সিকিমে প্যারাগ্লাইডিং : যেসব তথ্য কাজে লাগবে


সিকিমে প্যারাগ্লাইডিং নিয়ে আজকের আমার এ লেখা। সিকিম ভ্রমণ নিয়ে অনেকেই বিস্তারিত লিখেছেন, রিভিউ দিয়েছেন কিন্তু সিকিমে প্যারাগ্লাইডিং এর ব্যাপারে কাউকে তেমন কিছু লিখতে দেখিনি। তাই সিকিমে প্যারাগ্লাইডিং এর ব্যাপারে ভাবলাম বিস্তারিত কিছু তথ্য শেয়ার করা যাক।

গ্যাংটক প্যারাগ্লাইডিং

আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী গ্যাংটকে ৪ রাত থাকার কথা এবং লাচুং ১ রাত। সেই হিসেবেই এমজি মার্গে আমরা হোটেল নেই সেখানে আমরা ২ রাত ছিলাম এবং বাকী দুই রাত ছিলাম এমজি মার্গ থেকে টেক্সিতে ১০ মিনিটের দুরত্বে হিল ভিউ পাওয়ার জন্য বাজরা স্টেশনের কাছের এক হোটেলে।যাইহোক, পঞ্চম দিন আমরা সাংঙ্গু লেক ঘুড়ে এসে বাজরা স্টেশনের পাশেই একটি খাবার হোটেলে বসি লাঞ্চ করতে। বসেছিলাম জানালার পাশেই সেখান থেকে মোটামুটি পুরো গ্যাংটক শহরটা দেখা যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই চোখ আটকে গেলো আকাশে কিছু একটা উড়ছে তার উপর। হ্যা ঠিকই দেখছি প্যারাগ্লাইডিং হচ্ছে।

সিকিমে প্যারাগ্লাইডিং

এই জিনিশ দেখেই আমাদের একজন টিম মেম্বার মোটামুটি উতলা হয়ে গেছেন যেকোন ভাবেই হোক প্যারাগ্লাইডিং করতে হবে। তখন সময় ৪:৩২।সিকিমের গ্যাংটক এর আকাশে প্যারাগ্লাইডিংদ্রুত লাঞ্চ শেষ করেই খোজ নিতে বের হয়ে পরলাম কোথায় এবং কিভাবে প্যারাগ্লাইডিং করতে পারবো। কয়েকটা দোকানদারের সাথে কথা বললাম কেউই সঠিক তথ্য দিতে পারলোনা।

সিকিমে প্যারাগ্লাইডিং

চলে গেলাম গুগল মামার কাছে লিখে সার্চ দিলাম ‘ Sikkim paragliding ‘ সৌভাগ্যক্রমে তাদের অফিসিয়াল নামও এই নামেই ছিলো। গুগল থেকে তাদের নাম্বার নিয়ে কথা বলে নিশ্চিত হলাম কোথায় যেতে হবে এবং কিভাবে যেতে হবে। কথা শেষে ঠিক হলো আজ আর আমরা করতে পারবো না, পরদিন সকালে ৯ টায় করতে হবে।টেক্সি ঠিক করে নিলাম রিজার্ভ যাওয়া আসা সহ।

আরও পড়তে পারেন দার্জিলিং ভ্রমণে যা জানা জরুরি

পরদিন সকাল সকাল টেক্সি চলে আসলো হোটেলের সামনে। যেতে যেতে প্যারাগ্লাইডিংয়ের ব্যাপারে টেক্সি ড্রাইভার ভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছিলো কথায় কথায় উনি বললো – ৭০ কেজির বেশি কারো ওজন হলে সে এই রাইড দিতে পারবে না। তখনি মনের মধ্যে একটা ধাক্কা খেলাম এতো আশা নিয়ে আসলাম যদি না করতে পারি তাহলে কি হবে। আল্লাহর নাম নিতে নিতে চলে গেলাম। যাওয়ার পর প্রথমেই আমদের একে একে ওজন মাপতে শুরু করলো।

সিকিমে প্যারাগ্লাইডিং

আমি পায়ের জুতা খুলতে শুরু করলাম এটা দেখে তারা বলছে জুতা খুলতে হবে না। আমি তাদের বুঝাতে চেস্টা করলাম আমার ওজন বেশি হবে তাই জুতা খুলছি, তারা বারবার বলছে খুলতে হবেনা। মুখ গোমড়া করে উঠলাম ওজন মাপার মেশিনের উপরে।স্পষ্ট ভাবেই মিটারে উঠে গেলো ৯৩ কেজি। তাদের বললাম জুতা জ্যাকেট এগুলার জন্য বেশি ওজন আমার মুখ শুকিয়ে গেছে ততক্ষনে। আমার মুখ দেখে এক আপু বল্লো সমস্যা নেই রাইড দিতে পারবেন।

গ্যাংটক

সাথে সাথে আমি এক লাফ দিয়ে বন্ধুদের ওপর পরলাম ফাইনালি করতে পারছি। ফরমালিটি অনুযায়ী পুরোন করে ফেললাম তাদের নির্ধারিত ফর্ম যেখানে লিখা ছিলো অনেকটা এরকম প্যারাগ্লাইডিং করতে গিয়ে আমার কোন প্রকার দুর্ঘটনার কারনে মৃত্যু হয় তাহলে তারা দায়ী থাকবেনা। কে ভাবে তখন এসব নিয়ে পুরো দমে মনের মধ্যে এডভেঞ্চার কাজ করছে। কখন পাহাড় থেকে লাফ দিবো।

গ্যাংটক

ফর্ম পূরণ শেষে তাদের নির্ধারীত গাড়িতে করে চলে গেলাম আরো ১০ কিলোমিটার উপরে, পাহাড় বেয়ে বেয়ে গাড়ী উঠে গেলো বড় একটি পাহাড়ের চুড়ায়। সেখান থেকে গ্যাংটক শহরের পুরো ভিউটা পাওয়া যাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো চার পাশের পাহাড় গুলো শরটাকে পাহারা দিচ্ছে। স্টেডিয়ামের মতো চারো পাশেই পাহাড় আর মাঝখানে শহরটি।ফাইনালি সব ফরমালিটিস শেষ করে একে একে সবাই পাহাড় থেকে লাফিয়ে পরলাম। লাফ দেয়ার ১০ সেকেন্ড আগে থেকে লাফানোর পর ৫ সেকেন্ট পর্যন্ত ভয় লাগছিলো তারপর আর ভয় লাগেনি। পরবর্তী ৮ মিনিট ছিলো এক স্বর্গীয় অনুভূতি। সত্যিই জীবন অনেক বেশি সুন্দর

সিকিমে প্যারাগ্লাইডিং করার আগে আপনার যেসব তথ্য কাজে লাগবে

গ্যাংটক থেকে টেক্সি রিজার্ভ নিয়ে চলে যেতে পারবেন Sikkim Paragliding Adventure Sports Co-Operative Society Ltd. টেক্সি ড্রাইভারের সাথে অবশ্যই আগে কথা বলে নিবেন হোটেল থেকে পিকাপ এবং ড্রপ দুটোই যেনো করে। সেখানে অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষন না রাইড শেষ হচ্ছে।

প্যারাগ্লাইডিং এর দুটি প্যাকেজ আছে।

প্রথম প্যাকেজ (২৫০০ রুপি)

Height : 1200 feet altitude (landing to take off altitude)

Duration : 5 to 8 minutes

Fly Season : September to July

Body Weight : 30 to 85 Kgs.

দ্বিতীয় প্যাকেজ (৫০০০ রুপি)

Height : 2700 feet

Duration : 22 to 25 minutes

Fly Season : October to January

Body Weight : 45 to 85 Kgs. (Depending on whether condition)

লেখক : মাসুদ পারভেজ , ভ্রমণ বিষয়ক ব্লগার

ভিডিও দেখতে পারেন এখানে 

 


শর্টলিংকঃ