দার্জিলিং ভ্রমণে যা জানা জরুরি


বিপাশা আনজুম ঊষা :

দার্জিলিং ভারতের খুবই সুন্দর একটি হিল স্টেশন।পর্যটন কেন্দ্র হিমালয় পর্বতের পাদদেশে প্রায় ৭ হাজার ফিট উপওে এই শহরটি গড়ে উঠেছে। শত বছর পুরনো হেরিটেজ, টয়ট্রেন ও সুগন্ধি চা এর সুখ্যাতি রয়েছে। বিশাল পাহাড় আর সাদা মেঘের মধ্যে অবস্থিত শহরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ব্রিটিশরা নাম দেয় দ্য কুইন অব হিলস।

সূর্য  ওঠার সময় পাহাড়ের গায়ের বাড়িঘরের দৃশ্য আপনার মন কাড়বে
সূর্য  ওঠার সময় পাহাড়ের গায়ের বাড়িঘরের দৃশ্য আপনার মন কাড়বে

আজ আমরা জানাবো দার্জিলিং সম্পর্কে।  দার্জিলিং কীভাবে যাবেন কোথায় থাকবেন এবং এখানে কী কী দেখার আছে তাও জানা জরুরি। তাহলে চলুন জেনে নিই-

পর্যটকদের জন্য দার্জিলিং ভ্রমণের সেরা দুটি সময় হল মাস মার্চ থেকে মে মাস এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস। এ সময় সাধারণত আবহমন্ডল ঠান্ডা থাকে এবং আকাশ পরিষ্কার থাকে যার ফলে কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফে ঢাকা দৃশ্য ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রয়ারি মাস নাগাদ দার্জিলিং এ শীতকাল থাকে। দার্জিলিং শীতকাল উপভোগ করতে ও নিউ ইয়ার ও ক্রিসমাস পালন করতে অনেক পর্যটকরা শীতকালে দার্জিলিং ভ্রমণ করতে পছন্দ করে।

দার্জিলিং কীভাবে যাবেন:
দার্জিলিং যাওয়ার জন্য ট্রেনে করে আপনাকে পৌঁছাতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি আর আপনি যদি আকাশ পথে যেতে চান তাহলে বিমানে করে আপনাকে পৌঁছাতে হবে বাগডোগরা এয়ারপোর্ট। ঢাকা থেকে যাওয়ার জন্য রাতে শ্যামলী বাসে যাত্রা করে ভোরে বুড়িমারি স্থল বন্দরে। সকালের খাবার আর ইমিগ্রেশনের সব প্রক্রিয়া শেষ করতে ১০-১১ টা বেজে যাবে। ওপারে চ্যাংড়াবান্দায় ইমিগ্রেশন আনুষ্ঠানিকতা সেরে শ্যামলীর বাসে শিলিগুড়ি। টাকা বা ডলার সরকার অনুমোদিত ডিলারের কাছে ভারতীয় মুদ্রায় পরিবর্তন কওে নিতে হবে। অন্যথায় পরবর্তীতে ভাঙাতে সমস্যা হতে পারে।

চ্যাংড়াবান্দা থেকে ময়নাগুড়ির বাসে দেড় ঘণ্টায় শিলিগুড়ি জিপ স্টেশনে। সেখান থেকে দার্জিলিংগামী টাটা সুমো বা কমান্ডার জিপের টিকিট সংগ্রহ করে আড়াই ঘণ্টায় দার্জিলিং। কলকাতা শিয়ালদহ রেল স্টেশন থেকে সন্ধ্যা ৭ টা ১৫ মিনিটের দার্জিলিং মেল। টিকিট নেবেন ট্যুরিস্টদের জন্য নির্ধারিত কাউন্টার ফেয়ারলি প্যালেস থেকে। পরদিন সকাল ১০ টায় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। এখান থেকে রিকশায় শিলিগুড়ি জিপ স্টেশন।

আর আপনি যদি কলকাতা থেকে বাসে করে যেতে চান তাহলে ধর্মতলা থেকে বাস শিলিগুড়ি । নিউ জলপাইগুড়ি অথবা শিলিগুড়ি থেকে প্রাইভেট ট্যাক্সি বুক করে অথবা শেয়ার ট্যাক্সি করে দার্জিলিং যাওয়া যায়। বাসে করেও যাওয়া যায় দার্জিলিং, শিলিগুড়ি সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ড থকে নর্থ বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাস ছাড়ে বিভিন্ন সময়, আর আপনি যদি বিখ্যাত টয় ট্রেনে করে দার্জিলিং যেতে চান তবে নিউ জলপাইগুড়ি অথবা শিলিগুড়ি থেকে টয় ট্রেনে চাপতে পারেন।

বিখ্যাত টয় ট্রেন
বিখ্যাত টয় ট্রেন

আঁকা বাঁকা পথ ধরে যাওয়ার সময় যখন পড়বে ছবির মত সুন্দর পার্বত্য উপত্যকা আর তার গায়ে গায়ে ছোট ছোট গ্রাম। চায়ের বাগান আর দূরের সবুজে ঢাকা পাহাড়ের সুন্দর দৃশ্য। দার্জিলিং শহরের সব মানের হোটেলে থাকার ব্যাবস্থা। কিছু কিছু হোটেল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়।

কোথায় থাকবেন:

দার্জিলিং এর পৌছে অথবা আগে থেকে বিভিন্ন হোটেল বুকিং ওয়েবসাইট থেকে হোটেল বুক করে নিতে পারেন, হোটেল আগে থেকে বুক করে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। হোটেল বুক করে নেওয়ার আগে জেনে নিবেন গরম জলের ব্যাবস্থা ও হিটারের ব্যাবস্থার ব্যাপারে। দার্জিলিং শহরে সব মানের হোটেল আছে। গচ্ছা দিতে না চাইলে দালাল এড়িয়ে নিজে হোটেল ঠিক করুন। তবে ঠিক করার আগে জেনে নিন গরম পানি আর হিটারের ব্যাবস্থা আর বেড়ানোর জন্য জিপসহ তাৎক্ষণিক সেবার ব্যাপারে ।দার্জিলিংয়ে খাবার-দাবার হোটেলে বাঙালি খাবারসহ সব ধরনের খাবারের ব্যাবস্থাআছে। এছাড়া ভোরবেলায় বেড-টি এবং ডিনারের আগে ইভনিং-টির ব্যাবস্থা থাকে।

দার্জিলিংয়ে কোথায় বেড়াবেন :
১. পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু রেলওয়ে স্টেশন ঘুম।
২. সমুদ্র-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০,০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া থেকে অপূর্ব সূর্যোদয় দেখা।
৩. খুব ভোরে ৮ হাজার ৩’শ ফুট উঁচু টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড় চূড়ায় সূর্যোদয়ের অসাধারণ দৃশ্য।
৪. পৃথিবীর বিখ্যাত প্রার্থনা স্থান ঘুম মোনাস্ট্রি।
৫. ছবির মতো সুন্দর স্মৃতিসৌধ বাতাসিয়া লুপ।
৬. বিলুপ্ত-প্রায় পাহাড়ি বাঘ ঝহড়ি খঁঢ়ধৎফ খ্যাত দার্জিলিং চিড়িয়াখানা।
৭. পাহাড়ে অভিযান শিক্ষাকেন্দ্র হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট। সর্বপ্রথম এভারেস্ট বিজয়ী তেনজিং-রক- এর স্মৃতিস্তম্ভ।
৮. কেবল কারে ১৬ কি. মি. এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ভ্রমণ।
৯. হ্যাপি ভ্যালি টি গার্ডেনে পৃথিবী খ্যাত ব্ল্যাক টি পানের অপূর্ব অভিজ্ঞতা।
১০. যুদ্ধবিধ্বস্ত শরণার্থী কেন্দ্র তিব্বতিয়ান সেলফ হেলপ সেন্টার।
১১. নেপালি জাতির স্বাক্ষর বহনকারী দার্জিলিং মিউজিয়াম।
১২. পৃথিবীর বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহার জাপানিজ টে¤পল।
১৩. ব্রিটিশ আমলের সরকারি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র কাউন্সিল হাউস লাল কুঠির অসাধারণ শৈল্পিক নিদর্শন খ্যাত আভা আর্ট গ্যালারি।
১৪. শতবর্ষের প্রাচীন মন্দির দিরদাহাম টে¤পল।
১৫ .পাথর কেটে তৈরি রক গার্ডেন এবং গঙ্গামায়া পার্ক।
১৬. হিমালয় কন্যা কাঞ্চন-জংঘা, পানির অবিরাম ঝর্ণাধারা ভিক্টোরিয়া ফলস

দার্জিলিংয়ে কেনাকাটা :

দার্জিলিং শহরের লাডেন-লা রোডের মার্কেটে ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে শীতের পোশাক, হাতমোজা, কানটুপি, মাফলার, সোয়েটারসহ লেদার জ্যাকেট, নেপালি শাল এবং শাড়ি, অ্যান্টিক্স ও গিফট আইটেম, লেদার সু, সানগ্লাস। প্রতারনার শংকা নেই। তবে ভ্রাম্যমাণ ফেরি থেকে শাল, শাড়ি না কেনাই ভাল। যেতে বা আসতে শিলিগুড়ির বিধান মার্কেট থেকেও কেনাকাটা করা যায়।দার্জিলিংয়ে ভ্রমণের সময় শীতের শুরু বা শেষের দিকে দার্জিলিং ভ্রমণের জন্য ভালো। দার্জিলিং এ পাহাড়ি ধস নামে বর্ষা মৌসুমে। শীত বা গরমে সে ঝুঁকি নেই। ঠাণ্ডার এড়াতে গরম কাপড় নেয়া জরুরি। হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে চলাফেরা করলে দালাল বা হারিয়ে যাওয়ার শংকা থাকে না।

দার্জিলিংয়ে বেড়ানোর মোট খরচঢাকা থেকে দার্জিলিং থাকা, খাওয়া, যাতায়াত বাবদ প্রতিজনে সর্বোচ্চ খরচ ১৫ হাজার টাকা হতে পারে । বুড়িমারি দিয়ে খরচ কম এছাড়া কলকাতার হয়ে গেলে খরচটা বাড়বে। ট্যুরিজম কো¤পানি প্যাকেজ ট্যুর করে থাকে।দার্জিলিংয়ের আশপাশেদার্জিলিং থেকে মিরিক লেক ও নেপালের পশুপতি মার্কেট জিপে ঘুরে আসুন সকাল ৯টা-বিকাল ৫টার মধ্যে। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেনে কার্শিয়াংয়ে থাকার পরে শিলিগুড়ি। যাত্রার দিন থকে ৫ দিনেই ঘুরে আসতে পারেন। ভারতীয় ভিসার আবেদনপত্র পূরণের সময় স্থলন্দরের নাম উল্লেখ করুন।

ভিডিওতে দেখুন বিস্তারিত


শর্টলিংকঃ