সেই গ্রামে এবার পল্লী চিকিৎসকের মৃত্যু : এক সপ্তাহে মৃত ৬


তানোর প্রতিনিধি :

ওই গ্রাম পরিদর্শন করতে ঢাকা থেকে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম রাজশাহী পৌঁছেছেন। সোমবার তারা ওই গ্রাম পরিদর্শন করবেন। একই সঙ্গে গ্রামের মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরেক্ষা করবেন। এর পরেই হয়তো জানা যাবে আসলে কি রোগে তারা মারা গেছেন। গ্রামবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চার নারীসহ আরও ছয়জন

রাজশাহীর তানোর উপজেলার বহরইল গ্রামে অজ্ঞাত রোগে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। সর্বশেষ রোববার ভোরে মারা গেছেন এক পল্লী চিকিৎসক। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে মৃত্যের সংখ্যা বেড়ে দিয়েছে ছয়জনে। এ ছাড়াও রোববার অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চার নারীসহ আরও ছয়জন। তাদের উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার মৃত পল্লী চিকিৎসকের নাম ইমাম আলী বাবু (৩৮)। সে ওই গ্রামের মৃত আব্দুল কাশেমের ছেলে। রোববার ভোরে তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান।

অপর অসুস্থরা হলেন, ওই গ্রামের জামেনুর রহমানের স্ত্রী সেফালি বিবি (৩৫), মৃত আনেসুর রহমানের স্ত্রী সেমেজান বিবি (৫০), আব্দুর গাফরের স্ত্রী আপেজান বিবি (৪৮) ও দাউদ আলীর স্ত্রী বাদেনুর খাতুন (৩৫)। তাদের বিকেলে স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আর সন্ধ্যার পর ভর্তি করা হয়েছে শফিকুল ইসলামের ছেলে জিয়া (২৫) ও আব্দুল হকের ছেলে সানাউল্লাহকে (৩২)।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা

তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা: রোজিয়ারা খাতুন বলেন, রোববার একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ছয়জন। এ নিয়ে ওই গ্রামে গত এক সপ্তাহে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ১০ জন।

তিনি বলেন, গত সপ্তাহের শনিবার নুরী বিবি (৬৫), জনাব আলী (৪৫) ও চারদিনের এক শিশু মারা যায়। এর একদিন পর সোমবার সমসের আলী (৬৫) এবং শনিবার রাহেলা বেগম (৪৮) মারা যান। তবে কি রোগে তারা মারা গেছেন তা এখনো জানা যায়নি।

স্থানীয়দের বরাদ দিয়ে রোজিয়ারা খাতুন বলেন, সুস্থ্য মানুষের হঠাৎ বুক জালা, শরীরে ব্যথা ও ঝাকুনি শুরু হচ্ছে। এর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। মারা যাওয়া ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে একইভাবে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা

তিনি বলেন, ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বহরইল গ্রামে গিয়ে মৃত্যুর কারণ ও নমুনা সংগ্রহ করেছে। এর আগে গত শুক্রবার পাঁচজন চিকিৎসকের একটি টিম ওই গ্রাম পরিদর্শন করেন। তারা গ্রামবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়াও পল্লী চিকিৎসক মারা যাওয়ার খবর পেয়ে রোববার সকালে ওই গ্রাম পরিদর্শন করেন জেলার সিভিল সার্জন ডা: সঞ্জিত কুমার সাহাসহ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

তিনি আরও বলেন, ওই গ্রাম পরিদর্শন করতে ঢাকা থেকে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম রাজশাহী পৌঁছেছেন। সোমবার তারা ওই গ্রাম পরিদর্শন করবেন। একই সঙ্গে গ্রামের মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরেক্ষা করবেন। এর পরেই হয়তো জানা যাবে আসলে কি রোগে তারা মারা গেছেন।

বহরইল গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল লতিব জানান, শনিবার রাত ৮টার দিকে বৈদ্দপুর বাজারে নিজের ফার্মেসীতে পল্লী চিকিৎসক বাবু হঠাৎ করে শরীরে ঝাকুনি দিয়ে উঠার পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে স্থানীরা তাকে বাড়ি নিয়ে যান। রাতে তার অবস্থার অবনতি হলে ভোরে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। তবে গত কয়েকদিনে ওই গ্রামে পাঁচজন মানুষ মারা যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে টেনশান করছিলেন এই পল্লী চিকিৎসক।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী

বাধাইড় ইউপি চেয়াম্যান আতাউর রহমান বলেন, বহরইল গ্রামে এক সপ্তাহ ধরে অজ্ঞাত রোগে প্রতিদিন সুস্থ্য মানুষ অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন। কয়েকদিনে ছয়জন মারা গেছে। বিষয়টি নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছেন এলাকার মানুষকে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের গ্রামেও। বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম রাব্বী বলেন, বহরইল গ্রামে এক সপ্তাহে ছয়জনের মৃত্যু ও বেশ কয়েকজন অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি নিয়ে আমারও চিন্তিত। মেডিকেল টিমও গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। তবে এখনো জানা জায়নি মৃত্যুর কারণ। তবে ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম এসেছে। তারা পরীক্ষ-নিরিক্ষার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।


শর্টলিংকঃ