কাজ শেষ না হতেই ৩৭৬ কোটি টাকার বাঁধে ভাঙন


ইউএনভি ডেস্ক:

নদীভাঙন রক্ষার কাজ শেষ হতে না হতেই রাজবাড়ীতে ৩৭৬ কোটি টাকার প্রকল্পে কয়েক দফা ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে- ত্রুটিপূর্ণ নকশার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। তবে আর যাতে ভাঙন না হয় সে বিষয়ে দ্রুত কাজ চলছে।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের গোদারবাজার এলাকার এনজিএল ইটভাটার কাছে প্রায় ২০০ মিটার বাঁধ ধসে যায়। এর আগে গত ১৬ জুলাই গোদার বাজার চরসিলিমপুর এলাকার নদীর তীর এলাকার প্রকল্পের স্থানের কাজ শেষের দুই মাস না যেতেই প্রায় ২০ মিটার অংশের ব্লক ধসে যায়। পরে ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সরেজমিন বুধবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, গোদার বাজার ইটভাটার পাশের সিসি ব্লকের প্রায় ২০০ মিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মা নদীর শহর রক্ষা বাঁধের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলমান থাকাকালে এই ভাঙন শুরু হয়। আর এই ভাঙনের ১৫-২০ মিটার দূরেই রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ। এই শহর রক্ষা বাঁধটি এখন হুমকির মুখে আছে।

রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধটি ঝুঁকিমুক্ত রাখতে বুধবার সকাল থেকেই কাজ করে যাচ্ছে রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভাঙনরোধ করতে দ্রুত গতিতে সিসি ব্লক ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও টিউবব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এরই মধ্যে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ।

ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন রাজবাড়ী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কাজী ইরাদত আলী, পৌর মেয়র মো. আলমগীর শেখ তিতু, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ভাঙন রোধে ২০১৮ সালের জুন মাসে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর শহর রক্ষা বাঁধের ডান তীর প্রতিরক্ষার কাজ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাটে ৩ কিলোমিটার ও মিজানপুরে দেড় কিলোমিটারসহ সাড়ে চার কিলোমিটার এবং ২০১৯ এর জুলাইয়ে শুরু হওয়া (প্রথম সংশোধিত) শহর রক্ষা বাঁধের গোদার বাজার অংশের আড়াই কিলোমিটারসহ মোট ৭ কিলোমিটার এলাকায় ৪৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

এতে দ্বিতীয় পর্যায়ের সাড়ে চার কিলোমিটারে ৩৭৬ কোটি ও প্রথম সংশোধিত ১৫২৭ মিটারে ৭৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। প্রকল্পের জন্য ৮.৩ কিলোমিটার অংশে ৪৯ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে।

নদীর তীরের স্থানীয় বাসিন্দা শাকিব সেখ বলেন, প্রতি বছরই আমরা নদী ভাঙনের শিকার হই। বর্তমান সরকার যখন ৩৭৬ কোটি টাকা ভাঙনরোধে বরাদ্দ দিল, তখন আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কারণ সিসি ব্লক ফেললে অনেক বছর সুরক্ষিত থাকা যায়। কিন্তু নিম্নমানের কাজ হওয়াতে সেই সিসি ব্লকও নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। বাড়ির পাশের ধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রয়েছে হুমকির মুখে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ যুগান্তরকে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ এনজিএল ইটভাটা এলাকায় ২০০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়। খবর পেয়ে আমি সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং তাৎক্ষণিক সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলানোর ব্যবস্থা করি।

কাজে অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, এ প্রকল্পের ডিজাইন করা হয় ২০১৬-২০১৭ সালে। তখন নদীর যে গতিপথ ছিল, এখন সেটা পরিবর্তন হয়েছে। যার কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে।


শর্টলিংকঃ