সিলেট কারাগারের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক টিম মাঠে


ইউএনভি ডেস্ক:

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের খাবার ও রক্ষীদের রেশন নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অনুসন্ধান করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের পরিচালক (জন সংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ সেপ্টেম্বর ‘সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের খাবার ও রক্ষীদের রেশনে ব্যাপক দুর্নীতি’ শিরোনামে যুগান্তরে তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওইদিনই কারা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক একেএম ফজলুল হককে আহ্বায়ক ও মুন্সীগঞ্জ জেলার দেওয়ান মো. তারিকুল ইসলামকে সদস্যসচিব ও নেত্রকোনার জেল সুপার আব্দুল কুদ্দুসকে সদস্য করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়।

কমিটি ১ অক্টোবর কারা অধিদপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে রহস্যজনক কারণে প্রকৃত দুর্নীতির চিত্র আড়াল করার চেষ্টা করা হয়। অভিযুক্তদের রক্ষা করতে কোনোরকম দায়সারা রিপোর্ট জমা দেয়। তবে সেখানেও কিছু অনিয়ম উঠে এসেছে।

জানা যায়, এ ধরনের আইওয়াশ তদন্তের বিষয়টি দুদক ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়েছে। এ কারণে সিলেট কারাগারে খাবার সরবরাহের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে দুদক শিগগির বিশেষ অনুসন্ধান শুরু করবে। একইসঙ্গে যারা তদন্ত করেছেন তাদের সহায়সম্পত্তি নিয়েও পৃথক তদন্ত হবে।

এ জন্য তদন্ত কমিটির প্রধান ডিআইজি একেএম ফজলুল হক, সদস্য নেত্রকোনার জেল সুপার আব্দুল কুদ্দুস এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার দেওয়ান মো. তারিকুল ইসলামের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কী কী সম্পদ আছে, সে বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে। কারণ, তারা বন্দিদের কাছ থেকে খাবার পরিবেশনে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পেয়েও দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের শুধু সতর্ক করে দায় মুক্তি দিয়েছেন। এভাবে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে প্রকারান্তরে তারা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার অপরাধ করেছেন।

বিশেষ করে সিলেটের তৎকালীন সিনিয়র জেল সুপার বর্তমানে কাশিমপুর কারাগার-২-এ বদলি হওয়া আব্দুল জলিলের বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। কারণ, তিনি বিসিএস তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তার চাকরি ছেড়ে কারাগারে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে জেল সুপার পদে যোগ দিয়েছেন। এভাবে ক্যাডার সার্ভিস আসার পেছনে অন্যতম কারণ হলো ঘুস।

অর্থাৎ, তথ্য ক্যাডারের চাকরিতে কারাগারের মতো ঘুস খাওয়ার সুযোগ নেই। যুগান্তরের কাছে এমন মন্তব্য করেছেন কারাগারের অনেকে। এ ছাড়া ইতোমধ্যে তিনি তার আপন বড় ভাইয়ের নামে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন এলাকায় মূল্যবান জমিও কিনেছেন। এ ছাড়া ওই জমি সংলগ্ন জেলা পরিষদের জমিও ভাইয়ের নামে লিজ নিতে সক্ষম হয়েছেন। দুদক এ বিষয়গুলো তদন্তভুক্ত করবে।

এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ‘এরা আসলে খাবার চোর এবং এই চিত্র শুধু সিলেট কারাগারের নয়, সারা দেশে বন্দিদের খাবার লুটপাট করার পেছনে এলাকাভিত্তিক বহু ঠিকাদার সিন্ডিকেট জড়িত।

মোটা অঙ্কের কমিশন দিয়ে বহু ঠিকাদার বছরের পর বছর এককভাবে খাবার সরবরাহ করে আসছেন। তিনি জানান, কারাগারের একশ্রেণির দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তারা এই লুটপাট প্রক্রিয়ায় সঙ্গে যুক্ত। অধিকাংশ কর্মকর্তা ডিআইজি বজলুর রশীদ ও পার্থের মতো দুর্নীতির গডফাদার। এদের নামে-বেনামে প্রচুর অর্থসম্পদ রয়েছে। কেউ কেউ দেশের বাইরে বিপুল অঙ্কের অর্থ নিয়ে সেকেন্ড হোম কিনেছেন। এ জন্য এদের সবার বিরুদ্ধে শক্ত তদন্ত হওয়া জরুরি।

অভিযোগ আছে, সিলেট ও চট্টগ্রামের কারা ডিআইজি একেএম ফজলুল হক কারাগার পরিদর্শনে এসে বন্দিদের অভিযোগ পেয়েও কোনো ব্যবস্থা নেননি; বরং এসব অভিযোগ পুঁজি করে অধস্তন কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজে লাভবান হয়েছেন। অথচ তাকেই দেওয়া হয় তদন্তের দায়িত্ব। বন্দিদের খাবার লুটপাট করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন এই কারা কর্মকর্তারা।

 

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে একেএম ফজলুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল সম্পদ পাচারের অভিযোগ সঠিক নয়। আমি আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে দুবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছি। সেখানকার নাগরিক নই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো কারাগার থেকে অবৈধ সুবিধা নিইনি। এটি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। বাস্তবে আমি একজন সৎ মানুষ।’

 


শর্টলিংকঃ