- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

হতাশ কৃষক, আর করবেন না গরু পালন


ইউএনভি ডেস্কঃ

বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার উল্লাপাড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ফিজার। কোরবানি সামনে রেখে পুরো দুই বছর ধরে একটি গরু পালন করেন তিনি। খুব আদর-যত্নে গরুটিকে মোটাতাজাকরণ করেন। এরপর পশুর হাটে তোলেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে পরবর্তীতে পাশের বাড়ির রহমত উল্লাহর কাছে বিক্রি করেন ৭০ হাজার টাকায়। কোরবানির পর গরুটি থেকে পাওয়া যায় পাঁচ মণ মাংস।

ফিজার বলেন, গরুর খোরাক (খাদ্য) প্রতিদিন বাড়ছে। দোকানে বাকি করে ছয় মাস ধরে গরুকে খাইয়েছি। গরু বিক্রি না করে উপায়ও ছিল না। যে কারণে লস দিয়ে বিক্রি করি।

তিনি বলেন, প্রতিবারই কোরবানি সামনে রেখে গরু লালন-পালন করি। কিন্তু কোরবানি এলেই গরুর দাম পড়ে যায়। সীমান্ত দিয়ে গরু চলে আসে। এবার নিয়ে তিন বছর লস করলাম। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর গরু লালন-পালন করব না।

‘বাজারে গরুর মাংস কিনতে গেলে প্রতি কেজি সাড়ে পাঁচশ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। সে হিসাবে এক মণ মাংসের দাম পড়ে ২২ হাজার টাকা। তাহলে আমার গরুর মাংসের দাম পড়ল এক লাখ ১০ হাজার টাকা। আমি যে দামে গরু বিক্রি করেছি তাতে প্রতি মণ মাংসের দাম পড়ে ১৪ হাজার টাকা, যা বাংলাদেশের কোনো হাট-বাজারে কিনতে পাওয়া যাবে না। এভাবেই আমরা ছোটখাটো গৃহস্থরা প্রতি বছর মার খাচ্ছি।’

এই আক্ষেপ শুধু ফিজারের নয়। সারাদেশের প্রান্তিক কৃষকের। কোরবানি সামনে রেখে কিছু পয়সার আশায় লাখ লাখ কৃষক দু-একটি গরু লালন-পালন করেন। কিন্তু প্রতিবারই লাভের আশার গুড়েবালি!

কৃষকরা জানান, আগে প্রচুর ফাঁকা জায়গা ছিল। সেখানে গরু বাঁধা গেছে বা ছেড়ে দিয়ে লালন-পালন করা গেছে। এখন সে অবস্থা নেই। এক ফসল তুলেই আরেক ফসলের জন্য জমি চাষ শুরু হয়ে যায়। এ কারণে এখন গরু পালতে হয় একেবারে ঘরের মধ্যে। বাইরে ঘাস খাওয়ানো বা চরানোর কোনো সুযোগ নেই।

দিনাজপুরের কয়েকজন কৃষক বলেন, এবার কোরবানির আগে দিনাজপুরের কাহারোল হাটে প্রচুর বলদ গরু দেখা গেছে। ধবধবে সাদা বিশালাকৃতির (বৈল) বলদ গরু বাংলাদেশের নয়। তাদের জন্ম ভারতে। প্রতি বছর যেমন লাখ লাখ ভারতীয় গরু বাংলাদেশে আসে, এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বানের পানির সঙ্গে এবারও প্রচুর গরু বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বলেছিলেন, ভারত থেকে কোনো গরু বাংলাদেশে আসবে না। ঠেকানো গেছে কি— প্রশ্ন তাদের।

কোরবানির সাতদিন আগে দিনাজপুর কাহারোল হাটের ব্যাপারী আমজাদ ফকির জাগো নিউজকে বলেছিলেন, ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা মণ মাংস ধরে এমন যত গাড়ি গরু লাগে দিতে পারবেন। আমজাদ ফকিরসহ কাহারোলোর হাটের ব্যাপারীরা সারাদেশে শত শত ট্রাকভরে যে গরু সরবরাহ করেছেন তার সবই ছিল ভারতীয়।

গরু ব্যাপারীরা বলেন, দিনাজপুরের কাহারোল শুধু বর্ডার এলাকা বলে নয়; ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহসহ যেকোনো জেলার গরুর হাটে লক্ষ্য করলে হাজার হাজার ভারতীয় গরু চোখে পড়বে।

গাবতলী হাটের গরু ব্যবসায়ী রানা  বলেন, শুধু কোরবানির হাট নয়, সারাবছরই আমরা ভারতীয় গরু বিক্রি করি। কোরবানির মধ্যে ক্রেতারা আড়াই লাখ টাকা দিয়ে বৈল গরু কিনলে ১৪-১৫ মণ মাংস পায়। তাহলে তারা আমাদের দেশীয় গরু কিনবে কেন?

বাংলাদেশের খামারি এবং ছোট ছোট গৃহস্থের অভিযোগ, ভারতীয় গরুর কারণে তারা তাদের উৎপাদিত গরুর দাম পাচ্ছেন না। এ কারণে ভবিষ্যতে তারা আর গরু লালন-পালন করবেন না।

এ প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার বলেন, যেহেতু এবার দেশের পরিস্থিতি একটু অস্বাভাবিক, সে কারণে অন্য বছরগুলোর তুলনায় এ বছর খামারি ও কৃষকদের পশুর যে দাম পাওয়ার কথা ছিল তা পাননি। পাঁচ মাস ধরে দেশে যে অবস্থা বিরাজ করেছে তাতে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না। আগামীতে খামারি ও প্রান্তিক কৃষকরা ভালো দাম পাবেন বলে আশা করি।

বাংলাদেশ ডেইরি ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (বিডিডিএফ) সভাপতি অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম এমপি  বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। এ কারণে এবার পর্যাপ্ত পশু কোরবানি হয়নি। এছাড়া কোরবানির সময় সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতিও বিরাজ করেছে। এ কারণেও প্রান্তিক খামারিরা পশুর ন্যায্যমূল্য পাননি।