সরকারি জীপের তেলে চলে বিএমডিএ’র প্রকৌশলীর ব্যক্তিগত কার


নিজস্ব প্রতিবেদক :

নওগাঁর রাণীনগরের বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সহকারি প্রকৌশলী তিতুমীর রহমান ব্যক্তিগত কারের জ্বালানির খরচ মেটাতে সরকারী গাড়ীর নামে তেল তুলছেন। এভাবেই লাখ লাখ টাকার তেল খরচ করেছেন তিনি।  তার জ্বালানী খরচের মাসিক প্রতিবেদন ও  গাড়ির তেল সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

 প্রকৌশলী তিতুমীর রহমান

ওই অডিও থেকে জানা যায়, অফিসের প্রয়োজনে গাড়ি না চললেও গত ১৮ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত জ্বালানী খরচ বাবদ ৯৬ হাজার ৯শ ১৭ টাকা ও মেরামত বাবদ ৩৩ হাজার ১শ টাকার ভাউচার করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিজেল ১ হাজার ৯৩ লিটার, মবিল ৩০ লিটার, গিয়ার অয়েল ৩ লিটার, ব্রেক অয়েল ১৬ লিটার এবং গাড়ির মাইল মিটার রিডিং ৩৬ হাজার ৬শ ৫১কিলোমিটার দেখিয়ে ভাউচার তৈরি করে সরকারী অর্থ লোপাট করা হয়েছে।

মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের তদারকির জন্য সরকারীভাবে একটি জিপ গাড়ি (রাজ-ক ৫৯২১) বরাদ্দ দেয়া হয়। গত প্রায় ৪বছর আগে জিপ চালক আবু সাইদ চুক্তিভিত্তিতে রাণীনগর জোনে যোগদান করেন। যোগদানের কিছু দিন পরই রাণীনগর জোনের সহকারি প্রকৌশলী তিতুমীর রহমান একটি প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো-গ ১৪-৪০৭৪) ক্রয় করেন। তারপর থেকেই শুরু হয় তেল চুরি। তিতুমীর ও চালক আবু সাঈদ প্রতি মাসে ওই গাড়ির তেল, মবিল, গিয়ার অয়েল ও ব্রেক অয়েল ক্রয়ের স্লিপ পার্শ্ববর্তী শাহী পেট্টোল পাম্প থেকে টাকার বিনিময়ে ক্রয় করে বিল ভাউচার তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

২০১৮-১৯ অর্থ বছরের জানুয়ারী মাসে দেয়া প্রতিবেদনে দেখা যায় জ্বালানী খরচ বাবদ ১লাখ ১৫হাজার ৬শ ৯৫টাকা, মেরামত বাবদ ৩৬ হাজার ১শ’ টাকা। জ্বালানী খরচের পরিমাণ ডিজেল ১ হাজার ২শ ৮২ লিটার, মবিল ৪০ লিটার, গিয়ার অয়েল ৩ লিটার, ব্রেক অয়েল ১৯ লিটার এবং গাড়ির মাইল মিটার রিডিং (ফেব্রেুয়ারী মাস পর্যন্ত) ৩৭ হাজার ৪শ ৩ কিলোমিটার দেখিয়ে ভাউচার তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ জানুয়ারী মাসে গাড়ী চলেছে ১ হাজার ৩শ ২৩ কিলোমিটার। 

২০১৮-১৯ অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারীতে দেয়া প্রতিবেদনে জ্বালানী খরচ বাবদ ১লক্ষ ২৭হাজার ৭শ ৪২টাকা, মেরামত বাবদ ৩৬হাজার ১শ টাকা। জ্বালানী খরচের পরিমান ডিজেল ১হাজার ৪শ ৪২ লিটার, মবিল ৪০ লিটার, গিয়ার অয়েল ৩ লিটার, ব্রেক অয়েল ২১ লিটার এবং গাড়ির মাইল মিটার রিডিং ৩৮ হাজার ১শ ৬৯ কিলোমিটার দেখিয়ে ভাউচার তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারী মাসে গাড়ী চলেছে ১ হাজার ১শ ২০ কিঃমিঃ। ফেব্রুয়ারী মাসের হিসাব দেখানো হয়েছে ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৭শ ৪২ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা ও স্থানীয়রা জানান, সদ্য বিদায়ী বিএমডির সহকারি প্রকৌশলী তিতুমীর রহমান প্রাইভেট কার কেনার পর থেকে সরকারি জিপ গাড়ি বাহিরে বের করতে দেখিনি। সরকারী গাড়িটি নষ্ট বলেও মাঝে মধ্যে প্রচার করা হতো। তিতুমীর রহমান তার নিজের গাড়িতেই চলাচল করতেন। তার বিরুদ্ধে শুধু সরকারি তেল চুরিই নয় বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম, কৃষকের প্রনোদনার অর্থ লোপাটেরও অভিযোগ রয়েছে।

তিতুমির ২০১২ সালে যোগদানের পর থেকে কৃষকের (নলকুপ অপারেটর) নামে সরকারী ভাবে বরাদ্দের ভর্তুকির টাকা একেক বছর এককেক অপারেটরের নামে ভূয়া বিল-বানিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। চলতি বছরে কৃষকের প্রনোদনার জন্য ৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও কোন কৃষকই সেই টাকা পায় নি। একই ভাবে গত ৮ বছরে প্রায় ৩২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সোমবার বিকেলে প্রকৌশলী তিতুমীর রহমানের সঙ্গে  মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে বলেন,  ‘আমার প্রাইভেট কার চলে গ্যাসে। কাজেই সরকারী গাড়ির নামে তেল কিনে প্রাইভেট কারে ব্যবহারের প্রশ্নই ওঠে না। আর আর গভীর নলকূপ মেইনটেনেন্সের জন্য যা বরাদ্দ আসে তা নিয়ম মতোই খরচ করা হয়েছে।

 

 


শর্টলিংকঃ