সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে ডাক্তার হওয়ার পথে মাহফুজা


বাগমারা প্রতিনিধি:
নিভৃত পল্লীর এক কৃষক পরিবারের সন্তান মাহফুজা খাতুন (১৮)। অনেক কষ্ট করে তিল তিল করে বেড়ে উঠেছেন মা-বাবার কুঁড়ে ঘরে। অনেক বাধা আর বিপত্তি পেরিয়ে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন আলোর পথে। পরিশ্রমই সফলতার দিকে নিয়ে যায় তারই একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মাহফুজা খাতুন। ছোট বেলা থেকেই প্রতিজ্ঞা বড় হয়ে জনসেবা আর মানবকল্যাণে কাজ করবেন। তার সেই আশায় যেন পূরণ হতে চলেছে। 

মাহফুজা খাতুন এবার সিলেটের উসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে মেধা তালিকায় নিজের নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছে। সেখানেই ভর্তি হওয়ার আশা ব্যক্ত করেছে সে। মেধাবী এই শিক্ষার্থীর বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের মোহম্মাদপুর গ্রামে। তার পিতার নাম মকবুল হোসেন পেশায় কৃষক। আর মায়ের নাম সাবিনা বিবি তিনি একজন গৃহীনি। দুই সন্তানের মধ্যে ১ ছেলে আর ১ মেয়ে। এদের মধ্যে মাহফুজা বড়। কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করায় জীবনের সাথে সংগ্রাম করে বড় হতে হচ্ছে তাকে। শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই অনেক মেধাবী মাহফুজা খাতুন।

উপজেলার দ্বীপনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১৭ সাথে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়। এর পর ভর্তি হয় মচমইল ডিগ্রী কলেজে একাদশ শ্রেণীতে। সেখানেও সফলতার সাক্ষর রেখেছে মাহফুজা। ২০১৯ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ গ্রহণ করে জিপিএ-৫ নিয়ে সফলতার সহিত উত্তীর্ণ হয়। জেগে উঠে তার শৈশবের স্বপ্ন। ঢাকা মেডিকেল এবং সিলেটের উসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অংশ গ্রহণ এমবিবিএস কোর্স পরীক্ষায়। ঢাকা মেডিকেলের ফলাফল প্রকাশ এখনও প্রকাশ না হরেও প্রকাশ হয়েছে উসমানী মেডিকেলের ফলাফল। সেখানে ৪ হাজার ৬৮ আসনের বিপরীতে মেধা তালিকার ১ হাজার ৪৪০ এ জায়গা করে নেয় মাহফুজা খাতুন। গত ১৫ অক্টোবর প্রকাশ করা হয় সিলেট উসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০১৯-২০ সেশনের ফলাফল। এদিকে মচমইল কলেজের ডিগ্রী কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী মাহফুজা খাতুনের এই কৃতিত্বে গর্বিত সবাই।

শনিবার বেলা ১১ টায় মচমইল ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ কুমার প্রতীক দাশ রানা মেধাবী মাহফুজাকে তাঁর অফিস কক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। সে সাথে আগামীতে যেন আরো ভালোকিছু করতে পারে সে জন্য তার হাতে বই তুলে দেন। একজন প্রকৃত চিকিৎসক হয়ে দেশ ও দশের কল্যাণে কাজ করতে পারে সে আশা ব্যক্ত করেন অধ্যক্ষ। এ সময় উপ¯ি’ত ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ সহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ। পরে কলেজের অধ্যক্ষ কুমার প্রতীক দাশ রানা মেধাবী মাহফুজাকে নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী কক্ষে যান এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেন।

এ বিষয়ে কথা হয় সদ্য মেডিকেলে চান্স পাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী মাহফুজা খাতুনের সাথে। সে জানায় কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় থাকলে সবই সম্ভব। মেডিকেলে চান্সের পেছনে মা-বাবা আর শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষকদের সঠিক দিক নির্দেশনা আমাকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে। কৃষকের সন্তান হয়েও অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয়েছে তাকে। সঠিক ভাবে যেন এমবিবিএস কোর্স শেষ করে জনসেবা আর মানব কল্যাণে কাজ করতে পারে সে জন্য সকলের দোয়া কামনা করেন মাহফুজা।


শর্টলিংকঃ