Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

সক্রিয় জালিয়াতির চক্র : ঝুঁকিতে দেশের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা


ইউএনভি ডেস্ক:

দেশের ব্যাংকিং খাতকে টার্গেট করে ৩ বছর আগে অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) বুথের যন্ত্র সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির পরিকল্পনা করে আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুপের সদস্যরা।

চুক্তি অনুযায়ী বুথগুলোতে অবৈধ চিপ বসিয়ে দেবে ওই প্রতিষ্ঠানটি। আর এ বিশেষ চিপের মাধ্যমে এটিএম বুথ ও কার্ডের সব তথ্য চলে যাবে হ্যাকার গ্রুপের সদস্যদের হাতে।

এটিএম বুথে ডিজিটাল জালিয়াতির সঙ্গে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার বিদেশি নাগরিকদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বিভিন্ন সংস্থা। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেই একের পর এক হানা দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুপ। আর এতে ভয়াবহ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে ২০১৬ সালে এটিএম ও পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিন জালিয়াতির প্রথম ঘটনায় গ্রেফতার হয় আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের অন্যতম হোতা বিদেশি নাগরিক পিওটর সিজোফেন মুজারেক। ঢাকার বিভিন্ন থানায় কয়েকটি মামলা হয়। ঘটনার ৩ বছর পার হলেও তদন্ত শেষ হয়নি। পুলিশ বলছে, তদন্ত প্রায় শেষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে চার্জশিট দেয়া হবে।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৈফিক আহমদ চৌধুরী  বলেন, এটিএম যন্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হ্যাকার গ্রুপের যোগাযোগ রয়েছে। এ কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা। সাপ্লাই সোর্সকে ধরতে না পারলে শুধু হ্যাকার গ্রুপের সদস্যদের গ্রেফতার করে এসব বন্ধ করা যাবে না বলেও জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এক সপ্তাহের মিশনে আসা হ্যাকার গ্রুপের সদস্যরা আরও তিনটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো অর্থ চুরির বিষয়টি মুখে স্বীকার করছে না। এদিকে সিআইডি জানায়, বুথে ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে নতুন আরেকটি মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সোমবার রাতেই মামলা রুজু করার কথা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হ্যাকার গ্রুপের অপতৎপরতা বন্ধে ও ঝুঁকি মোকাবেলায় সোমবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিন্টো রোডের কার্যালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিম এবং কম্পিউটার কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ঘটনার পুরো রহস্য উদ্ঘাটনে প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ এক উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বুথে ডিজিটাল জালিয়াতির আগাম তথ্য পেয়ে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছিল ব্যাংকগুলো যদি এসব তথ্য গুরুত্ব সহকারে নিয়ে বুথের প্রযুক্তিগত আপডেট করে জালিয়াতি বন্ধে কার্যকরি ভূমিকা নিত, তাহলে ভয়াবহ চুরি এড়ানো যেত। কর্মকর্তারা আরও বলেন, হ্যাকার গ্রুপকে দ্রুত গ্রেফতার করতে পারায় তারা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তবে দ্রুত ব্যাংকিং খাতের ডিজিটাল সেবার ফাঁকফোকর বন্ধ করা না গেলে চরম ঝুঁকিতে পড়বে এ খাত।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহিদুর রহমান রিপন বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে এনে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাবে। এটিএম ও পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিন জালিয়াতির প্রথম ঘটনায় গুলশান থানায় করা মামলার অগ্রগতির বিষয়ে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট উপ-কমিশনার (ডিসি) আলিমুজ্জামান  বলেন, মামলার তদন্তে এজাহারভুক্ত আসামি পিওটার ও সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ এর বাইরেও চক্রের একাধিক সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। দ্রুত চার্জশিট দেয়া হবে।

এর আগে ২০১৬ সালের মে মাসে ৩ দিনের বিশেষ মিশনে আসে চীনের তিন নাগরিক। তাদের মধ্যে জ্যু জিয়ানহুই রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের প্রাইম ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সময় ধরা পড়ে। একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় পিওটার নামে জার্মানির এক নাগরিককে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

তার পেশাই ছিল এটিএম কার্ড ও পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিন জালিয়াতি। ওই সময় সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাকেও গ্রেফতার করে ডিবি। সর্বশেষ ৩১ মে ফের ঢাকায় ৭ দিনের মিশন নিয়ে আসে হ্যাকার গ্রুপের সদস্য সাত ইউক্রেন নাগরিক। চক্রের ৬ সদস্যকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও এখনও আত্মগোপনে রয়েছে চক্রের আরেক সদস্য।


Exit mobile version