তানোরে সাংসদের অনুষ্ঠানের পাশ থেকে এক বোঝা লাঠি জব্দ


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর তানোর উপজেলা চত্বরে আয়োজিত শোক দিবসের অনুষ্ঠানের পাশ থেকে এক বোঝা কাঁচা বাঁশের লাঠি জব্দ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী।

গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংসদ মঞ্চ থেকে নামার পরে লাঠিগুলো জব্দ করা হয়। এগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে তানোর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার কথা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তানোর উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউএনও সুশান্ত কুমার মাহাতো। অনুষ্ঠানে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, গত জাতীয় নির্বাচনের আগে তানোর গোদাগাড়ীতে ‘সেভেন স্টার’–এর উদয় হয়েছিল।

সেই সেভেন স্টারের একজনও নৌকার পক্ষে ভোট করেননি। তাঁরা নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করেছেন। তানোর উপজেলা নির্বাচনেও তাঁরা নৌকার বিরুদ্ধে হাতুড়ি প্রতীকের জন্য দৌড়াদৌড়ি করেছেন। তাঁরা হচ্ছেন ‘মুস্তাক-জিয়া।’ তাঁরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে রাজাকারের সন্তান বলেন। আর মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ জোগাড় করে তাঁরা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করেন।

ফারুক চৌধুরী আরও বলেন, ‘আজ শোক দিবসের শোককে শক্তিতে পরিণত করে তানোর পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। যাঁরা প্রার্থী হতে চান, তাঁরা জনগণের সেবা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাঁর রিপোর্ট ভালো হবে, তিনি মনোনয়ন পাবেন। আপনারা কারও পক্ষে–বিপক্ষে যাবেন না। যে ভালো করবেন, আমরা তাঁর পক্ষে থাকব। তাঁকেই মনোনয়ন নিয়ে দেওয়া হবে। বড় কথা হচ্ছে, নৌকা প্রতীক যে পাবেন, তাঁকে বিজয়ী করতে হবে। তাই বলে ওই “বাঁইঝ্যা শয়তান-ময়তান” কেউ নমিনেশন পাবে না।’

এ সময় দর্শক সারি থেকে কেউ একজন জানতে চান বাঁইঝ্যা শয়তানের বিষয়টা পরিষ্কার করে বলতে হবে। অনেকেই বুঝতে পারেননি। তখন সাংসদ বলেন, ‘আমি আকারে-ইঙ্গিতে আপনাদের অনেক কথা বলেছি। আর কথা বাড়াতে চাই না।’

অনুষ্ঠানের পরে সাংসদ উপজেলার ডাকবাংলো চত্বর ও গোল্লাপাড়া বাজার ফুটবল মাঠে আরও দুটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। উপজেলা চত্বরের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার পর সাংসদ যখন মন্ডুমালা পৌর এলাকায় আয়োজিত পরবর্তী অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তাঁর গাড়িতে উঠছিলেন, তখন স্থানীয় এক ব্যক্তি লাঠিগুলোর ব্যাপারে ইউএনওর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। লাঠিগুলো অনুষ্ঠানস্থলের পাশে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরিত্যক্ত একটি কার্যালয়ে রাখা ছিল। ইউএনও সেখানে গিয়ে লাঠিগুলো দেখে তাঁর একজন কর্মচারীর মাধ্যমে নিজ কার্যালয়ে তুলে রাখেন।

এ ব্যাপারে ইউএনও সুশান্ত কুমার মাহাতোর মুঠোফোনে বারবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, পরিত্যক্ত একটি ঘর থেকে ইউএনও লাঠিগুলো জব্দ করেছেন। লাঠিগুলোতে কারও কোনো অনিষ্ট হয়নি। অনুষ্ঠানেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। তিনি এ ব্যাপারে থানায় একটা জিডি করার জন্য ইউএনওকে পরামর্শ দিয়েছেন।

সাংসদ তানোরে চারটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কিন্তু এর একটিতেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন না। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানিসহ সাত নেতা গত নির্বাচনে ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাঁদেরই সাংসদ তাঁর বক্তব্যে ‘সেভেন স্টার’ বলে উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, লাঠি উদ্ধারের কথা তিনি শোনেননি। তিনি বলেন, তাঁর বিশ্বাস, এমন সাহসী লোক নেই যে তাঁর অনুষ্ঠানে লাঠি প্রয়োগ করতে পারে। হয়তো কেউ পিকনিক করার জন্য এনে রাখতে পারে।

তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানি বলেন, তাঁরা ডাকবাংলো মাঠে অনুষ্ঠান করার জন্য আবেদন করেছিলেন। প্রশাসন তাঁদের অনুমতি দেয়নি। শোক দিবসে খুন-জখম হতে পারে, এ জন্য তাঁরা পাল্টাপাল্টি কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেননি।- প্রথম আলো


শর্টলিংকঃ