সাকিবদের ভারত সফর অনিশ্চিত!


বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বিরুদ্ধে ডাকা ক্রিকেটারদের ধর্মঘট শেষ হওয়ার পর পাঁচদিন পার হয়েছে ইতোমধ্যে। এরই মধ্যে উপরে উপরে মনে হচ্ছে, ক্রিকেটারদের সঙ্গে সম্পর্ক বেশ ভালো হয়ে গেছে বিসিবির। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক দাবি-দাওয়াও বাস্তবায়ন শুরু করেছে বিসিবি।

কিন্তু আসলেই কি তাই? ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিসিবির সম্পর্ক কি সত্যিই ভালো যাচ্ছে? কারণ দিন যত যাচ্ছে, ততই দূরত্বটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে।

ধর্মঘট শেষ হওয়ার পর জাতীয় দলের অনুশীলনে তিনদিনের মধ্যে দুদিনই অনুপস্থিত সাকিব আল হাসান। বিসিবি সঠিক কোনো কারণই দেখাতে পারেনি কেন সাকিব অনুশীলন মিস করলেন। এছাড়া রোববারের প্রস্তুতি ম্যাচও কেন খেললেন না, তার কারণ হিসেবে নাকি কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোকে সাকিব মেসেজ পাঠিয়েছেন, ‘অন্য খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দেয়ার জন্য।’ তবে জানা গেছে, সাকিবের নাম নাকি তালিকায় ছিল, যদি তিনি খেলেন- এ ধারণায়।

তবে এসব কিছুই নয়, সাকিবের সঙ্গে বোর্ডের দূরত্বের কারণটা ভিন্ন। এমনকি আজ বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তো শঙ্কাই প্রকাশ করেছেন যে, ‘সাকিব আল হাসান তো ভারত সফরেও না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

ওই সাক্ষাৎকারে বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার ভারত সফরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিশেষ করে সাকিব আল হাসানের নামই উল্লেখ করেছেন তিনি। আগামী বুধবারই ভারত সফরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ দলের। ইতিমধ্যে ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন। স্ত্রী সন্তানসম্ভবা বলে ভারত সফরে যাচ্ছেন না তামিম ইকবালও।

সাক্ষাৎকারে পাপন বলেন, ‘এখন সফরে যাওয়ার আগ মুহূর্তে যদি শুনি আর কেউ যাবে না, তাহলে কেমন লাগবে? আমার তো বদ্ধমূল ধারণা যাবে না এবং এমন এক সময় বলবে, যখন আমাদের কিছু করার থাকবে না।’

সাকিবের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করে বিসিবি সভাপতি জানান আরও অনেকে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হয়তো। যদিও তাদের নাম উল্লেখ করেননি তিনি। বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘সাকিবকে ডেকেছি। দেখি ও কী বলে। আরও অনেকে হতে পারে। আমি জানি না কারা। তবে তথ্য ছিল ওরা যাবে না।’

যদি শেষ মুহূর্তে কয়েকজন বলে যে সত্যি সত্যি তারা যাবে না ভারত সফরে। তখন কি করবেন বিসিবি সভাপতি? এ নিয়ে কিছুটা অসহায়ত্বও প্রকাশ করতে দেখা গেছে তাকে। তিনি বলেন, ‘এখন তো ঘুরে গেছে পরিস্থিতি। ওরা হয়তো ভাবেনি, এত তাড়াতাড়ি সব শেষ হয়ে যাবে। আমি কোনো বিশ্বস্ত সূত্র থেকে শুনে বলছি না। তবু ৩০ তারিখ যদি ওরা বলে যাবে না, তখন কী করব? তখন তো পুরো কম্বিনেশন বদলাতে হবে। আমি তখন অধিনায়ক কোথায় পাব! এদের নিয়ে আমি কী করব বলেন?’

বিসিবি সভাপতি দাবি করেন, ধর্মঘট ডেকে ভারত সফরটাকেই বানচাল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘ভারত সফরের এখনো আপনারা কিছুই দেখেননি। দেখেন না কী হয়। আমি যখন বলেছি, এটার মধ্যে একটা ষড়যন্ত্র আছে…। আপনারা আমাকে এত বছর ধরে চেনেন, কখনো ভুল বা মিথ্যা বলেছি? এ রকম কথা যদি আমি বলে থাকি, নিশ্চয়ই এটার মধ্যে কিছু একটা আছে। আমার কাছে তথ্য ছিল যে ভারত সিরিজ বানচাল হবে।’

বিসিবি সভাপতি মনে করেন, জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের অনেকেই খেলতে চায় না। তামিম ইকবালের নাম উল্লেখ করেই তিনি অভিযোগটা তুললেন। পাপন বলেন, ‘আমরা খেলোয়াড়দের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ায় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটাররা খুশি হয়েছে জানি। কারণ, খেলা হবে, ওরা তো খেলতে চায়। কিন্তু এটা কি ওখানে যারা ছিল, সবাই চায়? তামিম আমাকে প্রথমে বলেছিল ও ভারতের শেষ টেস্টটা খেলতে চাইছে না, কারণ ওই সময় ওর বাচ্চার ডেলিভারি। খেলোয়াড়দের সঙ্গে মিটিং শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তামিম আমার রুমে গিয়ে বলল, ‘আমি যাব (ভারতে) না।’ আমি বললাম, ‘মানে কি, তোমার সঙ্গে তো কথা হলো শেষেরটায় থাকবে না। তাহলে এখন যাবা না কেন?’ ও তবু বলল, ও যাবে না।’

গ্রামীণফোনের সঙ্গে বিজ্ঞাপন চুক্তির বিষয়ে ইতিমধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে সাকিব আল হাসানকে। এ বিষয়ে সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হলে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘খেলোয়াড়দের আমরা বলেছিলাম, ওরা কোনো টেলকোর সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে না। যেন সামনের বছর টেলকোগুলো টিম স্পন্সরের দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। তবু জেনেশুনে কি সাকিব এই বেআইনি কাজটা করতে পারে? আমি কি যা খুশি তা-ই করতে দেব ওদের? সময়টাও দেখুন! জানুয়ারিতে আমি নতুন স্পন্সরের দরপত্রে টেলকোকে আর পাব না। বা এলেও ওরা কম টাকা দিতে চাইবে। এভাবে যে আমাদের ফাঁদে ফেলল, এতে ক্ষতিটা কার? এতে শুধু একজন খেলোয়াড় লাভবান হলো, কিন্তু আমার ক্রিকেট দলের কী হবে?’

সাকিবকে চুক্তি প্রত্যাহার করতে বলবে কি না বোর্ড, এ প্রশ্নের জবাবে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘ওকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ওর কোনো ব্যাখ্যা থাকলে সেটা আগে শুনি।’


শর্টলিংকঃ