বনলতার ইন্দোনেশিয়ান কোচ বদল করায় রাজশাহীতে ক্ষোভ


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহীর মধ্যে চলাচলকারী বিরতিহীন বনলতা আন্ত:নগর ট্রেনের ইন্দোনেশিয়ার আরামদায়ক কোচগুলি বদল করা হচ্ছে নীলসাগর ট্রেনের ভারতীয় কোচের সঙ্গে।চালুর মাত্র ৮ মাসের মাথায় বনলতা ট্রেনের নতুন কোচগুলি পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে নীলসাগর ট্রেনের জন্য চিলাহাটীতে।


একইভাবে নীলসাগর ট্রেনের ভারতীয় কোচ সংযোজন করা হচ্ছে বনলতা ট্রেনে।এই অদল বদলের ফলে ট্রেনের আসন বিন্যাস সংক্রান্ত জটিলতায় গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

বিশেষ ট্রেন বনলতার কোচ অদল বদলকে ট্রেনের অঙ্গহানি ও রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে এক ধরণের প্রতারণা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজশাহীর বিশিষ্টজনরা।তারা বলছেন, ইন্দোনেশিয়ান কোচগুলি সরিয়ে নেয়ার ফলে বনলতার গতি কমে যাবে। ফলে ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ে চলাচল করতে পারবে না। এতে ভোগান্তি হবে যাত্রীদের। আগামী ২৭ ডিসেম্বর থেকে ভারতীয় কোচে চলাচল করবে বনলতা এক্সপ্রেস।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের এপ্রিল বনলতা আন্ত:নগর ট্রেনটি রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী লাইনে চলাচল শুরু করে। দেশে এটি ছিল দ্বিতীয় বিরতিহীন ট্রেন। গত ১৭ জুলাই থেকে ট্রেনটির চলাচল চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।

এদিকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত অন্যায় সিদ্ধান্ত ও রাজশাহীর মানুষকে বঞ্চিত করার সামিল বলে মনে করেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, বনলতার বিদ্যমান র‌্যাকটি অটুট রেখে নতুন র‌্যাক আসতে পারে। কিন্তু বিদ্যমান র‌্যাকটি সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়।

পশ্চিম রেলওয়ের সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ৭৯১ আপ ও ৭৯২ ডাউন ট্রেন বনলতা বিরতিহীন এক্সপ্রেস ট্রেনটি পরিচালনা করা হয় একটি র‌্যাকের সাহায্যে। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বনলতা আপ-৭৯১ ট্রেনটি ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছেড়ে সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছায়। একই ট্রেনটি ডাউন ৭৯২ হয়ে বেলা ১টা ৩০ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশনে পৌঁছে। ৩৪৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রমে ট্রেনটির সময় লাগে ৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।

রাজশাহীর স্টেশন ম্যানেজার আবদুল করিম জানান, একটি র‌্যাকের মাধ্যমে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুইদিক থেকে চলাচল করে। এতে ট্রেনটি কোনো কারণে একদিকে বিলম্ব ঘটালে পরদিন সিডিউল ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া মাত্র দুটি র‌্যাকের সাহায্যে রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহীর মধ্যে চলাচল করে আন্ত:নগর সিল্কসিটি, পদ্মা ও ধূমকেতু নামের তিনটি ট্রেন।

তিনি বলেন, যে ট্রেনটি সিল্কসিটি হয়ে ঢাকায় যায় সেটি ফেরার সময় ধূমকেতু হয়ে রাজশাহীতে ফেরে। বনলতার জন্য বিপরীতমুখী দুটি পৃথক র‌্যাক (ট্রেনের সব কোচ মিলে একটি র‌্যাক) না থাকায় বিরতিহীন ট্রেনটির সিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছিল না। ফলে একটি অতিরিক্ত র‌্যাক যা ভারত থেকে আমদানিকৃত কোচের মাধ্যমে সংযোজন করা হচ্ছে।

আবদুল করিম জানান, নতুন র‌্যাকটি অপেক্ষমাণ থাকবে রাজশাহী স্টেশনে। ফলে রাজশাহীতে আন্ত:নগর মোট চারটি ট্রেনের জন্য চারটি র‌্যাক থাকছে। এতে কোনো একটি ট্রেনে রাজশাহীতে ফিরতে বিলম্ব করলে অপেক্ষমাণ র‌্যাকটি দিয়ে ফিরতি ট্রেনটি ঠিক সময়ে ছাড়তে হবে। আর এজন্যই বনলতায় ভারতীয় কোচ সংযোজন করা হচ্ছে।

জানা গেছে, নীলসাগর ট্রেনে থাকা ভারতীয় কোচগুলি কয়েক বছরের পুরনো। ভারতীয় কোচে ১০৫টি করে আসন আছে। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার কোচগুলিতে রয়েছে ৯৫টি করে আসন। বনলতায় ভারতীয় কোচ সংযোজনের ফলে আসন সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও কোচগুলি পুরনো হওয়ায় সেগুলি ইন্দোনেশিয়ার কোচের মতো আরামদায়ক নয়। বনলতার বর্তমানে র‌্যাকে রয়েছে ১২টি কোচ। যার মধ্যে ৭টি শোভন কোচের আসন সংখ্যা ৬৬৪টি।

এছাড়া দুটি এসি কোচের আসন সংখ্যা ১৬০টি ও দুটি গার্ড ব্রেকের আসন সংখ্যা ১৮০টি। সবমিলিয়ে বনলতার আসন সংখ্যা ছিল ৯৪৮টি। বনলতার টয়লেটটি বায়োটয়লেট যা বিমানে ব্যবহৃত হয়। তবে ভারতীয় কোচের বনলতায় আসন সংখ্যা কিছু কমবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।

বনলতার নতুন কোচ সরিয়ে নেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিভাগীয় ম্যানেজার (ডিআরএম) আসাদুল হক বলেন, বনলতার সময়সূচি স্বাভাবিক রাখতেই এই পদক্ষেপ। এতে রেল সেবার কোনো হেরফের হবে না।

সূত্র : যুগান্তর


শর্টলিংকঃ