সবাই নিজের মতো সুন্দর : প্যারিস


বিনোদন ডেস্ক:

প্যারিস নামেই বিনোদন দুনিয়ায় জনপ্রিয় আর সুপরিচিত। তবে পুরো নাম প্যারিস জ্যাকসন। জন্ম ৩ এপ্রিল, ১৯৯৮। বিশ্বের পপ গুরুখ্যাত মাইকেল জ্যাকসনের একমাত্র কন্যা। নতুন করে আলোচনায় এসেছেন বাবার প্রয়াণ দিবস ২৫ জুনের স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজনকে কেন্দ্র করে।


বাবা মাইকেল জ্যাকসন। মা ড্যাবি রোই। তবে বাবার সঙ্গেই সখ্য বেশি ছিল প্যারিসের। মাত্র ১১ বছরের স্মৃতিতে অনেক কিছুই মনে আছে তার। বাবাই তার অভিনয় আর মডেল হওয়ার পেছনের প্রেরণা। নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে তা বাবার কাছ থেকেই রপ্ত করা।

বাবার অস্বাভাবিক মৃত্যু আজও প্যারিসকে স্বাভাবিক হতে দেয়নি। অনেক আদরের মেয়ে ছিলেন প্যারিস। এখন কাছের বন্ধুদের সঙ্গেই বেশিরভাগ সময় কাটে তার। গত কয়েক মাস অনেক কঠিন সময় গেছে প্যারিসের। মানসিক সুস্থতার জন্য চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হচ্ছে। এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। শান্তিময় পরিবেশ দরকার তার। পরিবার আর বন্ধুদের সবাই প্যারিসের জন্য সে চেষ্টাই করছেন।

প্যারিস জ্যাকসন তার বন্ধুদের নিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ছুটি কাটাচ্ছেন। সঙ্গে আছেন তার প্রেমিক। ২৫ জুন তার বাবা ‘কিং অব পপ’ মাইকেল জ্যাকসনের দশম মৃত্যুবার্ষিকী। এই শোক কাটাতেই কাছের মানুষদের নিয়ে প্রিয় শহর প্যারিসে এসেছেন জ্যাকসনকন্যা প্যারিস।

তবে মার্কিন সঙ্গীত তারকা মাইকেল জ্যাকসনের একমাত্র মেয়ে প্যারিস জ্যাকসন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। বিখ্যাত সাময়িকী রোলিং স্টোনে ম্যাগাজিনে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্যারিস জ্যাকসন দৃঢ়ভাবেই বলেছেন, ২০০৯ সালে মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর ঘটনাটি ছিল একটি সাজানো ষড়যন্ত্র।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের ফলে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় সঙ্গীতশিল্পী মাইকেল জ্যাকসনের। পরে অনিচ্ছাকৃত মানবহত্যার অভিযোগে তার চিকিৎসক কনরাড মারেকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ওই সময় প্যারিসের বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর।

একেবারেই গল্পের মতো করে হঠাৎ তার বাবার চলে যাওয়া। তিন ভাইবোনের যেন অথই সাগরে পড়ে যাওয়া। তারা সেই শোক ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছে।

জনপ্রিয় মার্কিন উপস্থাপিকা অপরাহ উইফ্রের সঙ্গে আলাপকালে প্যারিস জ্যাকসন জানায়, বাবা মাইকেল জ্যাকসনের একটা সিদ্ধান্ত তাকে খুব আনন্দ দিত। ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাইরে বেরুলে তাদের নেকাব বা পর্দা পরিয়ে নিতেন। পাপারাজ্জি ও ভক্তদের উটকো ঝামেলা এড়াতে এমনটি করতেন পপসম্রাট।

এতে তারা বাড়তি যে সুবিধা পেতেন, বাবার সঙ্গে বাইরে বেরুলে সাধারণ মানুষের মতো ঘুরে বেড়াতে পারতেন। তাদের কেউই চিনত না। তবে ওই নেকাবের একটা অসুবিধাও আছে। এটা খুব অস্বস্তিকর। বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্যারিস বলেন, বাবা হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ। চমৎকার রান্নার হাত ছিল।

সময়-সুযোগ হলেই রান্না করতেন আমাদের জন্য। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে খুবই পছন্দ করতেন। যখন তিনি আমাদের সঙ্গে সময় কাটাতেন তখন মনেই হতো না তিনি এতবড় সেলিব্রেটি ছিলেন।

আজকের তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় মডেল প্যারিস। ইনস্টাগ্রামে তার এক কোটিরও বেশি অনুসারী আছে। একজন নারী হিসেবে প্যারিস মনে করেন, নারীবাদ আপনাকে আপন পথে নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ করে দেবে।

তবে ভাবার বিষয় আপনাকে তা আরও বেশি রক্ষণশীলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে না তো। মানুষ সুন্দর। আপনার কী খুঁত আছে, সেটা বিবেচ্য নয়। প্রত্যেকেই নিজের মতো করে সুন্দর। আর নিজের মতো করেই সেই সৌন্দর্য প্রকাশ করতে হবে।

ইতিমধেই প্যারিস জ্যাকসনের প্যারিসে অবকাশযাপনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকটা সময় ধরেই এই মডেল নানা কারণে ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে।

মানসিক বিষণ্ণতা আর অবসাদের কারণে প্যারিস আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। এমন খবর গণমাধ্যমে ছড়িয়েছিল। তাকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালেও দেখা যায়। হাতে ব্যান্ডেজ অবস্থায় ছবিও ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সুস্থ হয়ে প্যারিস সেসবকে নিছক গুজব বলে প্রমাণ করেন। বাবা মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্যারিসের জীবনকে বিচলিত করে। প্রয়াত মাইকেল জ্যাকসনকে ঘিরে ছড়ানো অভিযোগ প্যারিসকে যন্ত্রণা দেয়।

বলতে গেলে বাবার মৃত্যুর পর নিজেকে সবকিছু থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। সবশেষ গত সপ্তাহে ইনস্টাগ্রামে নিজের একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, আমার দুর্লভ সেই হাসি। কারণ যার সঙ্গে আছে নাড়ির টান, আমি আছি সেই শহরে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী ও মডেল মনে করেন, প্রতিটি মানুষ নিজের মতো সুন্দর। আর তা সে কীভাবে প্রকাশ করবে সেখানেই তার নিজস্বতা। জীবনের কঠিন সময়ে একাকিত্ব অনুভব করা যায়। একটি ঘটনাই জীবনকে ওলোট-পালোট করে দেয়। যার ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তখন তা সামলে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই সার্থকতা। সে চেষ্টাই করতে হয় অবিরত।


শর্টলিংকঃ