সুস্থদের মাস্ক প্রয়োজন নেই : দাম বেশি নেয়ায় জরিমানা


নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজশাহী নগরীতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে নির্ধারিত দামের চেয়ে মাস্কের দাম বেশি নেয়া দুটি গার্মেন্টসকে জরিমানা করা হয়েছে।  মঙ্গলবার দুপুরে আরডিএ মার্কেটে অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফতবে  রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ডা. উপ-পরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলছেন, ‘সুস্থ মানুষদের মাস্ক ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই’। 

দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর থেকে রাজশাহীতেও ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।  গেল দুদিন ধরে হঠাৎকরেই নগরীতে বেড়েছে মাস্ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা। সঙ্গে সচেতনতার অংশ হিসেবে হাত ধোয়া এবং সর্দি-কাশিতে ন্যাপকিন টিস্যু ব্যবহারেও উদ্যোগী হতে দেখা গেছে। আর সেই সুযোগে ফার্মেসিগুলোতে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মাস্কের দাম।

কসমেটিকস থেকে শুরু করে অধিকাংশ মুদি দোকানেও মিলছে না হ্যান্ডওয়াশ ও স্যানিটাইজার। অসংখ্য অভিযোগ মিলেছে ন্যাপকিন টিস্যুর মূল্য বেশি নেয়ার। তবে ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাপের কারণে নগরীর অধিকাংশ ফার্মেসি মালিকরা তাদের দোকানে ‘মাস্ক নেই’ ফেস্টুন ঝুলিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এবং লক্ষ্মীপুরের ফার্মেসিগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানে ‘মাস্ক নেই’ লেখা ফেস্টুন ঝুলছে। তবুও দোকানগুলোতে গিয়ে মাস্ক চাইছেন ক্রেতারা। জিরোপয়েন্টে স্টার মেডিকেল হল ফার্মেসির বিক্রেতা আবু সাঈদ  বলেন, ‘আমরা ঢাকা থেকে মাস্ক নিয়ে থাকি। গত তিনদিনে আমাদেরকে কোনো মাস্ক সরবরাহ করা হয়নি। যা ছিল তা সোমবার দুপুরের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। আমরা ১৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। বিকেলে মাস্ক ক্রেতাদের ব্যাপক চাপ ছিল। বাধ্য হয়ে মাস্ক নেই ফেস্টুন টানিয়েছি।’

নগরীর ফার্মেসিপাড়া হিসেবে পরিচিত লক্ষ্মীপুরেও অধিকাংশ দোকানে মাস্ক নেই লেখা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘সার্জিক্যাল অ্যান্ড ড্রাগস’ ফার্মেসির বিক্রেতা সবুজ বলেন, ‘রোববারই আমাদের মাস্ক শেষ। দিব কোথা থেকে? কিন্তু সবাই এসে বলে লুকিয়ে রেখেছি! ঝামেলা করতে চাই না, তাই লেখা টানিয়েছি।’

এদিকে, ফার্মেসিগুলোতে মাস্ক শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন ফুটপাতের সাধারণ মাস্ক ব্যবসায়ীদের বেচাবিক্রি রমরমা। তারা গেঞ্জি কাপড় দিয়ে তৈরি ৫ টাকা মূল্যের মাস্ক বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। নগরীর আরডিএ মার্কেটের সামনের ফুটপাতে সন্ধ্যায় ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

আরডিএ মার্কেটের সামনের ওভারব্রিজের নিচে শুধু ৫০/৬০টি মাস্ক নিয়ে দোকান বসিয়েছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি সেগুলো কিনছেন কাপড়পট্টির ভেতরে দর্জিদের কাছ থেকে। দর্জিরা ‘ছাট কাপড়’ সেলাই করে মাস্ক বানিয়ে তাদের সরবরাহ করছেন। আমিনুল বলেন, ‘আমি ২০ টাকা করে কিনেছি। পাওয়া যাচ্ছে না, তাই একটু বেশি দামে বিক্রি করছি। যে জিনিসের চাহিদা বেশি, তার দাম বেশি তো হবেই।’

তবে  মঙ্গলবার দুপুরে আরডিএ মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ।  এসময় মাস্কের দাম বেশি নেয়া অভিযোগে সাগর গার্মেন্ট ও হানিফ এন্টারপ্রাইজ তিন হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

করোনা আতঙ্কে রাজশাহীর সার্বিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম বলেন, ‘আমরাও কিছু অভিযোগ শুনেছি। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে পরামর্শ করে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’


শর্টলিংকঃ