নদী আর পুকুরে গেল চুনারুঘাটের চামড়া


ইউএনভি ডেস্ক:

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে কোরবানির পশুর চামড়া ফ্রিতেও নিচ্ছে না কেউ। অন্যান্য বছর কোরবানির আগেই চামড়া কিনে নিলেও এবার দিনভর অপেক্ষার পরও কেউ নিতে আসেনি চামড়া। এতে কোরবানিদাতারা বাধ্য হয়ে চামড়া নদী কিংবা পুকুরে ফেলে দিয়েছেন, অনেকেই চামড়া মাটিতে পুতে দিয়েছেন।


অনেকে এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীদের ডেকে দিয়ে দিয়েছেন। আবার যারা বিক্রি করছেন তারাও পানির দামে পশুর চামড়া বিক্রি করছেন। এছাড়া এবার কোনো এতিমাখানা কিংবা মাদ্রাসা ও লিল্লা বোডিংও চামড়া নেয়নি।

সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কোরবানির গরুর চামড়া কেনার জন্য এবার ব্যাপারীদের তেমন আগ্রহ নেই। আবার অল্প দামে কিছু ব্যবসায়ী চামড়া ক্রয় করছেন। এ ক্ষেত্রে একটি চামড়ার দাম সর্বোচ্চ ৫০-৮০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে বিকাল থেকে ফ্রিতেও চামড়া নেয়নি ব্যবসায়ীরা।

এদিকে হবিগঞ্জে ‘জাতীয় সম্পদ চামড়া, রক্ষা করবো আমরা’ শ্লোগানে চামড়া রক্ষায় জেলা প্রশাসনের মনিটরিং সেল আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত বুধবার জেলা প্রশাসন কর্তৃক এ কমিটি গঠন করা হয়। তবে চামড়ার ক্রেতা না থাকলেও কমিটির কোনো সদস্যকে কোথাও চামড়া সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

চুনারুঘাট উপজেলার দেওরগাছ গ্রামের ব্যাপারী বেলাল মিয়া জানান, গত বছরের টাকাই এখন পর্যন্ত পাই নাই। চামড়া কিনে বিক্রি করা যায় না। ট্যানারি মালিকরা নিলেও নগদ টাকা পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাসের কারণে এবার চামড়া নিয়ে বিপদের আশংকায় অনেকেই চামড়া নিচ্ছেন না। এছাড়া গাড়ির ভাড়াও বেশি।

তিনি আরও বলেন, অনেক ঝুঁকি নিয়ে এবার আমরা কিছু চামড়া কিনেছি। প্রতিটি চামড়া গড়ে ৮০ টাকা করে কিনলেও বিক্রি করতে পারবো কি-না সেই নিশ্চয়তা নেই।

অন্যদিকে গরু চামড়া বিক্রেতা মো. ফারুক মিয়া জানান, দিনভর চামড়া দুটো পড়েছিল বাড়িতে, কেউ নিতে আসেনি। রাতে একজনকে ফোন দিয়ে চামড়া ফ্রিতে দিয়েছি।

অনেকেই জানান, তারা চামড়া মাটি পুতে গর্তে রাখার ঝামেলা এড়াতে ব্যাপারীর বাড়িতে ফ্রিতে চামড়া পাঠিয়েছেন। আবার অনেকেই চামড়া মাটিতে পুতে ফেলেছেন।

সাংবাদিক নুরুল আমিন জানান, আমার এলাকায় অনেকেই চামড়া বিক্রি করতে না পেরে খোয়াই নদীতে ফেলে দিয়েছেন। কারণ এবার চামড়া কেউ কিনতেও আসেনি, আবার কোনো মাদ্রাসা কিংবা লিল্লা বোডিং নিতে আসেনি। ফলে বাধ্য হয়েই চামড়া বাড়ির পাশে নদীতে ফেলেছেন।

সিনিয়র সাংবাদিক আলমগীর হোসেন জানান, তিনি সারাদিন অপেক্ষার পর চামড়া মাটির নিচে পুঁতে ফেলছেন। কারণ কোরবানির চামড়া কিনতে এবার কেউ আসেনি। অথচ অন্যান্য-বছর এতিমখানা থেকেও চামড়া নেয়ার জন্য লোকজন আসতো। কিন্তু এবার কেউ আসেনি।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন জানান, চামড়া যদি একেবারেই ইমপোর্ট না করা যেত, তাহলে চামড়া ব্যবসায়ীরা এত চামড়া কিনতো না। এর পিছনে সিন্ডিকেট জড়িত থাকতে পারে, ব্যবসায়ীরা ঢাকাতে চড়া দামেই বিক্রি করবে।

তবে চামড়া রক্ষায় জেলা প্রশাসনের মনিটরিং সেলের সদস্য মো. জহিরুল ইসলামের জানান, এ বছর করোনাভাইরাসের প্রভাবেই চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। আমরা চেষ্টা করছি মানুষকে সহযোগিতা করার।

তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে ফোন করলে আমরা চামড়ার হোল সেলারদের কাছে সাধারণ মানুষের কোরবানির গরুর চামড়া বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করছি।

এবার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ঢাকায় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।


শর্টলিংকঃ