খুঁড়িয়ে চলছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি


ইউএনভি ডেস্ক:

করোনা পরিস্থিতিকে কারণ দেখিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল)। এ অবস্থায় কয়লা সংকটে পড়েছে পাশের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছে- চাহিদা অনুযায়ী কয়লা পাচ্ছে না তারা। অপরদিকে খনি কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন যা উত্তোলন হচ্ছে তাই সরবরাহ করা হচ্ছে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আসন্ন বোরো মৌসুমে বিদ্যুৎ সংকটের আশাঙ্কা দেখা দিয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ওপর ভিত্তি করে স্থাপিত ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী এসএম ওয়াজেদ আলী সরদার যুগান্তরকে বলেন, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট চালাতে দৈনিক কয়লার প্রয়োজন ৫ হাজার টন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর তারা সেই পরিমাণ কয়লা পাচ্ছেন না। ফলে বর্তমানে ৫২৫ মেগাওয়াটের স্থলে একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ১৫০ মেগাওয়াট ও ১৭০ মেগাওয়াট। তিনটি ইউনিটের মধ্যে বন্ধ রাখতে হয়েছে দুটি ইউনিট। যদিও এখন বিদ্যুতের চাহিদা কম বলে জানান তিনি।

তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, ১১ মে থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ বন্ধ ছিল। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তারা খনি থেকে প্রতিদিন কয়লা পেয়েছেন ৯শ’ থেকে ১ হাজার টন পর্যন্ত। আর নভেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত দৈনিক কয়লা পাওয়া গেছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টন। ১৯ নভেম্বর খনি থেকে কয়লা সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানান তাপ বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।

প্রধান প্রকৌশলী এসএম ওয়াজেদ আলী সরদার উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বর্তমানে যে পরিমাণ কয়লা মজুদ আছে, তাতে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানো যাবে। এর মধ্যে কয়লা পাওয়া না গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

করোনা পরিস্থিতির জন্য কয়লা উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ জানান, প্রথম অবস্থায় উৎপাদন কম হলেও ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে খনির কয়লা উৎপাদন।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) সাইফুল ইসলাম সরদার জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশি ১ হাজার শ্রমিকের কাজ বন্ধ রেখে চীনা ২৭৭ শ্রমিক দিয়ে খনির উৎপাদন অব্যাহত রাখে খনির চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়াম। ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার পর বাংলাদেশি শ্রমিকদের ক্রমান্বয়ে খনিতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর থেকে দৈনিক কয়লা উৎপাদন শুরু হয় ৫০০ থেকে ১ হাজার টন পর্যন্ত। নভেম্বর পর্যন্ত কোভিড-১৯ পরীক্ষার পর ১ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিকের মধ্যে ৪৪৩ শ্রমিককে কাজে যোগদান করা হয়েছে। আরও ৬৮ বাংলাদেশি শ্রমিককে কোয়ারেনটিনে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৮০ দিনে খনিতে কয়লা উত্তোলন হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার টন। এর মধ্যে নভেম্বর মাসেই উৎপাদন হয়েছে ৫৪ হাজার টান কয়লা। যার সবটুকুই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়েছে। এ হিসাব অনুযায়ী খনিতে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দৈনিক গড় উৎপাদন হয় ১ হাজার ৬৬২ টন কয়লা।

করোনা পরিস্থিতিতেও পাশের মধ্যপাড়া পাথর খনিতে পুরোদমে পাথর উত্তোলন কার্যক্রম চললেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা উত্তোলন। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বাড়াবাড়ি এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে খনি কর্তৃপক্ষের কিছুটা নতজানু নীতির কারণেই এখানে স্বাভাবিক হচ্ছে না খনির কার্যক্রম। খনি কর্তৃপক্ষ নয়, মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএসসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের নিয়ন্ত্রণেই চলছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি। এ কারণেই পুরোদমে কয়লা উত্তোলন কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান জানান, কোভিড-১৯ এর ব্যাপারে চীনারা বেশ সচেতন। মধ্যপাড়া পাথর খনিতে বাংলাদেশি শ্রমিকরা এককভাবে কাজ করলেও বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে তিনজন বাংলাদেশি শ্রমিকের সঙ্গে কাজ করে একজন চীনা শ্রমিক। খনির অভ্যন্তরে স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলা সম্ভব হয় না। তাই কোভিড-১৯ পরীক্ষার রিপোর্ট ছাড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করতে চান না চীনা শ্রমিকরা। এ জন্যই বাংলাদেশি শ্রমিকদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার পর ভেতরে রেখেই কাজ করা হচ্ছে। পরীক্ষার পর ক্রমান্বয়ে শ্রমিকদের ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। তিনি আরও জানান, প্রথম অবস্থায় উৎপাদন কম হলেও ক্রমান্বয়ে খনিতে কয়লা উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শনিবার খনিতে ৩ হাজার ২০০ টন কয়লা উত্তোলন হয়েছে।


শর্টলিংকঃ