গ্রন্থমেলায় সাড়া ফেলেছে রাজশাহীর লেখকদের বই


নিজস্ব প্রতিবেদক :

পাঠক-প্রকাশক-লেখকের মিলনমেলা বসেছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে।  চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। প্রবীণ লেখকদের পাশাপাশি প্রতি বছরই তরুণ সৃষ্টিশীল নবীন লেখিয়েরা তাদের উপস্থিতি জানান দেন নতুন বই প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বইমেলায় বই প্রকাশে পিছিয়ে নেই রাজশাহীর তরুণ লেখকরাও।

এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় রাজশাহীর তরুণ লেখক ইলিয়াস আরাফাত প্রকাশ করেছেন তার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ জোনাকী ফুল। উদীয়মান কবি মৌসুমী মম কবিতার বই ‘নৈসর্গিক বৃষ্টি বিলাস’ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া যরীন মুক্তির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে হায়ায় অবলীলায়’ আর কাঁকন কাজীর প্রথম গল্পগ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে ‘নস্টালজিয়া’।

‘নস্টালজিয়া’ প্রকাশ করেছে সিঁড়ি প্রকাশন।  সেই দুরন্ত ফেলে আসা শৈশবকালের স্মৃতিতে রঞ্জিত কাঁকন কাজী রচিত ‘নস্টালজিয়া’ গ্রন্থ। বইটি যে একবার পড়বে সে তার আনন্দময় ফেলে আসা ছেলেবেলায় ফিরে যেতে বাধ্য। এই গ্রন্থে কাঁকন কাজী যেন শুধু নিজের শৈশবের কথা লেখেননি, তিনি লিখেছেন আমাদের সকলের শৈশবকালের কথা, আনন্দে পরিপূর্ণ দুরন্ত ছেলেবেলা- যা আমাদের নস্টালজিয়ায় নিয়ে যায়। লেখিকা এই গ্রন্থে তাঁর পরিবার ও ছোটবেলার বন্ধুসাথীদের কথা তুলে এনেছেন।তুলে এনেছেন কৈশোরে তাঁর দুরন্তপনার কথা, তাঁর তৎকালীন কচি মনের আবেগ- ভালোবাসার কথা এবং এমন কিছু মানুষকে আমরা তাঁর গ্রন্থে খুঁজে পাই, যাদের বর্ণনা কাঁকন কাজী যেভাবে দিয়েছেন দেখে মনে হয় তারা তো আমার অতি আপনজন। কাঁকন কাজী যেন আমাদের ছোটবেলার কথাই লিখেছেন, ঠিক যেমন হুমায়ূন আহমেদ লিখতেন প্রত্যেকটি মধ্যবিত্ত মানুষদের কথা।

নস্টালজিয়া গ্রন্থের কিছু উল্লেখযোগ্য চরিত্র হলো স্মৃতি, মুন্নি, পারভেজ, স্বপন মামা, টুকু মামা, লেখিকার বাল্যকালের বান্ধবি পুতুল, হেলাল-দুলাল চাচা, লেখিকার ছয় বোন এবং তাঁর পিতা-মাতা বিশেষ করে তাঁর মৃত পিতা কাজী আফতাব উদ্দিন আহমেদ। এই গ্রন্থে লেখক তাঁর মৃত পিতার প্রতি নিবিড় ভালোবাসা তুলে এনেছেন যা আমরা পাঠকেরাও অনুভোব করতে পারি। তিনি লিখেছেন তিনি তাঁর পিতার শরীর থেকে স্বর্গীয় ঘ্রাণ পেতেন যেটা আবার পাওয়ার জন্য তিনি ব্যাকুল। এই ব্যাকুলতার মধ্য দিয়েই আমরা পিতার জন্য লেখকের ভালোবাসাটা অনুভোব করতে পারি। এছাড়াও তিনি যখন হেসেছেন, তখন আমরা অনন্দিত হয়েছি। আর যখন তিনি কেঁদেছেন তখন

আমাদের মনেও উতলে উঠেছে রাশি রাশি কান্না। তাঁর লেখায় উঠে এসেছে তাঁর দাদু, পিতা ও তাঁর বাল্যসঙ্গী পুতুলের করুণ মৃত্যুর হাহাকার, যা আমরাও অনুভব না করে থাকতে পারি না। কারণ সেই হাহাকার শুধু লেখক কাঁকন কাজীর নয়, আমাদের সকলের রয়েছে। এভাবেই নির্দয় বাস্তবতাকে স্বীকার করে তিনি তিনি তাঁর বাল্যকাল কাটিয়েছেন যা আমাদের মনকে নয় আমাদের অভিজ্ঞতাকে স্পর্শ করে। কারণ এই বাস্তবতাকে কখনো কখনো আমাদেরকেউ হাসিমুখে মেনে নিতে হয়েছে। বইটি পওয়া যাচ্ছে ৫৯৭ নং স্টলে। 

এছাড়া এবার অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় প্রকাশিত হয়েছে তরুণ লেখক ও সাংবাদিক ইলিয়াস আরাফাতের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘জোনাকি ফুল’। ১৪টি ছোট গল্প নিয়ে গল্পগ্রন্থটি প্রকাশ পেয়েছে বইটি। একুশের বইমেলায় বইটি পাওয়া যাচ্ছে সৌহরাওয়ার্দী উদ্যানে বলাকা প্রকাশনের ৫৯৬ নম্বর স্টলে। তার গল্পগুলো জীবনের শিল্পিত রুপ থাকে। পাঠক যেখানে চরিত্রে চরিত্রে খুঁজে পান লুকানো বোধ, উপলব্ধি। ইলিয়াস আরাফাতের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সকালের অন্ধকার’ বইটিও পাওয়া যাচ্ছে বলাকা প্রকাশনের ৫৯৬ নং স্টলে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে জন্ম নেওয়া কবি মৌসুমী মম। রাজশাহী নগরে বসবাস। এবার তার প্রথম কবিতার বই ‘নৈসর্গিক বৃষ্টি বিলাস’ বইটি প্রকাশ পেয়েছে। নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র বইটি প্রকাশ করেছে। বইমেলায় বইটি পরিবেশন করছে সম্রাজ্ঞী প্রকাশনীর ৩০ নং স্টলে। মৌসুমী মম একজন মেধাবী কবি। আধুনিক কবিও বটে। তার প্রকাশের ভাষা, ছন্দ ও কারুকাজ আধুনিক। এটি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। তাঁর বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে ৫৬ টি কবিতা। এসব কবিতায় ফুটে উঠেছে নৈসর্গিকতা। ফুল, পাখি, নদী-অরণ্য নিয়ে ছন্দময় অক্ষর বিন্যাসে পাতার পরতে পরতে ফুটে উঠেছে ভালোবাসাও। যা সহজেই পাঠক মনে দোলা দিতে পারে। মৌসুমী মম উদীয়মান লেখক। লেখালেখির পাশাপাশি একজন সমাজকর্মীও। বর্তমানে তিনি রাজশাহী জজ কোর্ট প্র্যাক্টিস করছেন।

আরেকজন তরুণ কবি যেরীন মুক্তির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে হায়ায় অবলীলায়’। বইটিতে প্রেম, বিরহ, মানব মনের প্রকৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ এর কবিতা স্থান পেয়েছে। এ বইয়ে মোট ৫০টি কবিতা আছে। বইটি বলাকা প্রকাশন, স্টল নম্বর-৫৯৬ তে পাওয়া যাচ্ছে। নদী প্রকাশ থেকে বইটি প্রকাশিত হয়েছে।


শর্টলিংকঃ