সিদ্দিক কবিরাজের মিষ্টি পানে মুগ্ধ ইউএনও


আমানুল হক আমান, বাঘা :

১৯৮৭ সালে স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেন খিলি পান বিক্রি। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে পানের দোকানদারী করে সিদ্দিক কবিরাজ এখন লাখ টাকার কারবারি। তিনি রাজশাহীর বাঘার ঈদমেলায় ৮ দিনে লক্ষাধিক টাকার খিলি পান বিক্রি করেছেন।  দোকানের  নাম ‘সিদ্দিক ভাইয়ের নাটোরের বনলতা পান’। 

সিদ্দিক কবিরাজের দোকানে পান কিনছেন বাঘার ইউএনও শাহিন রেজা

কেউ চাচ্ছেন নবাব পান, জমিদার পান, নাটোরের বনলতা পান, আয়ুবেদিক পান, বিয়াই-বিয়ান পান, শালি-দুলাভাই পান, হাসি-খুশি পান, নতুন বাবুর হাতের পান, ভালো বাসার পান, বন্ধু-বান্ধবীর পান, জনতার পান, খয়ের জর্দ্দা, আবার কেউবা মিষ্টি পান। সাইনবোর্ডে লিখা আছে- ‘আপনজনের জন্য নিয়ে যাবেন, ভালো লাগলে দাম দিবেন, না লাগলে দিবেন না’।

মনটি দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় রাজশাহীর বাঘা ঈদ মেলায়।  বাঘা দরগা শরিফের গেটের সামনে সিদ্দিক কবিরাজের পানের দোকানে। এক খিলি পান বিক্রির হয় সর্বোচ্চ এক হাজার ৫০ টাকায়। আর সর্ব নিম্ন দাম ১০ টাকা। সিদ্দিক কবিরাজ প্রায় ২৮ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছেন পানের। তবে ঈদ মেলায় খিলি পান বিক্রি করছেন ২০ বছর ধরে।

সিদ্দিক কবিরাজ (৫২) নাটোরের লালপুর উপজেলার জয়রামপুর-বেড়িলাবাড়ি গ্রামের মৃত গরিবউল্লার ছেলে। তিনি জানান, হরেক রকম জর্দ্দা ও মসলা দিয়ে তৈরী করে বিভিন্ন স্বাদের পান। বাহারি এই পান খেতে দুরদুরান্ত থেকে লোক আসে দোকানে।

তিনি আরো জানান, ১৯৮৭ সালে স্বল্প পুজি নিয়ে শুরু করেন এই খিলি পান বিক্রি। দীর্ঘ ২৮ বছর পানের দোকানদারী করে সিদ্দিক কবিরাজ এখন স্বাবলম্বী। তিনি এই রাজশাহীর বাঘার ঈদমেলায় ৮ দিনে লক্ষাধিক টাকার খিলি পান বিক্রি করেছেন।  তার লাইসেন্সধারী পানের দোকান। তার দোকানের লাইসেন্স নম্বর ১৮৬৭। সিদ্দিক কবিরাজ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পানের খিলি ব্যবাসায়ী। তার দোকানের সাইন বোর্ডে লিখা আছে- ‘আপনজনের জন্য নিয়ে যাবেন, ভালো লাগলে দাম দিবেন, না লাগলে দিবেন না’।

সিদ্দিক কবিরাজ  বলেন, বিভিন্ন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। পাশাপাশি মেয়ে শিখা খাতুন স্থানীয় কলেজের একাদশ শ্রেণি ও ছেলে শান্ত হোসেন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করাচ্ছেন তিনি। নিজে অর্থনৈতিক সংকটের কারনে খুব বেশি লেখা-পড়া করতে পারেন নি। তবে টাকার অভাবে যাতে ছেলের পড়াশুনা বন্ধ না হয়ে যায়, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখচ্ছেন পান ব্যবসায়ী সিদ্দিক কবিরাজ।

সিদ্দিক কবিরাজের দোকানে পানের মূল্যের তালিকার মধ্যে নবাব পান ১০৫০ টাকা, জমিদার পান ৫১০ টাকা, নাটোরের বনলতা পান ৪২০ টাকা, আয়ুবেদিক পান ২৫০ টাকা, বিয়াই-বিয়ান পান ২১০ টাকা, শালি-দুলাভাই পান ১৭০ টাকা, হাসি-খুশি পান ১১০ টাকা, নতুন বাবুর হাতের পান ৯৫ টাকা, ভালোবাসার পান ৫০ টাকা, বন্ধু-বান্ধবীর পান ২৫ টাকা ও জনতার পান ১০ টাকা।

মঙ্গলবার মেলা পরিদর্শন করতে এসে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা ৫০ টাকা মুল্যের একটি পান নেন। এ সময় এ প্রতিবেদককে বলেন, এর আগেও তার কাছে থেকে পান খেয়েছি। তার পান খেলে মনে হয় মুখ থেকে পান ফুরাচ্ছেনা। খেতে খুব সুস্বাদু।

বাঘা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবদুল লতিফ মিঞা ও স্থানীয় কলেজ শিক্ষক গোলাম তোফাজ্জল কবীর মিলন বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে এই মেলায় পান বিক্রি করে আসছেন তিনি। তার পান খাওয়ার জন্য মানুষ লাইন নিয়ে থাকেন। বিক্রিও ভালো হয়।


শর্টলিংকঃ