‘সিভিল সার্জনকে খুশি করলেই মেলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স’


বিশেষ প্রতিবেদক :

মালিক সমিতির অভিযোগ, আইন-কানুনেরই বালাই নেই। সিভিল সার্জনকে ‘খুশি’ করলেই ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক পরিচালনার লাইসেন্সের গ্যারান্টি শতভাগ। এজন্যই পাড়া-মহল্লা থেকে হাট-বাজারেও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক গড়ে উঠছে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এগুলো মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার পরিচিতি ক্লিনিকপাড়া হিসেবেই। সিপাইপাড়া থেকে ঝাউতলা পর্যন্ত মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে প্রায় দেড়শ’ প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে নিয়ম-নীতি ও আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে।

এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক মনিটরিংয়ে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় যে যার মতো চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার সভাপতি ডা. এএসএম মান্নান।

তিনি বলেন, ‘১৯৮২সালের আইন দিয়ে চলছে বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলো। কিন্তু এ আইনটি বাস্তবতার সাথে মিল না রেখেই করা হয়েছিল। যার কারণে মানা সম্ভব হয় না। আইন অনুযায়ী, প্রতি ৫জন রোগীর জন্য একজন করে নার্স থাকতে হবে। প্রতি ১০জন রোগীর বিপরীতে থাকবেন একজন চিকিৎসক। কিন্তু এই শর্ত আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মানা হয় না। সম্ভবও নয়’।

১৯৭৮ সাল থেকে ক্লিনিক ব্যবসায় জড়িত ডা. মান্নান বলছেন, ‘পাড়া-মহল্লা থেকে হাট-বাজারে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার দায় সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন অফিসেরই। কারণ তারা লাইসেন্স দেয়। আর লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলে তারা পরিদর্শনে আসেন। এসময় কেউ শর্ত বা আইন মানলো কি না তা মূখ্য বিষয় থাকে না। সিভিল সার্জনকে ‘খুশি’ করতে পারলেই লাইসেন্সের গ্যারান্টি শতভাগ’।

অভিযোগ নিয়ে বুধবার কয়েক দফা কার্যালয়ে গেলেও রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমানের দেখা মেলে নি। তাঁর কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. বার্নাবাস হাসদাক জানান, সিভিল সার্জন মিটিংয়ের জন্য বাইরে আছেন। রাজশাহী নগরীতে বৈধ ও অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিভিল সার্জন ছাড়া এসব তথ্য দেয়া যাবে না।

এদিকে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক নিয়মিত তদারিক জন্য নেই কোনো ব্যবস্থা। মঙ্গলবার ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ধরা পড়ছে নানা অনিয়মও।

অভিযান পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রনী খাতুন ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে জানান, লাইসেন্স না থাকায় এইড প্লাস ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও সাদ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের  কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একইসাথে তাদের ৫৫হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে তিনি।

ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে থাকা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আলম ইফতেখার বেলায়েত বলেছেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলো মনিটরিংয়ে গঠন করা হয়েছে কমিটি। এই কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখবে কারা আইন মানছে বা মানছে না। এরপরই পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে লাইসেন্স না থাকায় এরইমধ্যে ছয়টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধের জন্য তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।


শর্টলিংকঃ