হিন্দু সম্প্রদায়ের আট কোটি টাকার জমি দখলের অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজশাহীতে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের তিন ভাইয়ের জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দখল করা জমিতে ইতোমধ্যে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

একজন জামায়াত সমর্থকের নেতৃত্বে দখল করা এ জমির দাম আট কোটি টাকা বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে জমি দখলের ঘটনায় গত ১ সেপ্টেম্বর মহানগরীর চন্দ্রিমা থানায় তিন ভাই বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করেছেন। কিন্তু একমাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও থানার ওসি এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে রয়েছে অভিযোগ।পাশাপাশি মূল্যবান এ জমি উদ্ধারে সংখ্যালঘু তিন ভাই রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।

থানায় দায়ের করা এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, মহানগরীর কুমারপাড়ার মৃত গোপাল চন্দ্র ঘোষের তিন ছেলে সুপদ ঘোষ, কালা চাঁদ ঘোষ ও প্রশান্ত কুমার ঘোষের মহানগরীর ছোট বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া এলাকায় ২ বিঘা ১৫ কাঠা জমি রয়েছে। ১৯৮৫ সালের ২৮ জানুয়ারি তিন ভাইকে এ পরিমাণ জমি দানস্বত্ত্বে রেজিস্ট্রি করে দেন তাদের দুই কাকা (বাবার ভাই) মাধব ঘোষ এবং রাজকুমার ঘোষ।

এরপর থেকে তিন ভাই আইন অনুযায়ী ভূমি খারিজ ও নামজারি সম্পন্ন করেন। বৈধ মালিক হিসেবে তারা মহানগরীর বড়কুঠি ভূমি অফিসে নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর জমা দিয়ে আসছেন। জমিটি ধানী হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়েছিল। আকস্মিকভাবে ১৯৯৫ সালে স্থানীয় প্রভাবশালী জামায়াত সমর্থক অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন, আব্দুল কুদ্দুস, নজরুল ইসলামসহ ১০জন ভূমিদস্যু তাদের মালিকানাধীন জমি জোরপূর্বক দখল করে নেন। এদের মধ্যে কয়েকজন ইতোমধ্যে বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, জমি দখলের ঘটনার শুরুতেই তিন ভাই প্রতিবাদ করেন। এসময় অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে সশস্ত্র ভূমিদস্যুরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের তিন ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাড়া করেন। তারা ভূমিদস্যুরা এসময় বলেন, আবার এই জমিতে তোরা এলে জানে মেরে ফেলবো। তোদের তিন ভাইকে গুম করে ফেলবো। ঘটনার তিনমাস পর আবারও জমিতে তিন ভাই গেলে সশস্ত্র ভূমিদস্যুরা আবার তাদের তাড়িয়ে দেয়।

তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় সুপদ ঘোষ বলেন, জমি উদ্ধারের জন্য গত ২৫ বছর থেকে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। ভূমিদস্যুদের আর্থিক প্রভাব এবং পেশি শক্তির কাছে আমরা অসহায়। এছাড়া ১৯৯৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে খুব সহজেই অ্যাডভোকেট মকবুল এবং তার সহযোগীরা আমাদের জমি দখল করে নিয়েছেন।

তিনি বলেন, যারা জমি দখল করেছেন তারা অসংখ্যবার আমাদের তিন ভাইকে সরাসরি হত্যার হুমকি দিয়েছেন। দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন। তৎকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় আমরা তিন ভাই নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রয়েছি নিরাপত্তাহীনতায়। এছাড়া থানায় এজাহার দেয়ার একমাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এ কারণে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।

আরেক ভাই কালা চাঁদ ঘোষ বলেন, আমাদের দখল হওয়া জমির পরিমাণ দুই বিঘা ১৫ কাঠা। ওই এলাকায় বর্তমানে কাঠাপ্রতি জমির দাম ১৫ লাখেরও বেশি। সে হিসাবে ওই পরিমাণ জমির দাম আট কোটি টাকার অধিক। এ জমিটিই আমাদের সম্পদ। এছাড়া আর কিছু নেই। জমিটি প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় কোন কিছু করতে পারছি না।

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে আছি। জবর দখল হওয়ায় বর্তমানে আমরা তিন ভাই আর্থিক কষ্ট ও দারিদ্রতার মধ্যে দিনযাপন করছি।সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে সরেজমিনে দেখা গেছে, দখলকৃত জমিতে সাতটি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অ্যাডভোকেট মকবুলের সাদা রঙ করা তিন তলা বাড়ি দেখা গেছে। এছাড়া আব্দুল কুদ্দুস ও নজরুল ইসলামসহ অন্যরা মোটা অংকের টাকা খরচ করে বিলাসবহুল বাড়ি বানিয়েছেন।

জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ অস্বীকার করে অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন বলেন, জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ সঠিক না। আমরা সুলতান আহমেদ নামে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট এলাকার এক ব্যক্তির কাছ থেকে জমি কিনেছি। এছাড়া জামায়াতের রাজনীতির সাথে আমার সম্পৃক্ততার অভিযোগটিও ভিত্তিহীন।

এ ব্যাপারে চন্দ্রিমা থানার ওসি সিরাজুম মনির বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। কাজ চলছে। নিরব থাকার অভিযোগ সঠিক না। তদন্ত একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণের সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


শর্টলিংকঃ