চলতি পথে গায়েব ভর্তুকির কোটি টাকার সার


ইউএনভি ডেস্ক:

ভর্তুকি দিয়ে বিদেশ থেকে আনা সোয়া কোটি টাকার সার চলতি পথে গায়েব হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কমমূল্যে কৃষকের মাঝে বিতরণের জন্য আমদানি করা সার খুলনার অ্যাযাক্স ও নওয়াপাড়া ঘাট থেকে উত্তরবঙ্গের বাফার গুদামে পাঠানোর জন্য ট্রাকে তোলা হলেও ২-৩ মাসেও তা পৌঁছেনি।

অভিযোগ রয়েছে, পথেই ওই সার বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। সার চুরির সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত আমদানিকারক, সিএন্ডএফ এজেন্ট ও পরিবহন ঠিকাদাররা জড়িত বলে জানা গেছে। সার বিক্রির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টির পর সার চুরির বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।

এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। জানা যায়, সরকার কৃষক ও কৃষি বাঁচাতে প্রতি বছর বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকার সার আমদানি করে ভর্তুকি মূল্যে কৃষকের মাঝে বিতরণ করে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) আমদানিকারক নিয়োগ থেকে শুরু করে সরকারি গুদামে তা পৌঁছানোর কাজটি সম্পন্ন করে।

এরই ধারাবাহিকতায় কয়েক মাস পূর্বে চীন থেকে সমুদ্রপথে এমওপি সার আমদানি করা হয়। সার আমদানির দায়িত্ব পায় পোটন ট্রেডার্স। মোংলা বন্দরে সার খালাসের পর এর একটি বড় অংশ ছোট ছোট ভ্যাসেলে খুলনা ও নওয়াপাড়া নৌবন্দরের বিভিন্ন ঘাটে নিয়ে ডাম্পিং করা হয়। আমদানি করা এসব সার বিএডিসির নির্ধারিত বাফার গুদামে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পায় খালেক ট্রান্সপোর্ট।

খুলনা ও নওয়াপাড়া ঘাটে মজুদ সার সাধারণত দেশের উত্তরাঞ্চলে পাঠানো হয় ট্রাকযোগে। এরই মধ্যে খুলনার অ্যাযাক্স ও নওয়াপাড়া ঘাটে রাখা সার থেকে প্রায় এক কোটি ২৭ লাখ টাকার সার ট্রাকযোগে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার পথেই গায়েব হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ২-৩ মাসে এসব সার লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। সার উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটলেও বিএডিসির খুলনার কর্মকর্তারা নিশ্চল হয়ে বসে আছেন।

কথা হয় বিএডিসির খুলনার যুগ্ম পরিচালক কৃষিবিদ প্রশান্ত কুমার সাহার সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সার চুরির বিষয়টি আমি জানি না। কে কোথায় সার বিক্রি করল, তাতে আমাদের কিছুই যায় আসে না। আমরা পুরো সার বুঝে পাওয়ার পর তাদের বিল পরিশোধ করব। আর বুঝে না পেলে বিল থেকে টাকা কেটে রাখব।’

এ ব্যাপারে পোটন ট্রেডার্সের পক্ষে খুলনার দায়িত্বরত কর্মকর্তা আতাউর মিয়া বলেন, ‘সার গায়েব করার ব্যাপারে খালেক ট্রান্সপোর্টের সঙ্গে আলোচনা চলছে। গত সোমবার এ ব্যাপারে সালিশ বৈঠকও হয়েছে। ট্রান্সপোর্ট শ্রমিক নেতা দুদু ভাই সমঝোতার চেষ্টা করছেন।’

জানতে চাইলে শ্রমিক নেতা দুদু ভাই এ প্রতিবেদককে জানান, নানা ব্যস্ততার মাঝেও ওই সালিশি বৈঠক করতে ঢাকা থেকে খুলনায় এসেছেন। তবে খালেক ট্রান্সপোর্টের কেউ এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। সরকারি সার চুরির এই একটি ঘটনা প্রকাশ্যে এলেও এর আগে আরও কয়েক দফায় প্রায় ১০ কোটি টাকার সার গায়েবের অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে খুলনার এক হাজী নামধারী ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী একাই প্রায় ৭ কোটি টাকার সরকারি সার বিক্রি করে খুলনা থেকে পালিয়ে যায়। আজও তার দেখা মিলছে না। হিসাবও নিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্ট।

আবার চট্টগ্রামের এক আমদানিকারক দু’বছর আগে আমদানি করা সার বিএডিসিকে বুঝিয়ে না দিলেও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার কথাও জানা যায়নি।


শর্টলিংকঃ