সালমানের নায়িকারা


১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে দুই নতুন মুখ সালমান শাহ ও মৌসুমীকে উপহার দেন। ছবিটি বলিউডের ‘কেয়ামত ছে কেয়ামত তাক’ ছবির বাংলাদেশি ভার্সন।

এরপর সালমানের সঙ্গে মৌসুমীকে দেখা যায় ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অন্তরে অন্তরে ও ‘স্নেহ’ ছবিতে। ১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ ‘দেনমোহর’ ছবিতে সালমানের বিপরীতে মৌসুমীকে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্বও ছিল। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে মৌসুমীর সঙ্গে আর সালমানকে দেখা যায়নি।

ঢাকাই সিনেমার অন্যতম সফল জুটি সালমান শাহ ও শাবনূর। প্রয়াত চিত্রপরিচালক জহিরুল হক ১৯৯৪ সালে সালমানের সঙ্গে শাবনূরকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘শুধু তুমি’। এ ছবির সাফল্যের পর শাবনূরের সঙ্গে সালমানের জুটি হয়ে যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো।

এরপর সালমানের বিপরীতে শাবনূর অভিনয় করেন ‘সুজন সখী’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘মহামিলন’, ‘বিচার হবে’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘জীবন সংসার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু, ‘বুকের ভিতর আগুন’ ছবিতে। সালমানের জীবনের শেষ ছবিও ছিল শাবনূরের সঙ্গে।

এ নায়কের মৃত্যুর পর আর কারও সঙ্গেই যুৎসই জুটি গড়ে ওঠেনি শাবনূরের। মৃত্যুর আগে সালমানের সঙ্গে শাবনূরকে নিয়ে শুটিং চলছিল এবং তারা চুক্তিবদ্ধ ছিলেন ‘নয়নমণি’, ‘তুমি শুধু তুমি’, ‘মন মানে না’, ‘কুলি’, ‘অধিকার চাই’, ‘মধু মিলন’, ‘কে অপরাধী’, ‘শেষ ঠিকানা’ ছবিগুলোর। সালমানের মৃত্যুর পর এসব ছবিতে রিয়াজ, ওমর সানী, অমিত হাসানকে দেখা যায়।

১৯৯৪ সালের শেষর দিকে নির্মিত জীবন রহমান পরিচালিত ‘প্রেম যুদ্ধ’ ছবিতে সালমানের বিপরীতে অভিনয় করেন লিমা। পরের বছর দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘কন্যাদান’ ছবিতেও দেখা যায় এই জুটিকে।

চিত্রনায়ক নাঈমের সঙ্গেই ছিল শাবনাজের জুটি। কিন্তু ১৯৯৫ সালে হাফিজউদ্দিন ‘আঞ্জুমান’ ছবিতে সালমানের বিপরীতে শাবনাজকে কাস্ট করেন। ফলাফল, সুপারহিট। পরবর্তীতে ‘আশা ভালোবাস’ ও ‘মায়ের অধিকার’ ছবিতেও সালমানের বিপরীতে শাবনাজকে দেখা গেছে।

১৯৯৬ সালে মালেক আফসারী পরিচালিত ‘এই ঘর এই সংসার’ ছবিতে সালমানের বিপরীতে অভিনয় করেন নবাগতা বৃষ্টি। এটিই ছিল এ নায়িকার প্রথম ও শেষ ছবি।

রানা নাসের পরিচালিত ‘প্রিয়জন’ ছবিতে সালমানের বিপরীতে অভিনয় করেন শিল্পী। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালে। এ ছবিতে চিত্রনায়ক রিয়াজকেও দেখা গেছে।

ছটকু আহমেদের পরিচালনায় ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ছবিতে সালমানের বিপরীতে অভিনয় করেন শাহনাজ। ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবিটি সালমানের ক্যারিয়ারের একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল।

কাজী মোর্শেদের পরিচালনায় ‘শুধু তুমি’ ছবিতে সালমানের বিপরীতে অভিনয় করেন শ্যামা।

এ ছাড়া ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ছবিতে শাবনাজের পাশাপাশি সহনায়িকা হিসেবে সাবরিনা ও ‘আনন্দ অশ্রু’ ছবিতে শাবনূরের পাশাপাশি সহনায়িকা হিসেবে কাঞ্চিকেও দেখা গেছে।

সালমান শাহ প্রসঙ্গে দুই নায়িকা

মৌসুমী : সালমান শুধু একজন অভিনেতাই ছিল না, সে ছিল আমার শৈশব, কৈশোরের বন্ধু। আমাদের একসঙ্গে পথচলা ছোটবেলা থেকেই। মাঝপথে বিরতির পর ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি দিয়ে আমাদের বন্ধুত্ব আবার নতুন করে শুরু হয়। আজও আমি যখন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ কিংবা ‘অন্তরে অন্তরে’ ছবির কোনো গান টিভিতে দেখি, মনের অজান্তেই চোখের সামনে ভিড় করে সেই সময়ের স্মৃতি। এতটা বছর পরও তাকে ভুলতে পারিনি। হয়তো পারব না কখনও।

শাবনূর : সালমান শাহ আমাকে পিচ্চি বলে ডাকত। আমরা দুজনেই শুটিংয়ের ফাঁকে দুষ্টুমি করতাম। একদিন আমার মন ভীষণ খারাপ ছিল। গোমড়া মুখে সেটে বসেছিলাম। সালমান জানতে চাইল, কী হয়েছে? আমি যখন কৌশলে এড়িয়ে গেলাম ও বুঝতে পারল। মন খারাপের কারণ বলতে চাচ্ছি না। এরপর শুরু হল ওর খুনশুটি।

আমাকে নানা ধরনের গল্প আর এমনভাবে অঙ্গভঙ্গি করেছে, যা দেখে না হেসে পারলাম না। এখনও মন খারাপ হলে সালমানের কথা মনে পড়ে- এই বুঝি ও এসে মনটা ভালো করে দেবে।


শর্টলিংকঃ