হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা, দুশ্চিন্তায় রাবি শিক্ষার্থীরা


ইউএনভি ডেস্ক:

আবাসিক হল বন্ধ রেখেই স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার (২১ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবনে আয়োজিত একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখেয়েছেন শিক্ষার্থীরা।


পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত হলেও আবাসিক হল বন্ধ রেখে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই পরীক্ষা নেওয়ায় রাজশাহীতে এসে কোথায় থেকে পরীক্ষা দেবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা মহামারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই মুহূর্তে আবাসিক হল খোলা সম্ভব নয়। কষ্ট হলেও রাজশাহীতে আত্মীয়-স্বজনের বাসা কিংবা মেসে থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এটা সরকারি ঘোষণা বলেও দাবি করেন তারা।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসময় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থীরই কেবল চূড়ান্ত পরীক্ষাটি নেওয়ার সুযোগ ছিল না। ফলে তারা যথাসময়ে পরীক্ষা দিতে পারেননি। এদিকে, এর মধ্যে ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞাপন প্রকাশ পেয়েছে। যথাসময়ে স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে গেলে যেসব শিক্ষার্থী এই বিসিএসে আবেদন করতে পারতেন বলে মনে করছেন, তারা পরীক্ষা না হওয়ার কারণে সেই সুযোগটি পাচ্ছেন না। এছাড়া দীর্ঘ সেশনজটের শঙ্কা থেকেও তারা দ্রুত পরীক্ষা আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষাগুলো স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আগামী ২ জানুয়ারি থেকে নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় রাবি কর্তৃপক্ষ। তবে আবাসিক হল বন্ধ রেখেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়।

এ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের মাঝে আবাসিক হল খোলার দাবি ওঠে এবং হল খোলা না রেখে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়কে অযৌক্তিক দাবি করে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। তারা বলছেন, কেবল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাই যেহেতু পরীক্ষা দেবেন, সেক্ষেত্রে হল খুলে দিলেও সামাজিক দূরত্ব রেখেই সবাই থাকতে পারবেন। তাছাড়া হলে থাকার সুযোগ না পেলে যদি মেসে থাকতে হয়, সেটি অনেকের জন্যই আর্থিক সক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সেতু সীন সারাবাংলাকে বলেন, পরীক্ষা ও হল খোলা— দু’টি বিষয় একসঙ্গে বিবেচ্য। কেননা পরীক্ষা নিলেই মানসিক চাপ কমবে— এমন নয়। পরীক্ষা নিতে হবে চাপমুক্ত রেখেই। যেহেতু সবকিছুই স্বাভাবিক, সেক্ষেত্রে হল খুলে পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে মানবিক ও সুবিবেচিত সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছি।

সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে বিশ্ববদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী শিমুল বলেন, যেহেতু হল খুলবে না, সেহেতু অন্তত পরীক্ষার ২০ দিন আগে নোটিশ দেওয়া দরকার ছিল। কারণ রাজশাহী গিয়ে শিক্ষার্থীদের নতুন করে মেস ঠিক করা, হল থেকে সবকিছু শিফট করার জন্য অনেক দিন সময় লেগে যাবে। এজন্য হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়ার ভোগান্তির বিষয়ে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জীবন সিদ্দিকী বলেন, হুট করে ক্যাম্পাস খোলাতে মেস পাওয়া অনেক দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। এ মুহূর্তে মেসে থাকার মতো পর্যাপ্ত টাকা-পয়সাও অনেকের কাছে নেই। যদি মেসে থেকে পরীক্ষা দিতে সমস্যা না হয়, তাহলে হলে থেকেও তো পরীক্ষা দেওয়া যাবে। হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নিলেই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছি।

শিক্ষার্থীরা আরও বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই স্বল্প সময়ের মধ্যে রাজশাহী এসে নিজেদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারবেন না। অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যাদের দূর থেকে দূরতম কোনো আত্মীয়ও রাজশাহীতে থাকেন না এবং অনেকের কোথাও ভাড়া থাকার আর্থিক সামর্থ্য নেই। তাই শুধু পরীক্ষার্থীদের জন্য হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানান তারা।

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত) ও প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষাথীদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই অনার্স ফাইনাল ও মাস্টার্সের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেন তারা পিছিয়ে না থাকে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আবাসিক হল বন্ধ রেখেই পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে।’

তিনি বলেন, এর আগে পরীক্ষা না হওয়ায় চাকরির আবেদন করতে পারছে না বিষয়টি উল্লেখ করে অনেক শিক্ষার্থী নিজ দায়িত্বে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে বলে আমাদের লিখিতভাবে জানিয়েছে। তাই চাকরির পরীক্ষা ও সেশনজট লাঘবের জন্য একটু কষ্ট হলেও বাইরে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।

হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক লুৎফর বলেন, যখনই হল খুলবে, তখনই অন্য শিক্ষার্থীরাও পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানাবে। তখন তাদেরও সুযোগ দিতে হবে এবং জনসমাগম হবে। এই মহামারি মধ্যে শিক্ষার্থীদের এতটুকু কষ্টের চেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয় মাথায় রেখেই হলে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।


শর্টলিংকঃ