বিএসএফের গুলিতে পাঁচ দিনে ৮ বাংলাদেশি নিহত


ইউএনভি ডেস্ক:

উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী-বিএসএফের গুলিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গত ৫ দিনে এই অঞ্চলের সীমান্তে ৮ বাংলাদেশি নাগরিক বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তেই নিহত হয়েছে ৬ জন। বাকি দু’জন ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাট সীমান্তে নিহত হয়েছে। এ সময় বিএসএফের গুলিতে আহত হয়েছে আরও ১০ জন। এসব সীমান্তে নিখোঁজ রয়েছে ২০ জনের বেশি বাংলাদেশি রাখাল।

বিএসএফের গুলিতে পাঁচ দিনে ৮ বাংলাদেশি নিহত

নিখোঁজদের মধ্যে অজ্ঞাত আরও দু’জনকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে পিটিয়ে মেরে মরদেহ বিএসএফ মাটিচাপা দিয়েছে বলে সীমান্তের সূত্রগুলো দাবি করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত থেকে গবাদিপশু, মাদক ও অস্ত্র আনতে গিয়েই এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে বলে এলাকার বাসিন্দা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন।

বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও সীমান্তে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ঊর্ধ্বতন মহলে প্রতিবেদন দিয়েছে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধে গবাদিপশুর খাটালগুলো পুরোপুরি বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে এসব প্রতিবেদনে। সীমান্তে হত্যা বন্ধে সাময়িকভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের গবাদিপশুর খাটালগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে বলে বিজিবির রাজশাহী সেক্টর কমান্ডারের দফতর সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় খাটাল বন্ধ রাখাসহ সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিজিবি। কর্মকর্তারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সীমান্ত অতিক্রম না করার জন্য সতর্ক ও সচেতন করছেন। রাজশাহী অঞ্চলের কয়েকটি সীমান্তে মসজিদে মাইকিং করে এ বিষয়ে প্রচারণা শুরু করেছে বিজিবি। কঠোর অবস্থানের পরও বুধবার রাতে আবদুল খালেক নামের একজন গরু চোরাকারবারি শিবগঞ্জের রঘুনাথপুর সীমান্ত পথে ১১টি গরু ও মহিষ নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। এ সময় বিজিবি একজন রাখালকে গ্রেফতার ও গরু জব্দ করে মামলা করেছেন। তবে বিজিবির অবস্থান টের পেয়ে চোরাকারবারি খালেক পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্তে গবাদিপশুর খাটাল থাকার কারণেই সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বেড়েছে। এর মধ্যে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম ও রাজশাহী সীমান্তে ২০টির বেশি খাটাল চালু রয়েছে। মোটা টাকার লোভে এসব খাটালের জন্য গরু-মহিষ আনতে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাচ্ছে একশ্রেণির লোক।

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তির তদবির ও পৃষ্ঠপোষকতায় সীমান্তের অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খাটাল অনুমোদন দিচ্ছে। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন অনেকটাই অসহায়। পাশাপাশি উচ্চ আদালতে রিট করেও খাটাল চালু করা হচ্ছে এই অঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তে। গরু মহিষ থেকে উঠানো বিপুল পরিমাণ চাঁদার টাকার সিংহভাগই চলে যাচ্ছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পকেটে। সীমান্তে নিহতদের অধিকাংশই গরু-মহিষের রাখাল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এজেএম নুরুল হক বৃহস্পতিবার  জানান, খাটাল থাকার কারণেই সীমান্তে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটছে। খাটালের আড়ালে হুণ্ডির মাধ্যমে ভারতে টাকা পাচার হচ্ছে। বিপরীতে ভারত থেকে মাদক ও অস্ত্র আসছে। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে কোনো খাটালের সুুপারিশ দিতে চান না। কিন্তু এমন উঁচু স্তর থেকে তদবির আসে যে সুপারিশ দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।

উৎস: যুগান্তর

আরও পড়ুন  শতবর্ষী সেই বৃদ্ধার ঠাই হতে যাচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে


শর্টলিংকঃ