সাফারি পার্কে মারা যাচ্ছে বাঘ, ক্যাঙ্গারু, জিরাফ


রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, অব্যবস্থাপনায় গাজীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মারা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রাণী। এরই মধ্যে মারা গেছে বাঘ,ক্যাঙ্গারুর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে, ময়ূর বেস্টনি থেকে উড়ে গেছে অনেক ময়ূর। একের পর এক মারা গেছে জিরাফসহ নানা প্রাণী। কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকবল আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পার্কটির এ অবস্থা।


জানা গেছে, ২০১৩ সালে সাফারি পার্কটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি বাঘ মারা গেছে। চলতি বছরের ১২ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে পার্কের ভেতর বাঘের নির্ধারিত বেষ্টনীর নির্জন একটি জায়গায় তিন বছর বয়সী একটি বাঘকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায় কর্তৃপক্ষ। এর এক সপ্তাহ আগে জীবন্ত একটি গুইসাপ খেয়ে ফেলে স্ত্রী বাঘটি। এর আগে আরও চারটি বাঘের করুন মৃত্যু হয়েছে এখানে। বর্তমানে পার্কের কোর সাফারিতে বাঘ রয়েছে ১২টি।

চলতি বছরের প্রথম দিকে ক্যাঙ্গারু বেস্টনির সর্বশেষ দুটি স্ত্রী ক্যাঙ্গারু মারা যায়। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেছে পার্কের বেষ্টনিতে ক্যাঙ্গারুর অস্তিত্ব। এছাড়া অরিক্স, জিরাফ ও ব্ল্যাক ওয়াইল্ড বিস্টও সঙ্গী বিহীন হয়ে পড়েছে। ১২টি জিরাফের মধ্যে টিকে আছে পাঁচটি স্ত্রী জিরাফ। অরিক্স ও জিরাফ পরিবারে এখন কোনো পুরুষ সদস্য নেই। ছয়টি ব্ল্যাক ওয়াইল্ড বিস্ট আনা হয়েছিল। বর্তমানে টিকে আছে একটিমাত্র পুরুষ ব্ল্যাক ওয়াইল্ড বিস্ট।

রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে শেয়াল-কুকুরের পেটে গেছে ব্ল্যাক সোয়ানের মতো প্রানীও। এছাড়া অন্তত ১০টি জেব্রা, ১০-১২টি হরিণ মারা গেছে গত কয়েক বছরে। কুকুরের আক্রমণে একটি চিত্রাহরিণের মৃত্যু হয়েছে।

ময়ূর বেস্টনি, ধনেষ বেস্টনির অবস্থা আরও করুণ। বেস্টনির বিভিন্ন স্থানে ছিড়ে গেছে নেট। ফলে লোকালয় এবং গভীর অরণ্যে আশ্রয় নিচ্ছে অনেক ময়ূর। উড়ে গেছে অনেক পাখি। পার্কের কর্মীরাও বলছেন, নেট ছিড়ে যাওয়ার কারণে ময়ূর ও পাখিরা গভীর অরণ্যে উড়ে চলে গেছে।

পার্কে প্রকৃতি বীক্ষন নামে যে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে তা বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। ফলে লাখ লাখ টাকা খরচে নির্মিত অসাধারণ এই প্রকৃতি বীক্ষণ দর্শন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পর্যটকরা। এছাড়া অনেক অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ অর্ধেক করে ফেলে রাখা হয়েছে।

দর্শনার্থীদের অভিযোগ, পার্কে রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। কোর সাফারি পার্কের ভেতরে অনেক সময় বাঘ ও সিংহের দেখাই মেলে না, দেখা মেলেনা জিরাফের। একজন দর্শনার্থী বলেন, ‘এখানে আসার পর বিভিন্ন জায়গায় আমাকে টিকিট কাটতে হয়, এটা একটা হয়রানি। একবারে টিকিট কাটতে পারলে সেটি আমার জন্য ভাল। অথচ টিকিট কাটার পর এখানে দেখার মতো তেমন কিছু নেই।’

তবে পার্কের দায়িত্বে থাকা সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান বলন, ২০১৩ সালে পার্কটি প্রতিষ্ঠার পর রক্ষণাবেক্ষনের কাজ তেমন হয়নি। এখন অনেকগুলো কাজ শুরু করা হয়েছে। ময়ূর বেস্টনি, বাঘের শেড, সিংহের শেড নির্মাণসহ বেশ কিছু শেড নির্মাণ প্রক্রিয়া চলছে, অনেকগুলো টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আছে। এ ব্যাপারে সরকার আন্তরিক এবং আগামী ৬ মাসের মধ্যে ছোট খাট যেসব সমস্যা রয়েছে তা দূর হবে বলে আশা করছি।

কাজের ক্ষেত্রে লোকবল একটি বড় সমস্যা জানিয়ে তিনি বলেন, পার্কটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অন্তত একশ’ লোকবল প্রয়োজন। সেখানে মাত্র ২৮ জন দিয়ে চলছে বিশাল পার্কটি। এছাড়া ৩০ জনকে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে বেতন দেওয়া হয়। এসব সমস্যা সমাধানে আমরা কর্তৃপক্ষকে বলেছি। এছাড়া নিয়োগ বিধি নিয়ে একটি সমস্যা আছে সেটি সমাধান হলে আমরা আরো জনবল পাব বলে আশা করছি।

চলতি বছরেও সাফারি পার্ক থেকে সরকার প্রায় ১০ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। রাজস্ব থেকেই প্রায় ৫ হাজার প্রাণীর খাবারের ব্যয় বহন করা হচ্ছে। প্রতিবছর অন্তত ৩ কোটি টাকা খাবার বাবদ খরচ করতে হয় বলে জানিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। তবে পার্কের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতা দূর করা গেলে এবং কর্তৃপক্ষ প্রাণিদের রক্ষণাবেক্ষনে যত্নবান হলে সরকারের আরো রাজস্ব বাড়বে বলে মনে করেন দর্শনার্থীরা।


শর্টলিংকঃ