হাতুড়ি দিয়ে দুই পা ভাঙা হলো যুবলীগ নেতার


ইউএনভি ডেস্ক:

বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভা মেয়র পদে বিজয়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পুলিশের খাতায় পলাতক মুক্তার আলীর ক্যাডাররা এবার হাতুড়ি দিয়ে দুই পা ভাঙলেন যুবলীগ নেতার।

মুক্তার আলী

বিস্ফোরক মামলার এই আসামি মেয়র পদে শপথ নেওয়ার পরদিন মঙ্গলবার পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আজিবর রহমানের (৩২) পা ভেঙে দেওয়া হলো। আড়ানীর রুস্তমপুর-মোমিনপুর ইদগাহ মাঠের সামনে এই নৃশংসতা চালানো হয়। মুক্তার বাহিনীর হামলায় নির্বাচনের আগে এবং পরে আওয়ামী লীগের ২৫-৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ৩৫-৪০টি দোকানে লুটপাট এবং ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর আগে তার বাহিনীর হামলায় দুই নেতাকর্মী এখন পঙ্গু। তবে মুক্তার ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীরা মুখ খুলছেন না।

বিস্ফোরক মামলার পলাতক আসামি হলেও মুক্তার এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মঙ্গলবার সকালেও তিনি পৌর কার্যালয়ে অফিস করেছেন। পুলিশ বলছে, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পলাতক আসামি হয়েও শপথ নেওয়ার পর মুক্তার বাহিনীর তাণ্ডব বেড়েছে। তবে মুক্তারের ক্ষমতার উৎস নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং এলাকাবাসীর মাঝে প্রশ্ন উঠেছে।

জামিন না নিয়ে শপথগ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করে মঙ্গলবার বিকালে মুক্তার আলী যুগান্তরকে বলেন, আমি কীভাবে শপথ নিলাম, সেটি কি আপনাকে (প্রতিবেদককে) বলতে হবে। এটি প্রশাসন দেখবে। আর শপথ নেওয়ার আগে ও পরে আমার লোকজন কারও ওপর হামলা করেনি। লুটপাট বা অগ্নিসংযোগের সঙ্গেও আমার লোকজন জড়িত না। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি বা তার লোকজন জড়িত নন বলেও দাবি করেন।

সর্বশেষ মুক্তারের ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের হাতুড়ি ও লোহার রডের আঘাতে আহত যুবলীগ নেতা আজিবর রহমানকে উদ্ধার করে প্রথমে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। মুক্তার বাহিনীর ৮-১০ জন ক্যাডার হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন আহত যুবলীগ নেতা আজিবর রহমানের স্ত্রী নাজমা রহমান।

এছাড়া মঙ্গলবার সকালে একটি পোশাকের দোকানে লুটপাট চালায় তারা। আড়ানী পৌর সদরের হাফিজুর রহমানের দর্জিবাড়ি নামের একটি পোশাকের দোকান থেকে ছয়টি দামি কোট জোরপূর্বক নিয়ে যায় মুক্তারের ক্যাডাররা। এ সময় দোকান মালিক হাফিজুরকে মারধর করা হয়েছে। এছাড়া শপথগ্রহণের পরই সোমবার সন্ধ্যায় পৌর সদরের গনেশ কুমার দাসের একটি মোবাইল ফোনের দোকানে হানা দেয় মুক্তারের সহযোগীরা। এ সময় ছয়টি মোবাইল ফোন সেট তারা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। দোকানের মালিক টাকা চাইলে তাকে মারধর করা হয়। এ সময় মুক্তারের সহযোগীরা বলেন, ফোনের দাম মেয়র পরিশোধ করবেন।

আড়ানী পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত মেয়রপ্রার্থী শাহিদুজ্জামান শাহিদ বলেন, আমি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে শঙ্কিত। নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা দিতে পারছি না। মুক্তার এবং তার ক্যাডাররা বিস্ফোরক মামলার আসামি। কিন্তু পুলিশ তাদের ধরছে না। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন অসহায়। অদৃশ্য শক্তি মুক্তারের ক্ষমতার উৎস। মুক্তারের ক্ষমতার ব্যাপারে আমি প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছি না। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকের কাছে আমি বিচার চাইছি।

এ ব্যাপারে চারঘাট (বাঘা ও চারঘাট) সার্কেলের সিনিয়র এএসপি নূরে আলম বলেন, মুক্তার আলী জামিন নিয়েছেন কি না, আমি জানি না। আর আজ (মঙ্গলবার) আহত যুবলীগ নেতা আজিবর রহমানের স্ত্রী নাজমা রহমান বাদী হয়ে মুক্তার আলীকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলার আসামিদের আটকের জন্য অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।

এদিকে আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনের দুদিন আগে ১৪ জানুয়ারি রাতে মুক্তার আলীর নেতৃত্বে ২০টি মোটরসাইকেলে তার ক্যাডাররা আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহিদুজ্জামান শহিদের পথসভায় সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় বোমা ও গুলি ছোড়া হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনি কার্যালয়। আড়ানী পৌরসভা সংলগ্ন তালতলা বাজারে ৩৫-৪০টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ মেয়রপ্রার্থী শাহিদের ভাগনে তুষার এবং আওয়ামী নেতাকর্মী চেরু, লাটু, সোহানুর, শফিকুল, বিরাজ, মিলনসহ ২৫-৩০ জন আহত হন। এ ঘটনায় মেয়র মুক্তারকে প্রধান আসামি করে ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০০ থেকে ৪৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন বাঘা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান নিপুণ।

সূত্র: যুগান্তর


শর্টলিংকঃ