১১ দিনের জরুরি পাসপোর্ট পেতে সময় লাগছে চার মাস!


জিয়াউল গনি সেলিম :

সারাদেশেই মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বইয়ের সংকট তীব্র হয়েছে। জরুরি ফি দিয়ে আবেদনের পরও নির্ধারিত সময়ে মিলছে না পাসপোর্ট। অপেক্ষা করতে হচ্ছে  চার থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত।  চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যেতে রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে যারা আবেদন করেছেন, তারাও বিপাকে পড়েছেন। সাধারণ বা জরুরি ফি’র কোনো পার্থক্য নেই এখন। সবারই সময় লাগছে প্রায় একই সমান।

রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট  ও ভিসা অফিস

রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়ার এলাকার নাহিদ সারোয়ার তার অসুস্থ বাবার চিকিৎসার জন্য ভারত যেতে পাসপোর্টের আবেদন জমা দিয়েছিলেন বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে। আবেদন অনুয়ায়ী ১১দিন পর গত বছরের ২৮ নভেম্বর তার পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা ছিল। প্রায় তিন মাস অপেক্ষার পর বৃহস্পতিবার পাসপোর্ট নিতে বিভাগীয় কার্যালয়ে এসেছিলেন নাহিদ সারোয়ার।

তিনি জানান, বাবার চিকিৎসার জন্য অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে তিনিও ভারত যেতে চেয়েছিলেন। এজন্য জরুরি পাসপোর্টের আবেদন করেন। তিনি নির্ধারিত সময়ের দীর্ঘদিন পরও পাসপোর্ট  পান নি তিনি। তার বাবার অসুস্থতা বাড়তে থাকায় বাধ্য হয়ে বিকল্প উপায়ে ভারতে পাঠিয়েছিলেন।কিন্তু ছেলে হয়েও তিনি যেতে পারেন নি।এর কারণ, পাসপোর্ট হাতে না পাওয়া। এনিয়ে তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সাড়ে তিন মাস পর পাসপোর্ট পেলাম। এরইমধ্যে বাবা চিকিৎসা নিয়ে ভারত থেকে ফিরে এসেছি। এই পাসপোর্ট এখন আর আমার প্রয়োজন নেই। কী করবো এই পাসপোর্ট নিয়ে’!

নাহিদের মতো শত শত আবেদনকারী দুর্ভোগে পড়েছেন। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত বেশি সময় লাগছে পাসপোর্ট পেতে। আবেদনপত্রে দেয়া নির্ধারিত তারিখের পর থেকে অনেকেই ধরনা দিচ্ছেন পাসপোর্ট অফিসে। কিন্তু সেখানেও কোনো সমাধান নেই।হাতেগোনা কিছু পাসপোর্ট আসছে ঢাকা থেকে।

সকল প্রক্রিয়া শেষে নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য কর্তৃপক্ষ মোবাইলে এসএমএস পাঠায় আবেদনকারীদের কাছে। কিন্তু ৩-৪ মাস পরও এসএমএস না পাওয়ায় অনেকেই ভীড় জমাচ্ছেন পাসপোর্ট অফিসের বিতরণ শাখায়। পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা জানান, আবেদনকারীদের বেশির ভাগই চিকিৎসার জন্য ভারত যেতে চান। কিন্তু পাসপোর্ট না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা।

এদিকে, চলতি বছরের ২২জানুয়ারি আগে ঢাকায় চালু হয়েছে ই-পাসপোর্ট। ই-পাসপোর্টের কারণে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বইয়ের প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে বলে ধারণা ছিল কর্তৃপক্ষের। একারণে এমআরপি বই মজুদও কম করা হয়। কিন্তু সারাদেশে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু না হওয়ায় এখন পাসপোর্ট বইয়ের সংকট তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের সহকারী পরিচালক আজমল কবির ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে জানান, তাঁর অফিসে এখন আট হাজার পাসপোর্ট বিতরণ প্রক্রিয়া আটকে অছে। প্রতিদিনই নতুন আবেদন জমা পড়ছে প্রায় দেড়শ’। কিন্তু সে তুলনায় ঢাকা থেকে প্রিন্ট হয়ে আসছে খুব কমসংখ্যক’। তিনি আরো জানান,  ই-পাসপোর্ট চালু ও এমআরপির মধ্যবর্তী সময় এখন।  একারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে এ সমস্যা শিগগিরই কেটে যাবে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতার কারণে এমন বিপদে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এই সেবার পুরোপুরি সুফল পেতে বিভাগীয় অফিসগুলোকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর রাজশাহী শাখার সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন বলছেন, সারাদেশের পাসপোর্ট মূল কাজটিই হয়ে থাকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। একারণে আবেদনকারীদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এই ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। বিশেষ করে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসগুলো আরো ক্ষমতা দিয়ে শক্তিশালী  করা উচিত।

উল্লেখ্য, নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত ফি প্রদান সাপেক্ষে আবেদনের ১১কার্যদিবসের মধ্যে জরুরি ও ২১দিনের মধ্যে সাধারণ পাসপোর্ট আবেদনকারী হাতে পাওয়ার কথা।


শর্টলিংকঃ