ইউএন নিউজ ডেস্ক:
![](https://universal24news.com/wp-content/uploads/2019/01/গোদাগাড়ী-স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সের-ফটক।-300x173.jpg)
রাজশাহী জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে গোদাগাড়ী উপজেলা সদর। এখানেই অবস্থিত গোদাগাড়ী ৩১ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতাল। বিশেষায়িত এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসার জন্য সব সরঞ্জামই আছে। শুধু থাকেন না চিকিৎসক। তাই ঠিকমতো সেবা পান না রোগিরা। কিন্ত মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) হাসপাতালটির আগের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে।
এ দিন সকাল সকাল সব চিকিৎসকই হাসপাতালে গেছেন। বহির্বিভাগে বসে তারা রোগিদের সেবা দিয়েছেন। ভর্তি থাকা রোগিদেরও খোঁজখবর নিয়েছেন চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
হঠাৎ হাসপাতালটির এমন পরিবর্তনের পেছনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযান। গত সোমবার দুদক সারাদেশের যে ১১টি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে তার মধ্যে এই হাসপাতালও একটি। অভিযানের পর দুদক বলেছে, ঢাকার বাইরের সাত জেলার হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে দেখা গেছে, ১৩১ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৮১ জনই অনুপস্থিত ছিলেন, যা মোট চিকিৎসকের প্রায় ৬২ শতাংশ।
দুদকের অভিযান চালানো এই হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসকের সংখ্যা দুজন। তারা হলেন, ডা. শওকত আলী ও ডা. তৌফিক রেজা। এছাড়া রয়েছেন একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তার নাম ডা. ওয়াহিদা খাতুন। তাদের থাকার জন্য হাসপাতালটিতে কোয়ার্টারও আছে। কিন্তু কেউ থাকেন না। সবাই থাকেন জেলা সদরে। স্থানীয়রা বলছেন, চিকিৎসকদের মন চাইলে হাসপাতালে যান, না চাইলে যান না। তবে মঙ্গলবার সবাইকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে পাওয়া যায়।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, দুদকের অভিযানের কারণেই তারা এ দিন হাসপাতালে এসেছেন। এতো দিন বহির্বিভাগে যে কোনো একজন করে হাসপাতালে থেকে রোগিদের সেবা দিয়েছেন। দুজন কোনো দিনই আসেননি। কোনো কোনো দিন একজনও আসেননি। আবার রাতেও কেউ থাকেননি। তারপরেও হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদা খাতুনকে ‘ম্যানেজ’ করে তারা হাজিরা খাতায় প্রতিদিনেরই স্বাক্ষর দিয়েছেন। তবে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদা খাতুন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেছেন, আমাদের ডাক্তারের সংখ্যাই কম। এতো স্বল্পসংখ্যক ডাক্তার দিয়ে হাসপাতাল চালানো কঠিন। দুদকের অভিযানের সময় এই চিকিৎসক নিজেও হাসপাতালে ছিলেন না। সে বিষয়ে তিনি বলেন, রাজশাহীতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আমার সভা ছিল। আমি সেখানে ছিলাম।
এদিকে দুদকের অভিযানের পর গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরও দৃশ্যপট বদলে গেছে। আগে এখানেও ঠিকমতো চিকিৎসক না থাকলেও মঙ্গলবার সবাই গিয়েছেন। উপজেলার প্রেমতলী গ্রামে অবস্থিত এই হাসপাতালে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হাসপাতালটিতে আধুনিক ভবন, অপারেশন থিয়েটার এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ সবই আছে। শুধু থাকেন না চিকিৎসক।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেসবাউল হাসান খান বলেন, চিকিৎসকদের হাসপাতালে রাখার জন্য তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবেন।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. সঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, দুদকের অভিযানের বিষয়টি তিনি জানেন। দুদক কোনো লিখিত প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থ্য নেওয়া হবে।#