হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ আভিজ্যের প্রতীক ‘ধানের গোলা’


আগের যুগে কৃষকের ঘরের ধান সংরক্ষণে ব্যবহার করা হতো গোলা। কিন্তু কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ঐতিহ্যবাহী গোলা। অথচ এক সময় সমাজের নেতৃত্ব নির্ভর করতো কার কতটি ধানের গোলা আছে এ হিসেব কষে। কন্যা পাত্রস্থ করতেও বরপক্ষের বাড়ি থেকে ধানের গোলার খবর  নেয়া হতো, যা এখন শুধু রূপকথার মতোই।


গ্রাম অঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ দিয়ে গোল আকৃতির তৈরি করা ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। গোলার মাথায় থাকত টিনের তৈরি পিরামিড আকৃতির টাওয়ারের মতো, যা দেখা যেত অনেক দূর থেকে। গোলা নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আগে দক্ষ শ্রমিক ছিল। এখন আর দেশের বিভিন্ন জেলায় শহর থেকে আসা গোলা নির্মাণ শ্রমিকদের দেখা মিলে না। পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

গ্রাম অঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ, বাঁশ ফাটিয়ে কাবারী ও কঞ্চি দিয়ে প্রথমে গোল আকৃতির কাঠামো তৈরি করা হত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্গ অথবা আয়তক্ষেত্র আকারে গোলা তৈরি করা হত। এরপর তার গায়ের ভেতরে-বাইরে মাটির আস্তরণ লাগানো হতো। এর মুখ বা প্রবেশ পথ রাখা হতো বেশ উপরে (ধান বের করার জন্য অনেকে নিচে বিশেষ দরজা রাখতেন) যেন চোর-ডাকাতরা চুরি করতে না পারে। ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। গোলার মাথায় থাকত বাঁশ ও খড়ের তৈরি বা টিনের তৈরি ছাউনি। গোলায় শুকানো ধানের চাল হতো শক্ত।

কিন্তু সাম্প্রতিক কালে গোলায় তোলার মতো ধান আর তাদের থাকে না। গোলার পরিবর্তে কৃষকরা ধান রাখা শুরু করে ঘরের দোতলায় আবার যাদের একটু বেশী ধান রয়েছে তারা স্থানীয় আড়ৎদারদের একটি হিসাব কষে দিয়ে দেন। তবে কালের সাক্ষী হয়ে আজও ধান রাখার গোলা রেখে স্মৃতি বহন করছেন নিয়ামতপুর উত্তরবাড়ীতে সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আজিজুর রহমানের বাড়ীতে সেখানেই পাঁচটি ধানের গোলা রয়েছে।

মরহুম আজিজুর রহমানের ছেলে নিয়ামতপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান নইম বলেন, আমার দাদার আমল থেকে রয়েছে এই ধানের গোলা। আমার দাদা, তারপর আমার বাবা তার তার আমরা সেই স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছি। আমাদের ছাড়াও এখানে আমার প্রতিবেশী মরহুম আনিসুর রহমানের ছেলেদের দুইটি এবং আমার মামা মরহুম আকতারুজ্জামানের ছেলে নিয়ামতপুর সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান বিপ্লবের একটি ধানের গোলা রয়েছে।

এছাড়াও নিয়ামতপুর উপজেলায় হাতেগুনা কয়েকটি ধানের গোলা রয়েছে মাত্র। ধান আবাদের উপকরণ কিনতেই কৃষকের বিস্তর টাকা ফুরায়। কৃষকের ধানের গোলা ও ডোলা এখন শহরের বিত্তশালীদের গুদাম ঘরে পরিণত হয়েছে। কৃষকের ধান চলে যাচ্ছে একশ্রেণীর অসাধু মুনাফা লোভী ফড়িয়া ও আড়ত ব্যবসায়ীর দখলে। ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে পাকা ইমারত গুদাম ঘরে মজুদ করে রাখা হচ্ছে হাজার হাজার টন ধান চাল।

-তোফাজ্জল হোসেন : নিয়ামতপুর , নওগাঁ।


শর্টলিংকঃ