সাপাহারে করলা চাষে অনেকেই স্বাবলম্বী


প্রদীপ সাহা,সাপাহার (নওগাঁ):

নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় আমচাষীগণ এবছর আম চাষে যেমন এক বিপ্লব ঘটিয়েছেন ঠিক তেমনটাই করলা চাষ করে অনেক কৃষকগণ স্বাবলম্বী হয়েছেন।রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবারাহ হওয়ায় লাভের মুখ দেখছে করলা চাষীরা। করলা বিক্রি করে অনেকেই এখন স্বচ্ছল ভাবে হাসি-খুসি জীবন যাপন করছে।

বেশ কয়েক বছর আগেথেকেই এই উপজেলার চাষীরা করলা সবজি চাষে উৎসাহীত হয়ে তাদের হাইব্রীড আম বাগানে গাছের ফাঁকে ফাঁকে সাথী ফসল হিসেবে করলা চাষ করে স্থানীয় বিভিন্ন হাট বাজারে কিক্রি করে সংসারের খরচ মিটিয়ে কিছু টাকা লাভ করত। পরবর্তীতে করলা চাষের খবর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বেশ কিছু দিন ধরে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থান হতে কাঁচা তরিতরকারীর ব্যবসায়ীরা ছুটে চলে আসেন সাপাহারে।

পরবর্তীতে এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলার করলা চাষীদের সেন্টার হিসেবে সাপাহার-তিলনা পাকা সড়কের বাহাপুর মোড়ে গড়ে ওঠে মৌসুমী প্রতি দিনের জন্য ৩/৪ঘন্টার এক অস্থায়ী বাজার।

ভোর হলেই বিভিন্ন এলাকার করলা চাষীরা তাদের উৎপাদিত করলা নিয়ে চলে আসে এই বাজারে এবং ক্রেতারা তাদের নিকট বিভিন্ন দামে ক্রয় করে মিনি ট্রাক যোগে সকাল ১০টার মধ্যেই রওয়ানা হয়ে যায় নিজ গন্তব্যে। বর্তমানে প্রতি মন করলা ১হাজার টাকা থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় হয়তো বাজার কিছুটা বৃদ্ধি পবে বলেও অনেক চাষী মনে করছেন। প্রতিবছর আগষ্ট এর ১৫তারিখ হতে অক্টোবরের ১৫/২০তারিখ পর্যন্ত চলে এই মৌসুমী অস্থায়ী বাজার। আমের পরে সবজি চাষেও এবার রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ চিনবে সাপাহারকে এমনটাই মনে করছেন উপজেলার অভিজ্ঞ কৃষকগণ।

বুধবার সকালে সরেজমিনে ওই বাজারে গিয়ে প্রতি ১মন করল্যা এক হাজার থেকে বারশ’ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। করল্যার অস্থায়ী এই বাজারে এসে ঢাকার কওরান বাজারের আনোয়ার হোসেন নামের এক সবজি ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তিনি জানান যে, সাপাহারের করলা সবজির গুনগত মান ভাল ও এখান থেকে করলা কিনে লাভ ভাল হওয়ায় তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে এখানকার করলা রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজার সহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছেন।

এলাকার স্থানীয় করলা চাষী আনারুল ইসলাম, ছয়ফুল ইসলাম ও আব্দুল মালেক সহ বেশ কিছু কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানান যে, অস্থায়ীভাবে উপজেলা সদরের বাহিরে এই স্থানে করলার বাজার গড়ে না উঠলে এখানকার চাষীরা এই হারে করলা চাষাবাদ করতেন না। বর্তমানে তারা সহ অনেকেই এখন করলা চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন।

এই বাজারের ক্রেতা বিক্রেতাগন জানান, প্রতিদিন এই বাজার হতে প্রায় ১শ’ থেকে ১৫০টন করলা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে।এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মজিবুর রহমান এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে করলা চাষ এ উপজেলায় চাষীদের মাঝে এক নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে উপজেলার অনেকেই এখন দেশী, হাইব্রীড, সোনামুখী সহ বিভিন্ন জাতের করলা চাষাবাদ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।

কৃষি অফিসের তথ্য মতে এবছর উপজেলায় ১শ’৫০ থেকে ২শ’ বিঘা জমিতে করলা চাষাবাদ হয়েছে। করল্যা ক্ষনস্থায়ী ফসল হলেও এবারে এর ব্যাপক ফলন হয়েছে দামও রয়েছে কৃষকের মনের মত। আবহাওয়া আর কিছু দিন চাষীদের অনুকুলে থাকলে করলা চাষের মেয়াদ বৃদ্ধি পাবে বলেও কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সাপাহার উপজেলার আমচাষীগণ এবছর আম চাষে যেমন এক বিপ্লব ঘটিয়েছেন ঠিক তেমনটাই করলা চাষেও বিপ্লব ঘটাবে বলে করলা চাষী ও উপজেলা কৃষি দপ্তর মনে করছেন।


শর্টলিংকঃ