সরোয়ারকে বাঁচাতে ‘অদম্য’ রাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা


সুব্রত গাইন, রাবি:

বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম সারোয়ার। বাবা নেই, মধ্য-বিত্ত পরিবারের ছয় ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় সে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মতিহারের সবুজ চত্বরে। প্রথম বর্ষ কোনো রকম পার করলেও তারপর স্বপ্ন ভঙ্গের দ্বার প্রান্তে পৌঁছানোর খবর শুনে। ধরা পড়ে কিডনিজনিত রোগ।

 

আর্থিক অনটনের কারণে করা হয়নি উন্নত চিকিৎসা। যার ফলে দুইটি কিডনিই প্রায় বিকল হয়ে পড়েছে। তবে হাল ছাড়েননি সহপাঠীরা।

দৌড়ে বাড়াচ্ছেন এক শহর থেকে অন্য শহরে। লক্ষ্য একটাই বন্ধুকে বাঁচাতে হবে। এমনকি বন্ধুকে বাঁচাতে বন্ধুরা পরিহার করেছে একবারের আহার। আর সেই আহারের টাকা সঞ্চিত করছে একটা স্বপ্নকে বাঁচাতে।

রাজশাহীতে যে সহপাঠীরা আছেন থেমে নেই তারা। বন্ধুকে বাঁচাতে অদম্য বন্ধুরা আটটি দলে ভাগ হয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সাহায্যের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন।

রাজশাহীর পদ্মার পাড়ে, তালাইমারি, সাহেববাজার, কাটাখালি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কাজলা, বিনোদপুর, পুঠিয়াসহ পুরো রাজশাহী চষে বেড়াচ্ছেন বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য।

কেউ বা নাটোরে, আবার কখনও বা চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, সারোয়ার সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন একবেলা না খেয়ে খাবারের টাকা জমিয়ে রাখবেন।

এই পর্যন্ত বন্ধুকে বাঁচাতে তারা সংগ্রহ করেছে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। তবে সারোয়ারের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ১২ লক্ষ টাকা।

গত ১৯ মার্চ চিকিৎসার জন্য সারোয়ারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে ইউরোলজিস্ট এটিএম আমানুল্লাহর অধীনে ৫০১ নম্বর বেডে আপাতত চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ঢাকায় সারোয়ারের পরিবারের তিন সদস্যের সঙ্গে গিয়েছিলেন তিনজন সহপাঠী। তবে বন্ধুকে বাঁচাতে প্রয়োজন টাকার তাই তারা আবার ছুটে এসেছেন রাজশাহী। দ্বারে দ্বারে ঘুরে সংগ্রহ করছে টাকা।

গোলাম সারোয়ারের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সারোয়ারের বাড়ি নওগাঁ জেলার বদলগাছীতে। তাঁর বাবা মারা গেছেন অনেকদিন আগে। বাড়িতে আছেন নিজের মা ও দুই ভাই। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

সরোয়ারের এই বন্ধুরা ছুটে বেড়াচ্ছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে

খোঁজ নিয়ে যায়, তিন বছর আগে আগে তাঁর মূত্রনালীতে সমস্যা দেখা দেয়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় কিডনির সমস্যা প্রকট হয়ে পড়ে। এখন দুইটি কিডনিই প্রায় বিকল হয়ে পড়েছে। সারোয়ারের সুস্থতার জন্য তার শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে অথবা নিয়মিত ডায়ালাইসিস চালিয়ে যেতে হবে।

কিন্তু নিয়মিত ডায়ালাইসিসের খরচ যোগানো তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। সারোয়ারের মাসহ তিনজন নিকটাত্মীয় তাঁকে একটি কিডনি দান করতে চান। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক জানিয়েছেন, মূত্রনালী সংক্রান্ত একটি অস্ত্রোপচার ও কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অন্তত ১২ লাখ টাকা প্রয়োজন।

সুস্থ অবস্থায় সরোয়ার

গোলাম সারোয়ারের এক বন্ধু শাহীন আলম এ বিষয়ে বলেন, ‘সারোয়ারের দুটি কিডনী নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার কিডনী প্রতিস্থাপনের জন্য প্রায় ১২ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। সেটাও কোন বিষয় ছিল না, যদি বন্ধুর বাবা বেঁচে থাকতো! তাই বন্ধুর বাবার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছি আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘তার চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন। যদি পজিটিভ কিছু হয় তাহলে দেশেই চিকিৎসা করা যাবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তার। আর তা না হলে দেশের বাহিরে চিকিৎসা করতে নিয়ে যেতে হবে।’

সারোয়ারের কয়েকজন বন্ধু বলেন, ‘আমরা এই কয়দিনে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছি। আপাতত এই টাকা দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেছি। আমার ফ্রেন্ডলিস্টে প্রবাসী বন্ধু, বড় ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি এবং আমাদের পরিচিত অনেকেই যারা প্রতিষ্ঠিত তাদের কাছে অনুরোধ করে বলছি সারোয়ারকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন, আমরা আমাদের সহপাঠীকে হারাতে চাই না!

এসময় তারা সবার কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, টাকা দিয়ে না পারলেও অন্তত বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করার কথা বলেন ! সারোয়ার অসুস্থতা নিয়ে ক্যাম্পাসে এসেছিল। তবে আমরা আশা করি, সে সুস্থ হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরবে।’

তাঁর পরিবার ও সহপাঠীরা সহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা- ০১৭৬৭৭৬৫৮২৫ (বিকাশ) ও ০১৯৩০৯১৯২৬৭৯ (ডাচ-বাংলা)।


শর্টলিংকঃ