ফসলী জমিতে অবৈধ পুকুর খননের হিড়িক 


মাহবুব হোসেন, নাটোর:

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, এ উপজেলায় চাহিদার অতিরিক্ত পুকুর খনন করা হয়েছে। এখন আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ আছি কিন্তু এভাবে তিন ফসলী জমিতে পুকুর খনন করা হলে একসময় খাদ্যে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

সিংড়ায় অবাধে চলছে পুকুর খনন। ছোট চৌগ্রাম এলাকা থেকে তোলা ছবি

চলনবিলে একসময় উত্তাল ঢেউয়ের গর্জনে ঘুম ভাঙ্গত বিলপারের বাসিন্দাদের। কিন্তু এখন আর আগের মতো সেই উত্তাল ঢেউ নেই। কারণ প্রভাবশালীদের দখলদারিত্ব ও অবৈধভাবে পুকুর খননে দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এই চলনবিল। একসময় এই বিলের ঐতিহ্য ও দেশীয় মাছ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করত। চোখ-মন ছুঁয়ে যেত অতিথি পাখির কলকাকলিতে।

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও বিলের মাঝে যত্রতত্রভাবে পুকুর খননের কারণে সংকুচিত হয়ে ঐতিহ্যবাহী চলনবিল তার যৌবন হারিয়ে ফেলেছে। হুমকির মুখে পড়েছে চলনবিলের মাছ ও জীববৈচিত্র।

নাটোরের সিংড়ায় তিন ফসলী জমিতে অবৈধ পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। এতে কমছে আবাদী জমির সংখ্যা। পুকুরের মাটি পরে নষ্ট হচ্ছে সড়কগুলো। উপজেলার কলম, চামারী, হাতিয়ান্দহ ও চৌগ্রাম ইউনিয়নে বেশ কিছু পুকুর খনন চলছে। তবে এসব অবৈধ খনন বন্ধে প্রশাসনের কোনো ভূমিকা লক্ষ করা যায়নি। প্রশাসনের নীরবতা জনমনে নানা প্রশ্নের জোগান দিচ্ছে।

চামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম মৃধা বলেন, চামারীর গুটিয়া বিলে একটি অবৈধ পুকুর খনন হচ্ছে, এই পুকুর খননে খাল বন্ধ হয়ে গেলে প্রায় ২ হাজার একর জমির বোরো, আমন, ইরি ধানসহ অন্যান্য ফসল আবাদে ব্যাপক ক্ষতি হবে। কৃষকদের আবাদী জমি নষ্ট হবে। আবাদ করার মত অবস্থা থাকবে না। জলাবদ্ধতার শিকার হবে কৃষি জমি।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, শুধু ২০১৮ সালেই উপজেলা ব্যাপী ৬৬ হেক্টর জমিতে ১৬৫টি পুকুর খনন করা হয়েছে। এ উপজেলায় আর পুকুরের প্রয়োজন নাই। এগুলোতেই ভালভাবে মাছ চাষ করলে মাছের চাহিদা পূরণ হওয়া সম্ভব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, এ উপজেলায় চাহিদার অতিরিক্ত পুকুর খনন করা হয়েছে। এখন আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ আছি কিন্তু এভাবে তিন ফসলী জমিতে পুকুর খনন করা হলে একসময় খাদ্যে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিংড়া সার্কেল) মীর আসাদুজ্জামান বলেন, অবৈধ পুকুর খননকারীদের তালিকা করা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধ করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো জানান, উপজেলার কয়েক জায়গায় অবৈধ পুকুর খনন বন্ধের জন্য এসিল্যান্ডকে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


শর্টলিংকঃ