ঢাকায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস!


ইউএনভি ডেস্ক:

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যাপক হারে কমেছে গরুর দাম। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গরুর দাম কমলেও ক্রেতা পাচ্ছেন না খামারিরা। এ পরিস্থিতিতেও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। কোনো কোনো জেলার তুলনায় ঢাকায় প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস।

এমনকি ঢাকার মাংস ব্যবসায়ীরাও বলেছেন, বাজারে গরুর যে দাম, তাতে বর্তমান দাম থেকে কেজিতে কমপক্ষে ২০০ টাকা কমিয়েও মাংস বিক্রি করা সম্ভব।

তারা বলছেন, বর্তমানে গরুর দাম বেশ কম। কিন্তু মহামারি করোনার মধ্যেও পশুর হাটে চাঁদাবাজি থেমে নেই। যে কারণে গরুর দাম কমলেও মাংসের কমছে না। তবে চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে গরুর মাংস ৩৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা সম্ভব।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০-৬০০ টাকায়। রোজার ঈদের (ঈদুল ফিতর) আগে থেকেই এমন চড়া দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, দেশের বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে। কোনো কোনো ব্যবসায়ী মাইকিং করে গরুর মাংসের কেজি ৪০০ টাকাতেও বিক্রি করছেন।

রামপুরার মাংস ব্যবসায়ী রুবেল বলেন, ‘বর্তমানে গরুর দাম বেশ কম। কিন্তু হাটে ব্যাপক চাঁদাবাজি হচ্ছে। ফলে গরুর দাম কম হলেও আমাদের পক্ষে মাংস কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘করোনা শুরুর পর থেকেই গরুর দাম কমে গেছে। কোরবানির ঈদ (ঈদুল আজহা) কাছাকাছি চলে আসলেও দাম গরুর দাম বাড়েনি। করোনার আগের তুলনায় বর্তমানে মাংসের দাম কেজিতে ১৫০ টাকার উপরে কমে যাওয়ার কথা।’

যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ী সোহেল বলেন, ‘আমরা নিরুপায় হয়ে গরুর মাংস ৫৮০ টাকায় বিক্রি করছি। দাম বেশি হওয়ার কারণে এখন বিক্রি তেমন নেই। বিক্রি না থাকায় কোনো কোনো ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘গাবতলীর হাট থেকে গরু কিনতে কত ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়, তা যারা যায় তারাই জানেন। শুধু চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলেই গরুর মাংসের কেজি ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি করা সম্ভব।’

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে গরুর দাম কম। কিন্তু হাটে চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না। এই চাঁদাবাজির সঙ্গে হাট ইজারাদাররা জড়িত। এই চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে গরুর মাংস ৩৮০ টাকা বা তারও কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। পশুর হাটের এই চাঁদাবাজি বন্ধ করার জন্য গাবতলীর পাশাপাশি ঢাকার ভেতরে আরও কয়েকটি হাটের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে র‍্যাব, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে পশুর হাটে অভিযান চালানোর ক্ষমতা দিতে হবে।’

রবিউল আলম আরও বলেন, ‘বর্তমানে শুধু সিটি করপোরেশন প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার হাতে পশুর হাটে অভিযান চালানোর ক্ষমতা রয়েছে। এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা থাকায় তিনি নানামুখী চাপে অথবা ভয়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে সঠিক পদক্ষেপ নাও নিতে পারেন।’

এদিকে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার মাংস ব্যবসায়ী মিলন বলেন, ‘এখন গরুর দাম কম। এ কারণে আমরা ৪০০ টাকা কেজি মাংস বিক্রি করছি। প্রায় এক মাস ধরে আমরা এই দামে গরুর মাংস বিক্রি করছি।’

তিনি বলেন, ‘দাম না থাকায় অনেকে ঈদ পর্যন্ত গরু ধরে রাখতে চাচ্ছেন না। কারণ গরুর লালন-পালন খরচ অনেক। দেখা যাবে এখন গরু ধরে রাখলে সামনে লোকসান আরও বেশি হবে। এ কারণে অনেকেই কম দামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন, বিশেষ করে বড় গরু। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে মাংস বিক্রি করতে আমাদের গ্রামে গ্রামে মাইকিং করতে হচ্ছে।’

কুষ্টিয়া জেলায় গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকা কেজি। এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার বাসিন্দা রাব্বি বলেন, ‘রোজার ঈদের আগে গরুর মাংসের কেজি ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকা ছিল। এখন সেই গরুর মাংস ৪২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরুর দাম কম থাকায় কম দামে মাংস বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে।

এদিকে দাম কমিয়েও কোনো কোনো খামারি গরু বিক্রি করতে পারছেন না। মেহেরপুরের খামারি মহির উদ্দিন বলেন, ‘করোনার আগে যে গরুর দাম ব্যাপারীরা তিন লাখ টাকা বলেছেন, এখন সেই গরুর দুই লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারছি না। গরুর দাম কমে যাওয়ায় আমার মতো অনেকেই চরম বিপাকে পড়েছেন।’

এদিকে হাট পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত যেখানে যেখানে হাট শুরু হয়েছে, সেখানে শুধু পশু বিক্রেতারাই উঠছেন। হাজার হাজার পশু উঠছে হাটে, কিন্তু ক্রেতা নেই। ব্যাপারী-খামারি সবাই এক সুরেই বলছেন, ‘এবার লাভ চাই না, চালান নিয়ে ঘরে যেতে পারলেই বাঁচি।’

প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের খামারি কুদ্দুস। তিনি বলেন, ‘করোনার আগে আমরা একটি গরুর দাম ব্যাপারীরা ৬৫ হাজার টাকা বলেছিলেন। কোরবানির ঈদের আগে আরও বেশি দাম পাওয়া যাবে, এই আশায় তখন বিক্রি করনি। এখন সেই গরু ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।’


শর্টলিংকঃ