Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

১৫ আগস্টের মূল ষড়যন্ত্রকারীদের একজন জিয়া


ইউএনভি ডেস্ক:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শুধু খন্দকার মোশতাক ও কয়েকজন সেনা অফিসারই না, জিয়াউর রহমানও জড়িত ছিলেন। ১৫ আগস্টের সেই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ওয়েবিনারে আলোচকদের বক্তব্যে এমনটাই প্রতিফলিত হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তান, লিবিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও জড়িত ছিল বলে জানিয়েছেন বক্তারা।

বুধবার (১৯ আগস্ট) রাতে প্রচারিত এই ওয়েবিনারের বিষয়বস্তু ছিল ‘৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশ: বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন’। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন,‘যতদিন পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেষ খুনিকে আইনের আওতায় আনতে না পারব, আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে কখনো সফল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দাবি করতে পারব না। এটা যে কত বড় গ্লানি, জাতি হিসেবে তার চেয়ে বড় গ্লানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।’

কলামিস্ট ও সাবেক ছাত্রনেতা সুভাষ সিংহ রায় বলেন,‘ইনডেমনিটি দেয়ার যে বজ্জাত অভ্যাস এটা বিএনপির জন্মলগ্ন থেকেই। জিয়াউর রহমান তার সাঙ্গপাঙ্গ দিয়ে ১৫ আগস্টকে নাজাত দিবস পালন করতে উৎসাহ দিত। এমনকি ১৫ আগস্ট তার স্ত্রী খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিন পালনের নামে যা চলছে তা নেক্কারজনক।’

গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ বদরুল আহসান বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৫ আগস্টের ঘটনাটি জানতো বলে অনেকে মনে করেন। তখন এম্বাসিতে ফিলিপ চেরীর সঙ্গে খুনি চক্র কয়েকবার দেখা করেছে। ফারুক রহমান গাদ্দাফির সঙ্গে দেখা করেছিল। ১৯৭৩ সালেই তার পরিকল্পনা ছিল একটা কিছু ঘটাবে। তারা লিবিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। লিবিয়ার কানেকশনটা বজায় রেখেছে।’

গাদ্দাফির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথোপকথনের সূত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘গাদ্দাফি শেখ মুজিবকে বলেছিল তোমরা ইসলামী রাষ্ট্র করো না কেন? বঙ্গবন্ধু উত্তর দিয়েছিলেন আমরা বাঙালি, আমরা ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র, এটা আমরা করব না।’

বদরুল আহসান বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে জুলফিকার আলী ভুট্টো তার অফিসের লোকজনকে জিজ্ঞাস করল ঢাকা থেকে কোনো খবর আছে কিনা? তার মানে সে আগে থেকে এমন কিছু জানত। এরপরে তারা পাকিস্তান রেডিওতে খবরটি প্রচার করল, বিশ্ববাসী জানল সেই ক্যু এর কথা।’

লেখক হাসান মোর্শেদ বলেন, ‘১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকে নভেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর খুনি সামরিক অফিসাররা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ১ সপ্তাহের মধ্যে জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর প্রধান করে সামরিক গোষ্ঠী। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে চায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাদের আশ্রয় না দিলে তারা ব্যাংকক হয়ে লিবিয়ায় চলে যায়।’

তিনি বলেন, ‘১৯৮৭ সালের আগস্টের ৩ তারিখ ফ্রিডম পার্টি নামের একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। এই দলের প্রধান হলেন বঙ্গবন্ধু খুনি কর্নেল সৈয়দ ফারুক, সঙ্গে বজলুল হুদা, রশিদ এরা ছিল। এরশাদ এই খুনিদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে দল গঠনের সুযোগ দেন।’

অস্ট্রেলীয় বিশ্ববিদ্যালয় RMIT’র শিক্ষক প্রফেসর শামস রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা একটা নীল নকশার অংশ। এই নীল নকশায় জেনারেল জিয়া যেমন জড়িত ছিলেন, ঠিক তেমনই মোস্তাক জড়িত ছিল, আরও ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষী কিছু সামরিক কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিক ও গবেষক লরেন্স লিফশুলজ তার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে কিসিঞ্জার ঘৃণা করতেন এবং মুজিবকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্রে তিনিও যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে যে যার মতো ভূমিকা পালন করে গেছে বলেই তাকে হত্যা করা সহজ হয়ে গেছে।’ আর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়া যে জড়িত ছিল সেটা বোঝার জন্য ধারাবাহিক ভাবে গবেষণা করলেই কথাটার সত্যতা প্রমাণ হবে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।

সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের সহযোগিতায় এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই ওয়েবিনারের অতিথি ছিলেন- পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ বদরুল আহসান, কলামিস্ট ও সাবেক ছাত্রনেতা সুভাষ সিংহ রায়, অস্ট্রেলীয় বিশ্ববিদ্যালয় RMIT’র শিক্ষক প্রফেসর শামস রহমান এবং লেখক ও গবেষক হাসান মোরশেদ।

দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব ছাড়াও অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচারিত হয় বিজয় টিভি, বিডি নিউজ২৪.কম, বাংলা নিউজ২৪.কম, বার্তা২৪.কম, সমকাল, যুগান্তর, ইত্তেফাক, সারাবাংলা.কম, ভোরের কাগজ, জাগো নিউজ২৪.কম ও বাংলাদেশ জার্নালের ফেসবুক পাতায়।


Exit mobile version