সড়কে সাবাড় লালমাই ময়নামতি পাহাড়


ইউএনভি ডেস্ক:

সড়ক প্রশস্ত করার দোহাই দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে কাটা হচ্ছে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের বড়ধর্মপুর এলাকার অন্তত পাঁচটি অংশ। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া পাহাড় কাটার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে সংশ্নিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার হাজির হতে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) কুমিল্লা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার পিপুলিয়া-রতনপুর-বড়ধর্মপুর-চণ্ডিমুড়া-মগবাড়ি সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করতে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ৩৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার এ কাজ পায় হাসান টেকনোলজি বিল্ডার্স লিমিটেড ও মেসার্স হক এন্টারপ্রাইজ জেবি। ২০২১ সালের ১১ জুন প্রকল্প শেষ করার কথা।

গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা যায় ওই সড়কটি ১৮ ফুট প্রশস্ত করতে গিয়ে বড়ধর্মপুর বাজার ও স্কুলপাড়ার পাশে অন্তত পাঁচটি স্পটে নির্বিচারে এক্সক্যাভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে পাহাড় কাটার চিত্র। সড়কের বর্ধিত অংশের কাজও করা হচ্ছে পাহাড়ের লাল মাটি দিয়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তার জন্য মেশিন দিয়ে ২৫-৩০ ফুট উচ্চতার পাহাড় কাটার ফলে এখনই ওপর থেকে মাটি ও গাছপালা ভেঙে নিচে পড়ছে। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার ফলে সামান্য বৃষ্টি হলে আরও পাহাড় ভেঙে নিচে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

বড়ধর্মপুর গ্রামের কৃষক মমিন মিয়া ও অটোরিকশা চালক নুরুল ইসলাম জানান, পাহাড় না কেটেও রাস্তা বাড়ানোর সুযোগ ছিল। এখন বৃষ্টি হলে পাহাড়ের লালমাটি পাশের জমিতে গিয়ে ফসল নষ্ট করবে।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আইন না মানার সংস্কৃতি এবং আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ না করায় লালমাই-ময়নামতি পাহাড় হয়তো একদিন মানচিত্রেই দেখা যাবে, বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

গতকাল পাহাড় কাটার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শওকত আরা কলি জানান, রাস্তা বাড়াতে গিয়ে পাহাড় কাটার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে যে চিত্র দেখা গেছে তা সত্যই দুঃখজনক। রাস্তা সম্প্রসারণের আগে সওজ কর্তৃপক্ষের সরেজমিন গিয়ে জরিপ করে এ বিষয়ে প্রকল্প চূড়ান্ত করার কথা। কিন্তু পাহাড় কাটার ছাড়পত্র ছাড়াই ঠিকাদারের লোকজন নির্বিচারে ও অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটেছে। এ বিষয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আগামী ১০ নভেম্বর অফিসে এসে জবাব দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে দিনভর চেষ্টা করেও এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

ওই সড়ক অর্থায়ন ও তদারকি প্রতিষ্ঠান সওজ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ জানান, পাহাড় কাটার বিষয়টি আমার নলেজে ছিল না। আজ পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি পেয়েছি। পাহাড় কেটে রাস্তার দরকার ছিল না। প্রয়োজনে বিকল্প স্থান দিয়ে রাস্তা নেওয়া যেত। তিনি বলেন, প্রকল্প তৈরির আগে সার্ভে করার সময় পাহাড় কাটার বিষয়টি আলোচনায় না আসায় এমনটি হতে পারে। এ বিষয়ে তিনি সরেজমিন গিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।


শর্টলিংকঃ