স্কুলছাত্রীকে বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণ, অস্বীকারে আত্মহত্যা


নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ:

বিয়ের আশ্বাস দিয়ে নওগাঁর মান্দায় এক স্কুলছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে মুখলেছুর রহমান নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। বিয়ে করতে অস্বীকার করলে ওই স্কুলছাত্রী হারপিক খেয়ে আত্মহত্যা করে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বুধবার ভোরে সে মারা যায়।এর আগে গত ৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের কাঁশোপাড়া গ্রামে হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই স্কুলছাত্রী।

মুখলেছুর রহমান একই গ্রামের শফির তালুকদারের ছেলে এবং কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের উদ্যোক্তা।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্কুলছাত্রীর ভাইকে চাকরি দেয়ার লোভ দেখিয়ে মুখলেছুর রহমান গত ৬-৭ মাস আগে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সেই সময় গরু-ছাগল বিক্রি করে মুখলেছুর রহমানকে টাকা দেয় মেয়ের পরিবার। এরপর থেকে মুখলেছুর রহমান মেয়েদের বাড়িতে আসা-যাওয়া শুরু করে।

ওই ছাত্রী স্কুলে প্রাইভেট পড়তো। করোনাভাইরাসে স্কুল বন্ধ থাকায় মুখলেছুর রহমানের সাইকেলে করে তাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আসতো। তাদের মধ্যে এক সময় সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। মুখলেছুর রহমান বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক।

গত ১ অক্টোবর ওই ছাত্রী প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পর বিয়ের প্রলোভন দিয়ে তাকে নিয়ে পালিয়ে যায় মুখলেছুর রহমান। পাঁচদিন পর মেয়ের পরিবার মেয়েকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলছিল।

এক পর্যায়ে ক্ষোভের বসে গত ৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে বাড়িতে হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই ছাত্রী। পরে পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পেরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার ১১দিন পর মারা যায়। ঘটনার পর থেকে মুখলেছুর রহমান পলাতক রয়েছে।

নিহতের বাবা বলেন, আমার ছেলেকে চাকরি দিবে বলে মুখলেছুর রহমান ৫০ হাজার টাকা নেয়। এরপর থেকে সে আমার বাড়িতে আসা-যাওয়ার সুবাদে মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করেছে আমরা বুঝতে পারিনি। সে নাকি আমার মেয়েকে ইউনিয়ন পরিষদের একটি ঘরে বিয়ে করেছে। সেখানে তারা কয়েকদিন সময়ও কাটিয়েছে। যদি বিয়ে করেই থাকবে, তাহলে মেয়েকে তার বাড়িতে কেন নিয়ে যায় না। মেয়েকে ভুল বুঝিয়ে তার সর্বনাশ করেছে এবং আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছে। আমি তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।

মুখলেছুর রহমানের স্ত্রী জহুরা খাতুন বলেন, স্বামী পরকীয়ার বিষয়টি জানার পর আমিও হারপিক খেয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। পরে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আমাকে সুস্থ করা হয়েছে।

মুখলেছুর রহমানের মা মাকছুদা খাতুন বলেন, মেয়ের পরিবার অভাবী হওয়ায় তাদের আমরা বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করতাম। আমার ছেলের সঙ্গে ওই মেয়ের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ওই মেয়ে অন্য কোনো কারণে আত্মহত্যা করেছে যা আমার ছেলের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান মোল্লা বলেন, মেয়ের বাবা অভিযোগ করেছিলেন উদ্যোক্তা মুখলেছুর রহমান তার মেয়েকে বিয়ে করেছে কিন্তু বাড়িতে তুলছে না। এছাড়া ওই মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাকে কখনো অবগত করা হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদের একটি ঘর উদ্যোক্তার জন্য বরাদ্দ ছিল। ওই ঘরে সবাই যেত। ওই ঘরে কখন অনৈতিক কাজ করেছে সেটা তো বলতে পারবো না।

মান্দা থানার ওসি শাহিনুর রহমান বলেন, ঘটনায় মেয়ের বাবা বাদী হয়ে বুধবার আত্মহত্যার প্ররোচণা বিষয়ে মুখলেছুর রহমানকে আসামি করে মামলা করেছেন। রাজশাহীতে মারা যাওয়ায় সেখানে ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।


শর্টলিংকঃ