Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

সিরাজগঞ্জে আড়াই হাজার বছরের পুরনো নগরীর সন্ধান


নিজস্ব প্রতিবেদক, সিরাজগঞ্জ:

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে মহাভারতে উল্লিখিত বিরাট রাজার মহল ও মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান মিলেছে। শাহজাপুরের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা হাজার বছরের পুরনো এই নগরীর সন্ধান পেয়েছেন।

বুধবার (১০ এপ্রিল) বিভাগটির শিক্ষকরা জানান, মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দিনভর রায়গঞ্জের খিরিতলা গ্রামের পরিত্যক্ত উঁচু ঢিবি ও এর আশপাশের ধ্বংস্তুপ নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ চালানো হয়।

বিভাগের শিক্ষক মো. রিফাত-উর-রহমানের তত্ত্বাবধানে প্রথম বর্ষের ৩৮ জন শিক্ষার্থী এই জরিপ চালান। বিভাগের অপর শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনও এতে অংশ নেন।

প্রাথমিক গবেষণায় জানা যায়, ৮০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দের সমৃদ্ধ একটি নগরী ছিল এটি। আড়াই হাজার বছর আগে মহাভারতে বর্ণিত বিরাট রাজার প্রাসাদ ছিল এ অঞ্চলেই।

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের খিরিতলা ও এর আশপাশের গ্রামগুলোতে অন্তত অর্ধশতাধিক উঁচু ঢিবির সন্ধান পাওয়া যায়। যেগুলো বহু প্রাচীন আমলের ইট দিয়ে তৈরি। এখানে একটি মন্দিরের অস্তিত্বও পাওয়া যায়।

স্থান পরিদর্শন করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রভাষক রিফাত-উর-রহমান বলেন, খিরিতলা গ্রামে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ঢিবিটাকে স্থানীয়রা রাজার বাড়ি বলে মনে করেন। ঢিবিতে প্রাচীনকালের ইট নির্মিত স্থাপনার ভগ্নাংশ দৃশ্যমান।

ঢিবিসংলগ্ন কৃষি জমিতে হাটলে প্রচুর পরিমাণে মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ চোখে পড়ে। ঢিবিতে পাওয়া পোড়ামাটির চিত্রফলক দেখে ধারণা করা যায়, এগুলো গুপ্ত পরবর্তী যুগের। এখানে গুপ্ত আমলের একটি মুদ্রাও পাওয়া যায়। এ থেকে অনুমিত হয় যে, এ স্থানটি গুপ্ত কিংবা পাল আমলের সমৃদ্ধ একটি জনপদ ছিল।

এখানে অবস্থিত প্রায় ৫০টি ঢিবির মধ্যে লুকায়িত আছে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। পাল আমল পর্যন্ত গৌরবের সঙ্গেই হয়তো এই জনপদ টিকে ছিল।

তিনি বলেন, ১৯৯০ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ জেলা গেজেটিয়ার পাবনা’ সূত্রমতে নিমগাছি অতি প্রাচীন স্থান। এটিকে মহাভারতে বর্ণিত বিরাট রাজার শহর বলে অভিহিত করা হয়। প্রাচীন করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে প্রায় আট বর্গমাইল আয়তনের একটি নগরীর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে এখানে।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া ১৯৮৪ সালে তাঁর ‘বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, মহাভারতে বর্ণিত মৎস্য দেশের রাজা বিরাটের রাজপ্রাসাদ ছিল এ অঞ্চলে। নৃত্যশীলা, কীচক স্থান, বুরুজ ইত্যাদি নামে অন্যান্য ঢিবিগুলো পরিচিত।

ধ্রুপদীর স্বামী পঞ্চ পাণ্ডব অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন এখানে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। প্রমাণস্বরূপ একটি প্রাচীন বৃক্ষকে মহাভারতে বর্ণিত শমীবৃক্ষ ও একটি স্থানকে বিরাট রাজার গো-গৃহ বলে চিহ্নিত করা হয়।

রিফাত-উর-রহমান জানান, এই ঢিবিসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার এখনো সুযোগ রয়েছে। প্রাথমিক জরিপে বেশ কিছু মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ এবং ইটের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।


Exit mobile version