সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে আসছে আইন


ইউএনভি ডেস্ক:

জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ও অন্যান্য) নিয়ন্ত্রণ আনতে চায় সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব মাধ্যমে গুজব প্রচারসহ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এমনকি ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল খুলে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।


এ ধরনের অপরাধ কমানো ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশেই ওইসব সোশ্যাল মিডিয়ার আঞ্চলিক অফিস স্থাপনের বিধান রেখে কঠোর আইন করতে যাচ্ছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। শিগগিরই প্রস্তাবিত আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন বিষয় ছড়ানো হয়। পাশাপাশি নানা ধরনের গুজব প্রচারও করা হয় অনেক সময়। এসব অপরাধ ঠেকাতে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত আইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দেশে সেগুলোর অফিস স্থাপনেরও বিধান রাখা হবে। ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, তুরস্ক এ ধরনের আইন করেছে। উন্নত বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে এই আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।’

মন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত নতুন আইনে পুরো সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে আমরা কাজ করছি। আইনে ডেটা নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্য গোপনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮’ প্রথম আইন, যেটা ডিজিটাল নিরাপত্তাকে অ্যাড্রেস করে। আমরা যে সময় এ আইনটি করি সে সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় এত অপরাধের ঘাঁটি ছিল না। এখন মনে করছি সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ মাধ্যমে গুজব প্রচারসহ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। বিদেশী প্রতিষ্ঠান ও বিদেশ থেকে পরিচালিত হওয়ার কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় সংঘটিত অপরাধ দমনে আমাদের স্থানীয় আইন সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে পারি না।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সোশ্যাল মিডিয়া নিজ দেশে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন নতুন আইন করেছে বলে জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী। আমরাও বিটিআরসিকে বলেছি। আশা করছি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তারা খসড়া তৈরি করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচার, গুজব রাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের হুমকি। নিজস্ব আইন না থাকায় আমরা অপরাধীর তথ্যও পাই না। প্রস্তাবিত নতুন আইনের এখনও নাম দেয়া হয়নি বলেও জানান মন্ত্রী।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এ ধরনের সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন নারী। জঙ্গিরাও এই মাধ্যম ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ ও নানা হুমকি দিচ্ছে। জঙ্গিবাদ এবং ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানোর অভিযোগে সম্প্রতি ফেসবুকের ৩০টি পেজ ও আইডিকে চিহ্নিত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

তারা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দিয়ে সহায়তা চেয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ফেসবুক পেজের মাধ্যমে নানারকম ধর্মীয় উগ্র মতবাদ প্রচার, জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা, জিহাদের ডাকসহ রাষ্ট্রবিরোধী নানারকম অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

জঙ্গিরা এখন অনলাইন বা ইন্টারনেটকে তাদের যোগাযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এসব পেজের অ্যাডমিন বা ব্যবহারকারীরা বেশির ভাগই বিদেশে অবস্থান করে। ফলে তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। এই মাধ্যম ব্যবহার করছে প্রতারকরাও।

এছাড়া ইউটিউবে অ্যাকাউন্ট খুলে নিয়মিত ভিডিও আপলোড দিয়ে অনেকেই অর্থ উপার্জন করেন। সুযোগ পেয়ে অনেকেই এর অপব্যবহারও করেছেন। অন্যের ভিডিও নিজের চ্যানেলে আপলোড করে দেয়া, অ্যাডাল্ট ভিডিও পোস্ট করা, ভিউ বাড়ানোর জন্য আপত্তিকর শিরোনাম কিংবা থাম্বনেইল এ অশ্লীল ছবি ব্যবহার করা ইত্যাদি।

এসব বিষয়ে সরকারের শীর্ষ মহলের চিন্তার পর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাতেও আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির প্রধান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল খুলে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচার করা হয়। এগুলোতে আবার বিজ্ঞাপন আছে। কারা কিভাবে এসব বিজ্ঞাপন দেয় যাচাই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। লাইসেন্স-পারমিশন ছাড়াই তারা এসব চালাচ্ছে। এগুলো দেখার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ করেছি। এসব (ইউটিউব) এত বেশি হচ্ছে, কে কোন দিক দিয়ে কী বলছে জানে না। সাইবার অপরাধগুলো অ্যালার্মিং হয়ে গেছে। ভারতে সবগুলোর (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) হেডকোর্য়ার্টার (কার্যালয়) আছে। আমাদের দেশে নেই। তাই আমরা বাংলাদেশে যাতে এগুলোর হেডকোর্য়ার্টার করা হয় সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা বন্ধ করতে চাই না। নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। জবাবদিহির মধ্যে রাখতে চাই।’


শর্টলিংকঃ