্যের শেষ অংশটুকু কালের গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে।

স্থানীয়দের তথ্যমতে জানাগেছে, রাজপ্রথা বিলুপ্তির পর চারআনি রাজবাড়িটি মামলা জটিলতার কারণে এক প্রকার পরিত্যাক্ত হিসাবে ছিল। পরে সেখানে গত কয়েক দশক থেকে পুঠিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। চারআনি রাজবাড়ি বাদে পুঠিয়া রাজপরগণার বেশীর ভাগ অংশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধিনে রয়েছে। সেগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রক্ষনা-বেক্ষন করছেন। আর চারআনি রাজবাড়িটি প্রত্নতত্ত্বের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় সেখানে এখনো পর্যন্ত সংস্কারের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। যার ফলে পর্যায়ক্রমে রাজবাড়ির বেশীরভাগ অংশ আজ ধ্বংস হয়ে গেছে। সর্বশেষ গতকাল (৭ সেপ্টেম্বর) রাজবাড়ির মূল গেইটের পাশাপাশি ভবনের কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে।

লোকনাট্যকার ও গবেষক কাজী সাঈদ হোসেন দুলাল বলেন, বারো ভূঁইয়ার ইতিহাস ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে এই রাজপরগনায়। পরগণার কয়েকটি স্থান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষন করলেও নানা কারণে চারআনি রাজবাড়িটি এখনো অবহেলিত হয়ে আছে। কর্তৃপক্ষের সঠিক রক্ষনা-বেক্ষনের অভাবে আজ চারআনি রাজবাড়ি ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এসে দাড়িয়েছে। গতকাল পরগণার মুল ফটক ভেঙ্গে বিলিন হয়ে গেছে। দ্রুত পরগণার সংরক্ষন কাজ শুরু না করলে আগামী প্রজন্ম রাজপরগণার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শেষ স্মৃতি টুকুও দেখতে পাবে না।

এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক প্রকৌশলী নাহিদ সুলতানা বলেন, চারআনি রাজবাড়িটির মালিকানা দাবী করে বেগমের মেয়ে একটি মামলা করেছিলেন। যা এখনো বিচারাধিন। এই কারণে চারআনি রাজবাড়িটি আমরা সংরক্ষন ও সংস্কার কাজ করতে পারেনি। তার পরেও আমরা চেষ্টা করছি যেনো রাজবাড়ির শেষ অংশটুকু সংরক্ষন করা যায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওলিউজ্জামান বলেন, চারআনি রাজবাড়ি এলাকা এখনো উপজেলা ভূমি অফিসের অধিনে রয়েছে। বর্তমানে পরগণার এক অংশে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কার্যক্রম চলে। গতকাল চারআনি রাজবাড়ির মুল ফটক ভেঙ্গে পড়েছে এই বিষয়টি আমি শুনেছি। এটা আগের মত পূরাকীর্তিযুক্ত পুনঃসংস্কার করার মত সামর্থ নেই ভূমি অফিসের। আমরা আজকালের মধ্যে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে এ বিষয়টি লিখিত ভাবে অবহিত করবো।


শর্টলিংকঃ