- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

৯ দফা দাবিতে সিএনজি ধর্মঘট দুর্ভোগে জনগণ


ঢাকা মহানগরীতে অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রাইড শেয়ারিং ও পুলিশি হয়রানি বন্ধসহ ৯ দফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সিএনজি অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সংগঠন। ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে। তবে ধর্মঘটকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অধিকাংশ সিএনজিচালক আজ সকাল থেকেই রাস্তায় বের হয়েছেন। তবে অন্যদিনের তুলনায় সিএনজি ভাড়া অতিরিক্ত চাচ্ছেন চালকরা।

অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। ধানমন্ডির জিগাতলা, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, পল্টন, মতিঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

জিগাতলার পোস্ট অফিসের গলিতে প্রতিদিনই যাত্রীর অপেক্ষায় কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আজ সকালেও তিন-চারটি সিএনজি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আমিনুল ইসলাম নামের এক সিএনজি অটোরিকশা চালকের কাছে যাত্রী সেজে এ প্রতিবেদক জানতে চান, তিনি মতিঝিল যাবেন কি না। তিনি যাবেন বলে জানান। ভাড়া কত জানতে চাইলে বলেন, ২৫০ টাকা। এত ভাড়া কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে আমিনুল বলেন, ‘খুব জ্যাম, তাই ভাড়া একটু বেশি।’ অথচ ঝিগাতলা থেকে মতিঝিলের সাধারণ ভাড়া ১০০-১৫০ টাকা।

আমাদের কথোপকথনের মাঝেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য একজন বলে উঠলেন, আজ সিএনজি ধর্মঘট চলছে, তাই রাস্তায় সিএনজি কম। ফলে ভাড়া বেশি চাচ্ছে চালকরা। আজ ধর্মঘট, তাহলে আপনি সিএনজি চালাচ্ছেন কেন- জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কামলার আবার ধর্মঘট। আগে পেটের খাবার জোগাড় করতে হবে।’

সিটি কলেজের সামনে থেকে অফিসের কাজে গুলশান-১ যাওয়ার জন্য সিএনজির খোঁজ করছিলেন সাগর নামের একজন বেসরকারি কর্মকতা। কত টাকায় যাবেন জানতে চাইলে সিএনজিচালক বলেন, ৪০০ টাকা। পরে তিনি বাধ্য হয়ে ২৫০ টাকা ভাড়ায় ওই সিএনজি ভাড়া করেন। তিনি বলেন, ‘এখন প্রতিটি সিএনজিতে প্রাইভেট লিখে রেখেছে; তাই মিটারে যাওয়ার কোনো সিস্টেমই নেই। আজ ধর্মঘটের জন্য ভাড়ায় নৈরাজ্য চলছে।’

তবে আশার কথা হচ্ছে, ৯ দফা দাবিতে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট পালনের পর আবারও গাড়ি চালানো শুরু করেছেন চালকরা। বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং ড্রাইভারস অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্য সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা আজ সকাল থেকেই আবার মোটরসাইকেল চালানো শুরু করেছি। ফলে আজ থেকে সাধারণ মানুষ রাইড শেয়ারিংয়ের সুযোগ পাচ্ছে।’

ধর্মঘটের বিষয়ে অটোরিকশা মালিক-শ্রমিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৫ হাজার ৬৯৬টি ভাড়ায়চালিত সিএনজি অটোরিকশা ঢাকা মহানগরীতে বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের অনুমতি রয়েছে। প্রাইভেট সিএনজি অটোরিকশা অবৈধভাবে ভাড়ায় চলছে। ঢাকা জেলা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলার সিএনজি অটোরিকশাসহ আরও ১৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশা অবৈধভাবে ঢাকা মহানগরীতে চলাচল করছে। তাদের অভিযোগ, অবৈধভাবে চলাচল করা এসব গাড়ির মালিক পুলিশ সার্জেন্ট ও তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং অবৈধ ব্যবসায়ীরা। অবৈধ গাড়ি থেকে মাসোহারার ভিত্তিতে কোটি কোটি টাকা পুলিশ সার্জেন্টরা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

সিএনজি অটোরিকশা মালিক-শ্রমিকদের ভাষ্য, বৈধ গাড়ি রাস্তায় প্রতিনিয়ত নানা অজুহাতে চালকদের নামে মামলা, গাড়ির কাগজের ওপর মামলা, কেস স্লিপের ওপর মামলা, স্টিলের গ্রিল, বাম্পার রঙ করার নামে মামলা, সামনে মোটরগার্ডের ওপর বাম্পারের জন্য মামলা, অহরহ ভিডিও মামলাসহ অসংখ্য ধরনের মামলা ও রেকারিং প্রতিনিয়ত চলছে। রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের নামে ওভাই, পাঠাও, উবারের অবৈধ গাড়ি চালনা, চারবার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হলেও সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া বৃদ্ধি না হওয়া, চালকদের লাইসেন্স নবায়নে পুনরায় ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে উৎকোচ গ্রহণ ও চালক হয়রানিসহ সুপরিকল্পিতভাবে এ খাতকে ধ্বংসের দিকে নেয়া হয়েছে।

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মানববন্ধন, থানায় থানায় কর্মিসভা ও গণসংযোগ এবং মালিক-শ্রমিক মতবিনিময় সভা করেছে সিএনজি অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক ইউনিয়ন। আজ মঙ্গলবার থেকে তারা ধর্মঘট পালন করবে।