‘সত্যি’ হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দরের স্বপ্ন


আঠারো হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের উন্নয়ন অগ্রগতি প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাশের অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠকে ডিপিপির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের ‘বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট’ (বিগ-বি) এর আওতায় মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় গভীর সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণের চূড়ান্ত স্থান নির্ধারিত হয়েছে।

২০১৫ সাল থেকে জাইকা মাতারবাড়ী কয়লা-বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ করতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সম্ভাবনাটি উদ্ঘাটন করে। সে থেকে উক্ত স্থানে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের দ্বার উন্মোচিত হয় বলে জানা যায়।

চট্টগ্রাম বন্দরের অতিক্রান্ত সক্ষমতা, বড় আকারের জাহাজের প্রবেশের সীমাবদ্ধতা, কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যকে সামনে রেখে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। প্রস্তাবিত এ গভীর সমুদ্রবন্দরে ১৬ মিটার গভীরতার এবং ৮ হাজার কনটেইনারবাহী জাহাজ সহজে যাতায়াত করতে পারবে। সরকারের রূপকল্প ২০৪১ সালে দেশে বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৪ মিলিয়ন এবং জাহাজের সংখ্যা দাঁড়াবে ৮ হাজার ২০০টি।

মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এতে ১৬ মিটার গভীরতার ৮ হাজার টিইইউ কন্টেইনারবাহী জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে ৯ দশমিক ৫ মিটারের বেশি গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে না। এর ফলে মাদার ভেসেলগুলো বন্দরের জেটিতে আসতে পারে না। ফিডার জাহাজে করে কন্টেইনার আনা-নেওয়া করা হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুসারে, প্রতিদিন ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টিইইউ আমদানি পণ্য কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজ সর্বোচ্চ ২০০০ টিইইউ কন্টেইনার নিয়ে ভিড়তে পারে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ কলম্বো, ভারত, চেন্নাই, করাচির বন্দরে এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ ভিড়তে পারে। এ বিবেচনায় মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর অধিকহারে ড্রাফটের জাহাজের সমুদ্রবন্দর কন্টেইনার পরিবহনে বাংলাদেশের জন্য উত্তম বিকল্প হবে।

এ বিপুল সংখ্যক কনটেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিং সক্ষমতা দেশের বর্তমান বন্দরগুলো দিয়ে সম্ভব নয়। তা ছাড়া, দেশে বর্তমানে কোনো গভীর সমুদ্রবন্দর না থাকায় ডিপ ড্রাফটের জাহাজ এ সকল বন্দরে ভিড়তে পারে না। ফলে মাদার ভেসেল থেকে গভীর সমুদ্রে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে বন্দরে নিয়ে আসা হয়।

মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দরের উন্নয়নের পাশাপাশি আধুনিক কনটেইনারবাহী জাহাজ, খোলা পণ্যবাহী জাহাজ ও তেলবাহী ট্যাংকারকে জেটিতে ভেড়ার উপযোগী করে তোলা হবে। দেশের ও আঞ্চলিক দেশসমূহের চাহিদার সাথে সঙ্গে মহেষখালী ও মাদারবাড়ী এলাকায় গড়ে ওঠা শিল্পাঞ্চলের পণ্য পরিবহনে সহযোগিতা করাই এ বন্দরের মূল উদ্দেশ্য।

এক হাজার ২২৫ একর জমির ওপর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হবে। মাতারবাড়ী ও ধলঘাট মৌজার উক্ত জমির মধ্যে ২৯৪ একর জমি জাইকার অর্থায়নে অধিগ্রহণ করা হবে। বাকি ৯৩১ একর জমি চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে অধিগ্রহণ করা হবে। কারণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

উক্ত প্রকল্পের জন্য গত বছরের ২৬ নভেম্বর পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে। প্রথমপর্যায়ে ২৯৪ একর জমির ওপর টার্মিনাল, নেভিগেশন চ্যানেল, টার্নিং বেসিন, ডাম্পিং অব ড্রেজিং সয়েলের কাজ করা হবে।


শর্টলিংকঃ