তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
বরই বাগারে চারপাশে বাঁশের খুঁটিতে টানানো হয়েছে কারেন্ট জাল। তাতে দু’টি ঘুঘু ও একটি বুলবুলি পাখি আটকা পড়েছে। এর মধ্যে দু’টি মারা পড়লেও একটি ঘুঘু জাল থেকে বের হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল তখনো। ওই বাগান থেকে বরই তুলছিলেন মালিক শরিফুল ইসলাম। জানালেন, ‘এটা করা ঠিক না, অপরাধ জানি। তবুও পাখির হাত থেকে বরই বাঁচাতেই এই ব্যবস্থা।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলার মাঠজুড়ে এমন কারেন্ট জালের ফাঁদ। তাতে আটকা পড়ে প্রতিদিন মরছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। উপজেলা দু’টির বিস্তৃর্ণ এলাকার উন্মুক্ত আকাশ এখন পাখিদের মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। রোধ করা হচ্ছে পাখিদের অবাধ বিচরণ।
নির্বিচারে পাখি হত্যার এ অপচেষ্টা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও, সে ব্যাপারে সংশ্নিষ্টদের কোনো পদক্ষেপ কিংবা কৃষকদের সচেতন করার ব্যবস্থাও নেয়নি কেউ। এতে করে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন- বরই বাগানে পাখির আক্রমণ ঠেকাতে চাষীরা এ পদ্ধতির প্রয়োগ করছেন। মাঠে সবজি চাষীরাও শত শত বিঘা জমিতে কারেন্ট জাল পেতে পাখি নিধন করছেন। তবে স্থানীয় প্রশাসনকে এসব বিষয়ে অবগত করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও মাছ ধরতে গোপনে এখনও কারেন্ট জাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেই জাল ফল ও সবজি রক্ষায় ব্যবহার করা হচ্ছে জেলার শিবগঞ্জ ও ভোলাহাটের বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে। বিশেষ করে পাখির হাত থেকে বরই বাগান রক্ষায় সবচেয়ে বেশি কারেন্ট জাল ব্যবহার করা হচ্ছে।
মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা তাদের ফলবাগান ও সবজি ক্ষেতে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের বেষ্টনী দিয়ে রেখেছেন। বিশেষ করে কুলবাগান, বেগুন ক্ষেত, পেয়ারাবাগান, পেঁপেবাগানসহ বিভিন্ন ফল ও সবজিবাগানের আশপাশে কারেন্ট জালের বেষ্টনী দিয়ে রেখেছেন তারা। আহারের সন্ধানে আসা অসংখ্য পাখি এসব জালে আটকে প্রাণ হারাচ্ছে। দোয়েল, শ্যামা, মাছারাঙ্গা, ঘুঘু, শালিক, প্যাঁচা তো বটেই, জালে আটকে পড়ে আছে হারিয়ে যেতে বসা কিছু প্রজাতির পাখিও।
ভিডিও দেখুন:
অন্য পথে না গিয়ে কেনো কারেন্ট জাল দিয়েই বরই রক্ষা করতে হচ্ছে- এমন প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেনি বাগান মালিকরা। প্রকাশ্যে এমন কর্মকান্ড ঘটলেও স্থানীয় বরই চাষীদের অকপট স্বীকারোক্তি দেখে মনে হতে পারে ঘটনাটি যেন একেবারেই সাধারণ বিষয়।
বরই বাগান মালিক কামিরুল ও শরিফুল ইসলাম জানান, এটা অপরাধ এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতি তা তারা সবাই জানেন। কিন্তু কোনো পথ না পেয়ে এ পন্থা অবলম্বন করছেন তারা। নিজেদের লোকসান ঠেকাতে পাখির হাত থেকে বাগান রক্ষায় কারেন্ট জাল পাতছেন চাষীরা।
ভোলাহাট উপজেলা বন কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি অবগত নয়। আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। উনারা যদি আমাদের কোনো পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন, তবে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করবো।